ভোট যন্ত্র রাখার সামনে জানালা থাকলো খোলা। পরে নজরে আসার পর সেলো টেপ দিয়ে সেই জানলা বোঝানো কাজ করছেন প্রিসাইডিং অফিসার । নিজস্ব চিত্র।
ভোট হয়ে গিয়েছে পাঁচ ঘণ্টা। বুথ থেকে শুকনো মুখে বেরিয়ে আসছেন ভোটাররা। বাইরে দরজায় এক আধাসেনা। বুথের ভিতরে ঢুকে চক্ষু চড়কগাছ! ভোটার ঘেরাটোপে ভোট দিলেও পিছনে খোলা জানলা। সেখান থেকে ইভিএমে নজরদারি চালাতে বাধা নেই। তাই কি ভোটারদের মুখ শুকনো? বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের মুরলীগঞ্জ বনপোদুয়া হরিণাশুলি হাই স্কুলের ২০৯ নম্বর বুথে জানলা কেন খোলা, প্রশ্ন করতেই হম্বিতম্বি শুরু করেন প্রিসাইডিং অফিসার। বলে ওঠেন, ‘‘জানলায় ছিটকিনি দেওয়া যাচ্ছে না। বাতাসে খুলে যাচ্ছে।’’ বলেই জানলায় পাল্লা এঁটে সেলোটেপ সেঁটে দিলেন। বাইরে আধাসেনা ক্ষোভের সঙ্গে বলে ওঠেন, ‘‘সকালেই বলেছিলাম, জানলা বন্ধ করতে। কিন্তু করা হয়নি।’’ ততক্ষণে কত ভোট পড়েছে, জানাতে চাননি প্রিসাইডিং অফিসার। ছিলেন শুধু তৃণমূলের এজেন্ট মানুরুল্লা খান। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী এজেন্টরা কেন আসেননি, জানি না।’’ এক বয়স্ক ভোটার ফিসফিসিয়ে বলেন, ‘‘জানলা খোলা। নির্ভয়ে কী আর ভোট দেওয়া যায়?’’
পাত্রসায়রের কাটোরা ২৪৭ নম্বর বুথের বিজেপি এজেন্টকে পিস্তল দেখিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির সোনামুখী ৪ মণ্ডলের সভাপতি অনুপ ঘোষ। ইন্দাসের জিনকড়া, রোল প্রভৃতি জায়গাতেও বিরোধী এজেন্ট ছিল না। সোনামুখীর পিয়ারবেড়া পঞ্চায়েতেও কয়েকটি বুথে তাঁদের এজেন্ট বসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন সিপিএমের জেলা নেতা মনোজ চক্রবর্তী।
প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি, সিপিএমের সাংগঠনিক দুর্বলাতেই কি এই হাল? সিপিএমের জয়পুর দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সম্পাদক মানিক রায়ের দাবি, ‘‘জয়পুর ব্লকের দক্ষিণাংশে ১৩টির বেশি বুথে আতঙ্ক ছড়িয়ে তৃণমূল আমাদের ছেলেদের বসতে দেয়নি। বারবার প্রশাসন থেকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের জানিয়েও সাহায্য পাইনি।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘কোথাও কোথাও বিরোধী এজেন্ট সাজিয়ে তৃণমূলের লোকেদেরই বুথে বসানো হয়েছে।’’
পাত্রসায়রের আন্দরা, কাঁটাদিঘি, ফকিরডাঙা, সেকেন্দারচক, রসুলপুর প্রভৃতি এলাকাতে গিয়েও বেশ কিছু বুথে শুধু তৃণমূলের এজেন্টই দেখা গিয়েছে। বাইরে বুথ ক্যাম্পেও বিরোধীদের দেখা যায়নি। পাত্রসায়রের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য জিয়ারুল ইসলামের দাবি, ‘‘বিরোধীদের সংগঠন নেই বলে এজেন্ট দিতে পারেনি। আমরা যদি বাধা দিতাম তাহলে বহুজন সমাজবাদী পার্টি কী ভাবে কয়েকটি বুথে এজেন্ট দিল?’’ যদিও ইন্দাসের সিপিএম নেতা অসীম দাসের দাবি, ‘‘ইন্দাস বিধানসভার ২০টি জায়গায় তৃণমূলের হুমকিতে আমরা এজেন্ট দিতে পারিনি। পাত্রসায়র ও ইন্দাসে বিএসপি-র এজেন্ট সেজে তৃণমূলের লোকেরাই বসেছিল।’’
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখা বলেন, ‘‘মূলত জয়পুরের সংখ্যালঘু এলাকায় আমাদের এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। আসলে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। প্রশাসনও দায়ী।’’ পাল্টা তৃণমূলের বিষ্ণুপুর জেলা সভাপতি বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘ওঁরা আগে জানালে আমরাই এজেন্ট জোগান দিতাম।’’
ঘটনা হল, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’ বিরোধীরা প্রার্থী দিতে না পারার অভিযোগ তুলেছিল পাত্রসায়র, জয়পুর, কোতুলপুর ও আংশিক ভাবে ইন্দাস ব্লক এলাকায়। ওই সব এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতিও সে ভাবে ভোট হয়নি। শুধু জেলা পরিষদে ভোট হয়েছে। তাই ভোট না দিতে পারার ক্ষোভ এ বার লোকসভা ভোটে কতটা পড়বে, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। পাত্রসায়রের কৃষ্ণনগর ও নারায়ণপুরের দুই ভোটার বলেন, ‘‘বাম আমলের মতোই তৃণমূলের জমানাতেও আমাদের এলাকার মানুষের পঞ্চায়েতে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই। আধাসেনা আসায় নিশ্চিন্তে এ বার ভোট দেওয়া গেল।’’ তবে জয়পুরের মুরলীগঞ্জের এক বাসিন্দা ভোট দিয়ে বেরিয়ে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ভোট না দিতে দেওয়ার শিক্ষা এ বার লোকসভা ভোটে দিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy