মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের তুরুপের তাস হয়ে ওঠেছে লক্ষ্মীর ভান্ডার। শহর থেকে গ্রাম প্রায় সর্বত্রই বিশেষ করে মহিলাদের প্রভাবিত করেছে লক্ষ্মীর ভান্ডার। তার উপর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণায় এ বার সেই বরাদ্দ ৫০০ থেকে বেড়ে হচ্ছে এক হাজার। লোকসভার ভোটের আগে এই ঘোযণা তৃণমূলকে কিছুটা অ্যাডভান্টেজ দেবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
পাশাপাশি একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা কেন্দ্র না দিলে রাজ্য সরকারই সেই টারা দেবে বলে তৃণমূলের তরফে প্রতিশ্রুতিও এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের এই সমস্ত সামাজিক প্রকল্পের দাপটে বিরোধী দলগুলির তোলা দুর্নীতি ও বেকারত্বের মতো ইস্যু কার্যত কিছুটা কোণঠাসা। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
লক্ষ্মীর ভান্ডার: ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে মহিলারা আরও বেশি তৃণমূলের দিকে ঝুঁকেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে এই টাকা শুধু মহিলাদের হাত খরচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। সংসার চালানোর ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। এমন দাবি তৃণমূলের। দেখা গিয়েছে, কোনও কোনও পরিবারে মা, মেয়ে ও বৌমা মিলিয়ে তিন থেকে চারজন এই টাকা পাচ্ছেন। সেই টাকায় সংসার খরচের অনেকটাই সামাল দিচ্ছেন তাঁরা। যে কারণে তারা ভোটে হেরে গেলে এই টাকা বন্ধ হয়ে যাবে বলে শাসক দলের তরফে যে প্রচার করা হচ্ছে তা অনেককেই প্রভাবিত করছে। তৃণমূলের হারে এই টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় থেকেই মহিলারা তাদের ভোট দেবে, দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। সেই সম্ভাবনার কথা মানছে বিরোধী দলগুলিও।
যদিও এর পাল্টা বিজেপির তরফে আরও বেশি টাকা ও বামেদের পক্ষ থেকে কর্মসংস্থানের কথা বলা হলেও তা বিশেষ কাজে আসছে না বলে মনে করছেন অনেকেই। তৃণমূলের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প তাই বিরোধীদের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবনে দুর্নীতির কোনও সরাসরি প্রভাব পড়ে না। বরং লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা তাদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে।”
একশো দিনের কাজের প্রকল্প: ভোটের অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রের টাকা না দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। বিজেপিও এই প্রকল্পে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে। পাশাপাশি তৃণমূলের দুর্নীতি আর কেন্দ্রের টাকা দেওয়া বন্ধ করার বিষয়টি সামনে এনে দরিদ্র মানুষকে বঞ্চনা করার অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বাম এবং কংগ্রেস। একদিকে বিজেপি ও অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস এই ত্রিফলা আক্রমণে অনেকটাই যেন বেসামাল তৃণমূল। মজুরির টাকা না পেয়ে জব কার্ড থাকা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ভোটের আগে সেই শ্রমিকদের বকেটা মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বছরে ন্যূনতম ৫০ দিনের কাজ নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। অনেকে মনে করছেন এর ফলে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের বকেয়া টাকা ও কাজ না পাওয়ার জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অসন্তোষ সামাল দেওয়া যাবে। যদিও বিরোধীরা সে কথা মানতে নারাজ। তাদের দাবি, একেবারে বুথ স্তরে সাধারণ মানুষ নিজেদের চোখের সামনে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি হতে দেখেছেন। তাঁদের বঞ্চিত করে তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের রাতারাতি আঙুল ফলে কলাগাছ হতে দেখেছেন। ফলে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা বকেয়া টাকা পরিশোধ করে মেরামত করা সম্ভব নয়। বরং জীবন-জীবিকার প্রশ্নে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই মানুষ ভোট দেবে বলে বিরোধী দলগুলির দাবি।
আবাস যোজনার ঘর: যাদের ঘর পাওয়ার কথা তাদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় না থাকা। উল্টে সেই তালিকায় তৃণমূলের ধনী নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের নাম থাকা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব বিজেপি এবং বামেরা। ঘরের টাকা পেতে হলে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্য ও নেতাদেরকে মোটা টাকা দেওয়ার ঘটনাও সামনে এসেছে। কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল এসে সেই সমস্ত দুর্নীতি ও অনিয়ম হাতেনাতে ধরেছে। যা নিয়ে জনসাধরণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। যাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বড় অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে মরিয়া বিরোধীরা। সেই মত প্রচার করা হচ্ছে। যদিও এই ক্ষোভে জল ঢালতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ভোটের পর কেন্দ্র টাকা না দিলেও রাজ্য সরকারের তরফে ঘর করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মানুষের ক্ষোভকে তা কতটা প্রশমিত করবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর এই সবেরই উত্তর মিলবে ৪ জুন।
এ ব্যাপারে রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘আমরা তো বলেই দিয়েছি, ক্ষমতায় এলে মহিলাদের তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তাছাড়া যাঁদের একশো দিন করে কাজ পাওয়ার কথা তাঁরা কেন তৃণমূল নেতাদের চুরির কারণে ৫০ দিন কাজ পাবেন। আবাস যোজনাতেও মানুষকে বঞ্চিত করেছে তৃণমূল। এর ফল এবার ভুগতে হবে। কোনএ কিছুতেই কাজ হবে না।’’
তৃণমূলের নদিয়া উত্তর সংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমানের দাবি, ‘‘লক্ষীর ভান্ডার নিয়ে মানুষের মধ্যে আগাগোড়া আগ্রহ ছিল। মহিলারা একে সাদরে গ্রহণ করেছেন। আর ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হচ্ছে বাংলার সাধারণ মানুষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দিশা দেখাচ্ছেন। মানুষ তা দেখছে। তারা আমাদের পাশেই আছে।’’
সিপিএমে নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘স্বনিযুক্তিকরণ প্রকল্প শক্তিশালী হলে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেলে মানুষের আয় আরও কয়েক গুণ হবে। তা তো করা হচ্ছে না। বিজেপি একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিতে চাইছে। আর তৃণমূল সেটা ৫০ দিনে নামিয়ে আনছে। আমরা বলছি ২০০ দিনের কাজের কথা। আবাস যোজনায় কতজনকে টাকা দেবে তৃণমূল? আদৌ দেবে কি? আসল উদ্দেশ্য তো কাটমানি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy