মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক থেক।
মমতা বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, মোদী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে রেলমন্ত্রী হয়েছি। কয়লা, মহিলা এবং শিশু কল্যাণ মন্ত্রী ছিলাম। সাত বারের সাংসদ ছিলাম। আমরা লড়ব, গড়ব, তৈরি করব।’’ নিজের লেখা কবিতা পড়ে শেষ করেন জনসভা।
মমতা লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রসঙ্গ তোলেন। তার পর বলেন, ‘‘হঠাৎ বলল, ১৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করো, অত সস্তা! হঠাৎ বলল ২৬ হাজার চাকরি বাতিল করল। অনেক কষ্ট করে শংসাপত্র জোগাড় করতে হয়। আমি বলতে পারি, মানুষের দুঃখে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে যেমন আছি, ওবিসিদেরও প্রাণ দিয়ে রক্ষা করব।’’
মমতা বলেন, ‘‘যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর বায়োলজিক্যাল বাবা-মা নেই। তাঁকে নাকি ঈশ্বর পাঠিয়েছেন। তিনি নাকি ঈশ্বরের দূত। ২০৪৭ সাল পর্যন্ত তাঁকে নাকি ঈশ্বর ক্ষমতায় রাখবে। আগামী ৪০ বছর পর্যন্ত। তিনি ঈশ্বরের সন্তান। প্রভু জগন্নাথদেবও নাকি ওঁর ভক্ত। আপনারা বিশ্বাস করেন? বিজেপির পণ্ডিতদের জিজ্ঞেস করি, জগন্নাথের মন্ত্র জানো? দিঘায় জগন্নাথ মন্দির করছি।’’ এর পর জগন্নাথের মন্ত্র বলেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘‘কেউ যদি ভালবেসে বলে, সব করে দেব। কেউ যদি বলে, এটা না করলে দেখে নেব। অবাঙালিদের বলব, অনেক সম্মান দিয়েছেন। অনুরোধ করব, কিন্তু যখন এখানে থাকেন, আমরা ভাবি না কে শিখ, কে বাঙালি, কে রাজস্থানি। সকলেই মানুষ। আপনারা কেন ভাবেন , বাংলা আর দিল্লি আলাদা? বাংলা থেকেই আমরা দিল্লিকে মদত দিতে পারব। ’’
মমতা বলেন, ‘‘গান দুটো শুনে মন ভরে গিয়েছে। আমায় কেউ যদি ভালবেসে বলে, রান্না করে দিয়ে যাবেন? ঘর মুছে দিয়ে যাবেন? আমি করে দেব। আগে মেয়েরা কাজ করত, মেশিন ব্যবহার করত না। এখন নিজেরা মেশিনে গিয়েছে। তাই মেশিনে গিয়ে শরীর ঠিক রাখতে হচ্ছে। অবশ্য অনেকের সময় নেই।’’
মমতা বলেন, ‘‘কী ছিল আগে বাগুইআটি? আজ কী হয়েছে? আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাব। উড়ালপুল, দু’পাশে সৌন্দর্যায়ন, খাল সংস্কার করে দিয়েছি। আগামী দিনেও করব। রাজারহাট কী ছিল? ইকো টুরিজ়ম পার্কের পাশ দিয়ে যেতাম, বালুকে ফোন করতাম, বলতাম, শীঘ্র দেখো কবে দখল হয়ে যাবে। প্রোমোটিং হবে। এক বছর আটকে ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গিয়ে বলি, এই প্রকল্প হবে। সারা পৃথিবীতে গর্ব করার মতো পার্ক রয়েছে রাজারহাটে।’’
মমতা জানান, দমদম, বাগুইআটির জন্য কী কী করেছে তাঁর সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘রুইয়া সব বন্ধ করে দিয়েছেন। নিজের দিল্লির বাড়িতে এক বিজেপি নেতাকে থাকতে দিয়েছেন। বিধানসভায় বিল পাশ করলাম আমরা ডানলপ খুলব বলে। কেন্দ্র অনুমতি দিল না। কর্মীরা না খেতে পেয়ে মারা যেতেন। মাসে আমরা ১০ হাজার টাকা করে দিই।’’
মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে দেখলেন, মিথ্যে কথা বলে চক্রান্ত করল। সারা দেশের সামনে বাংলার মাথা হেঁট করল। ছাপ্পার পর ছাপ্পা দিচ্ছে শনিবার। আমরা ভয় পাই না।’’
মমতা বলেন, ‘‘ভোটে জিততে পারে না। নন্দীগ্রামে আবার ওই গুন্ডাটা গুন্ডামি করেছে। গদ্দারটা কাল মধ্যরাতে আমাদের মেন লোককে খুন করিয়েছে। আমাদের ভোটদাতাদের খুন করিয়েছে, যারা ভোট করায়। তার পর সকাল থেকে নন্দীগ্রাম, খেজুরি দখল করিয়েছে। কী ভাবছ? শুধু ওই দুই দিয়ে বাংলা হবে? ঘেঁচু হবে। তুমি আট-দশটা বুথ নিয়ে থাকো।’’
মমতা বলেন, ‘‘সকলকে চোর-ডাকাত বলছেন। আসল চোর-ডাকাত তুমি। আমি-আমি করি না। আমরা করি। দেশের টাকা গেল কোথায়? পিএম কেয়ার কোথায় গেল? সেল, গেল, কোল ইন্ডিয়া বিক্রি হচ্ছে। মাঝে মাঝে কয়লা, গরুর কথা বলো। কোল ইন্ডিয়া কার দায়িত্বে? কেন্দ্রের। প্রথমে উচিত মন্ত্রীদের গ্রেফতার করা। কয়লা আমদানি নিয়ে মামলা চলছে আদানির বিরুদ্ধে। লজ্জা করে না!’’
মমতা বলেন, ‘‘সকলের বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দিচ্ছেন বলেছেন। দিচ্ছেন কি? তা হলে ওটা কি গ্যারান্টি? না ফোর টোয়েন্টি? বিনামূল্যে গ্যাস দিচ্ছেন! গ্যাসের থেকেও ভারী গ্যাস বেলুন। ভোট তো চাই। আবার নোটবন্দি করতে হবে, এনআরসি করতে হবে, ক্যা করতে হবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপির নোংরা খেলা দেখলে মনে হয় তুমি কি কেবল ছবি! কবি বেঁচে থাকলে বলতেন, যাও যাও যাও। গ্যারান্টি বুঝি না। ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে, মোদী বাবু কি বলেননি? কথা কি রেখেছেন? গ্যারান্টি দিয়ে কথা না রাখলে ফোর টোয়েন্টি। ২ লক্ষ চাকরি দেবে বলেছিল। আজ চাকরি দিলেও খেয়ে নিচ্ছে। চাকরিখেকো বাঘ দেখেছেন?’’
মমতা বলেন, ‘‘আমি ক্ষুদ্র মানুষ। গ্যারান্টি বানান জানি না। সামান্য স্কুলে পড়াশোনা করেছি। মোদীবাবুকে ছাড়ব না। আমাদের নামে বিরোধিতা করেছে। মানহানির মামলা করব। কথা বলা সৌন্দর্য। ’’
কবি নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের ভাষায় প্রতিবাদ করলেন মমতা। আওড়ালেন একের পর এক কবিতা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাই পথ দেখাবে দিল্লিকে। বাংলা না থাকলে দেশের স্বাধীনতা হত না। এই বিজেপি সরকারকে উপড়ে ফেলতে পারি, সেই বিশ্বাস রয়েছে। ‘বাঁধ ভেঙে দাও’, রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন। ভাঙো বিজেপিকে ভাঙো। ভাঙো এনআরসি ভাঙো। ভাঙো ভেদাভেদ ভাঙো। ভাঙো অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে ভাঙো।’’
মমতা বলেন, ‘‘রিকশাওয়ালার ভোটের যা অধিকার, আদানি-অম্বানীরও ভোটের তা-ই অধিকার। রাজা-প্রজায় ভাগাভাগি নেই। ভোট সকলের জন্য। কারাগার বানিয়ে দিয়েছেন মোদী সরকার। কারাগার বানিয়েছেন। সকলকে জেলে ঢোকাচ্ছেন। নজরুলের ভাষায় প্রতিবাদ করব। কারার ওই লৌহকপাট...। বিজেপির শিকল বিকল করব।’’
মমতা বলেন, ‘‘রাজনীতি করি। নিজে সামান্য মানুষ হলেও লেখালিখি করি। ছোট থেকে করি। তাই গানের প্রতি ভালবাসা রয়েছে। ছবিও আঁকি। ডান্ডিও বাজাই। ধামসা, মাদল বাজাই। ফুটবলও খেলি। ’’
মমতা জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনারা যাঁরা সামনে বসে রয়েছেন, তাঁরাই আসল। মা-মাটি-মানুষ। শনিবার নজরুলের জন্মদিন পালন করলাম। রাজনীতি সংস্কৃতিও।’’ এর পর নজরুলের বিষয়ে কিছু কথা বলেন মমতা। জানান, আসানসোলের চুরুলিয়ায় জন্ম তাঁর। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
মমতা জানালেন, দমদমের প্রার্থী সৌগতের কোনও ক্লান্তি নেই। যে যেখানেই ডাকুন, তিনি চলে যান ঠিক। পকেটে থাকে লজেন্স। ‘সৌগতদার’ হয়ে ভোট চাইলেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘‘দু’মাস ধরে বক্তৃতা করছি। মিছিল করছি। গলায় কিছু নেই। অদিতিকে আগেই বলেছি। ছোট্ট মেয়েটিকে ভালবাসি। কাল অদিতি মেসেজ করল। তুমি এত খাটছ ,ভয় লাগছে বলতে। আমাদের বাগুইআটির লোকজন তোমার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। ওকে বললাম, তুমি দিদির কাছে আবদার করেছ, দিদি রাখবেন না, হয় না। এক দিনের নোটিসে যা পারবে করুক।’’
মঞ্চে নজরুল দিবস পালন। মমতা জানালেন, এই দিনে নজরুল দিবস পালন করা হয়। নজরুল তীর্থে সেই উপলক্ষে অনুষ্ঠান হচ্ছে। অদিতি মুন্সীর পর ইন্দ্রনীল সেনকে গান করার কথা বললেন মমতা। গলা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy