প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র ।
পুরুলিয়ার সভায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সাধুসন্তদের অপমান করার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পুরুলিয়ার পরে বিষ্ণুপুরে সভা থেকেও এই নিয়ে বাংলার শাসকদলকে লক্ষ্য করে তোপ দাগলেন তিনি। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে এবং ভোট পেতে সাধুদের অপমান করা হচ্ছে। ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো সংগঠনগুলিকে বদনাম করা হচ্ছে।
রবিবার পুরুলিয়া, মেদিনীপুর এবং বিষ্ণুপুর— একই দিনে তিনটি কেন্দ্রে সভা করছেন প্রধানমন্ত্রী। এই কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি প্রার্থী করেছে যথাক্রমে জ্যোতির্ময় মাহাতো, অগ্নিমিত্রা পাল এবং সৌমিত্র খাঁকে। পুরুলিয়ার সভা সেরে মোদী যোগ দেন বিষ্ণুপুরের জনসভায়। বিষ্ণুপুরের প্রার্থী সৌমিত্র এবং বাঁকুড়ার প্রার্থী সুভাষ সরকারের হয়ে প্রচার করেন তিনি। এই দুই জনসভাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সাধুদের অপমান করার অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরুলিয়ার সভা থেকে মোদী বলেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, স্বামী বিবেকানন্দ যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, ভারতের কথা বলতেন, তখন অনেক মানুষ তাঁর ভক্ত হন। যাঁরা ভারতকে ঘৃণা করতেন, তাঁরা অপমান করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দকে। কিন্তু তিনি মা ভারতীর অভিযান নিয়ে বেরিয়েছিলেন। তিনি ভয় পাননি। বাংলায় আজ এমনই হচ্ছে। নির্বাচনে বাংলার মানুষকে ভয় দেখাতে সব সীমা পার করেছে তৃণমূল সরকার। দেশ, দুনিয়ায় ইসকনকে সকলে চেনেন। রামকৃষ্ণ মিশন তৈরি করেছিলেন বিবেকানন্দ। সেবার জন্য ভারত সেবাশ্রমকে সারা দুনিয়া চেনে। এই সংগঠনগুলি ভারতের নাম উজ্জ্বল করে। কিন্তু আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সেই ইসকন, ভারত সেবাশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন। প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছেন এঁদের ভক্তেরা। তাঁরা সেবার কাজ করেন। বাংলার সরকার তাঁদের দিকে আঙুল তুলছে। নাম নিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এত সাহস! নিজের ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে, তোষণ করতে তৃণমূল এত নীচে নেমেছে! বাংলার লাখ লাখ মানুষের ভক্তি, ভাবাবেগ নিয়ে এরা ভাবে না। স্বামী বিবেকানন্দ, প্রভুপাদ, প্রণবানন্দ মহারাজের অপমান দেশ সহ্য করবে না। যে সরকার বাংলার মানুষের সংস্কৃতিকে সম্মান করে না, তাদের ভোটের শক্তি দিয়ে সাজা দিন, যাতে ওরা আর সাধুসন্তদের অপমান করতে না পারে।’’
এর পর বিষ্ণুপুরের সভা থেকে এই নিয়ে তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে আরও কড়া ভাষায় আক্রমণ করতে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল সাধুসন্তদের গালিগালাজ করছে। ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ বিভিন্ন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাকে গৌরবান্বিত করেছে। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সাধুরা এবং এই সংগঠনগুলি দেশকে নষ্ট করছে। আমার অভিযোগ, এখানকার মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে আমাদের সাধুদের এবং মহান সংগঠনগুলিকে গালিগালাজ করছেন। বদনাম করছেন। হিন্দুদের ভাগীরথীতে ডুবিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অনেক ভেবেচিন্তে এই কথা বলানো হয়েছিল। ভোটব্যাঙ্কের জন্য সাধুদের অপমান করা হচ্ছে। মোদীর বিরুদ্ধে ভোটজিহাদের প্ররোচনা দিচ্ছে তৃণমূল।’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা অত্যাচার করেছেন, তাঁরা শাস্তি পাবেন। দেশে শক্তিশালী সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী দরকার।’’
মোদী বলেন, ‘‘অনেক শরণার্থী অন্য দেশ থেকে এখানে এসেছে। বাম, কংগ্রেস এবং তৃণমূল এঁদের নিয়ে কোনও ভাবে মাথা ঘামায়নি। আমি সিএএ নিয়ে এঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার গ্যারান্টি দিয়েছে। ৩০০ শরণার্থী পরিবার ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থীরাও শীঘ্রই তা পাবেন। দুর্ভাগ্য যে, বাংলার সরকারের উদ্দেশ্য খারাপ। চাল নিয়েও দুর্নীতি করছে। রেশনের ব্যাগে তৃণমূল নিজেদের স্টিকার লাগাচ্ছে। মোদী সরকার ঘরের টাকা পাঠিয়েছিল, কিন্তু তাতেও নিজেদের স্টিকার লাগিয়েছে। মোদী সরকারের প্রকল্প চুরি করেছে তৃণমূল।’’
তৃণমূলকে নিশানা করে মোদী বলেন, “তৃণমূল সন্তদের গালিগালাজ করছে। ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। এই সংগঠনগুলি বাংলাকে গৌরব দিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এই সংগঠনগুলি দেশকে নষ্ট করছে। আমি পরিষ্কার বলছি, এখানের মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম কট্টরপন্থীদের চাপে ভোট পেতে আমাদের সাধুদের এবং মহান সংগঠনগুলিকে গালিগালাজ করছেন। বদনাম করছেন। হিন্দুদের ভাগীরথীতে ডুবিয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। ভোটব্যাঙ্কের জন্য সাধুদের অপমান করা হচ্ছে।’’
মোদী আরও বলেন, ‘‘গরিব মানুষ তৃণমূলের মন্ত্রীদের ঘুষ দিয়েছিল। এখানকার যুবসমাজকে রাস্তায় বসিয়েছে তৃণমূল। আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি কী ভাবে আপনাদের লুট করা টাকা আপনাদের ফেরত দিতে পারি।’’
তৃণমূলকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূল হোক, কংগ্রেস হোক বা বাম হোক, এই দলগুলি আলাদা আলাদা বলে মনে হলেও, ওদের সকলের পাপ একই রকম। এই জন্য এরা সকলে মিলে জোট তৈরি করেছে। যেখানেই এই দলগুলি সরকার গড়েছে, সেখানেই সরকার গরিব হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গই তার উদাহরণ। এই পরিস্থিতি বদলানো দরকার। তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বামের মডেল উন্নয়নের মডেল নয়। এখানে তৃণমূলের বালি মাফিয়া নদী নষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল এই নিয়ে মজায় আছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘আমার কোনও ভাই বা ভাইপোর জন্য আমি কিছু ছেড়ে যাব না। আমি বাঁকুড়ার গরিব, দলিত, আদিবাসীদের জন্য কাজ করতে চাই।’’
‘নমস্কার’ এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে বক্তৃতা শুরু করলেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘মন্দির শহর বিষ্ণুপুরকে আমি প্রণাম জানাই। বাঁকুড়াতে এত উৎসাহ দেখে আমি আপ্লুত। মা-বোনেরা কাজ ছেড়ে আমাকে আশীর্বাদ করতে এসেছেন।’’
বিষ্ণুপুরের মঞ্চে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিষ্ণুপুরের মাটির শঙ্খ, গামছা, উত্তরীয়, কৃষ্ণমূর্তি তুলে দিয়ে তাঁকে সম্মান জানানো হল।
রবিবার পুরুলিয়া, মেদিনীপুর এবং বিষ্ণুপুর— একই দিনে তিনটি কেন্দ্রে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি প্রার্থী করেছে যথাক্রমে জ্যোতির্ময় মাহাতো, অগ্নিমিত্রা পাল এবং সৌমিত্র খাঁকে। পুরুলিয়ার সভা সেরে মোদী যোগ দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের জনসভায়। উল্লেখ্য, শনিবার বিষ্ণুপুরে সভা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের সমর্থনে প্রচার করেছেন তিনি। রবিবার সেই কেন্দ্রে প্রার্থী সৌমিত্রের সমর্থনে জনসভা মোদীর। প্রচার করবেন বাঁকুড়ার প্রার্থী সুভাষ সরকারের হয়েও।
ষষ্ঠ দফার ভোট প্রচারে আবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার এবং সোমবার বাংলায় মোট ছ’টি সভা করবেন তিনি। দু’দিনে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, তমলুক, ঘাটাল, ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থীদের জন্য প্রচার করবেন মোদী। ভোট ঘোষণার পর থেকে একাধিক বার বাংলায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতি দফাতেই অন্তত এক বার করে ঘুরে গিয়েছেন ভোটের আগের বিভিন্ন কেন্দ্র। দিনে তিন থেকে চারটি করে সভা করেছেন। ষষ্ঠ দফায় আগামী ২৫ মে রাজ্যের মোট আটটি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy