বর্ধমানে ব্যাট হাতে তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: উদিত সিংহ।
রাধারানি স্টেডিয়ামে চলছিল তৃতীয় ডিভিশন ক্রিকেট লিগে চৌরঙ্গি ও বিধানপল্লি অ্যাথেলেটিক ক্লাবের খেলা। সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে মাঠে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার। স্টেডিয়ামে খেলা দেখার পরে তিনি মাঠে নামার ইচ্ছাপ্রকাশ করায়, খানিক ক্ষণের জন্য ম্যাচ থামানো হয়। ব্যাট হাতে মাঠে নেমে গোটা চারেক বল খেলে দু’টিকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে কীর্তি আজাদ বললেন, ‘‘এ বার ভোটে বিরোধীদেরও এ ভাবে মাঠের বাইরে পাঠাব।’’
রবিবারই ব্রিগেডের সভা থেকে তৃণমূল বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে তাদের প্রার্থী হিসেবে কীর্তির নাম ঘোষণা করেছে। তার পরেই সোমবার সকালে দুর্গাপুর থেকে বর্ধমানে এসে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজো দিয়ে তৃণমূল প্রার্থী পৌঁছে যান রাধারানি স্টেডিয়ামে। তিনি বলেন, “বর্ধমানের মতো শহরে ডিভিশন পর্যায়ে ক্রিকেট লিগ হচ্ছে দেখে আমি খুবই উত্তেজিত।’’ মাঠে ছিলেন বর্ধমান ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক পীরদাস মণ্ডল, ক্রিকেট সচিব শিবপ্রসাদ ঘোষেরা। তাঁরা স্টেডিয়াম ও ক্রীড়ার উন্নতির আর্জি জানান। তৃণমূল প্রার্থী বলেন, ‘‘সেবা করার সুযোগ পেলে অবশ্যই এ নিয়ে ভাবব।’’
এ দিন শহরে এসে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসকে ‘ক্যাপ্টেন’ বলে উল্লেখ করে কীর্তি বলেন, ‘‘ক্যাপ্টেনের নির্দেশ মেনেই খেলব।’’ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সঙ্গে তুলনা করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন। তাঁর কথায়, ‘‘তার পরেও বাংলাকে ঠান্ডা রেখে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।” পরে বর্ধমানের টাউন হলে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ-সহ লোকসভা এলাকার পূর্ব বর্ধমানের অংশের পাঁচ বিধায়ক, ব্লক সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন কীর্তি আজাদ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কোনও আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সবাইকে একযোগে নেমে প্রার্থীকে জেতানোর আহ্বান জানান জেলা নেতৃত্ব। দলের নেতারা জানিয়ে দেন, কীর্তি আজাদ শুধু প্রাক্তন ক্রিকেটার নন, তিনি আগে সাংসদও ছিলেন। দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে, তিনি যদি জেতেন, তার পরে ‘পরিযায়ী সাংসদের’ দলে নাম লেখাবেন না তো? এ দিন বর্ধমানের একাধিক জায়গায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে কীর্তি আশ্বাস দেন, “আমার নামে নিখোঁজ পোস্টার পড়বে না।’’
এরই মধ্যে কীর্তির পরিবারের বিরুদ্ধে ‘বাঙালি বিরোধিতার’ অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় সমাজমাধ্যমে অভিযোগ তুলেছেন, কীর্তির বাবা ভগবত ঝা আজাদ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ভাগলপুরে বাঙালিদের উপরে অত্যাচার হয়েছিল। এক বাঙালি মহিলাকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু ভগবত সেই সময়ে অভিযোগকারী বাঙালিদের পাশে না দাঁড়িয়ে অভিযুক্তদের আড়াল করেছিলেন, অভিযোগ তাঁর।
বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘কীর্তিকে বর্তমান প্রজন্মের কেউ ক্রিকেটার হিসেবে জানেন না। তৃণমূল আমাদের নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে। একটা আঞ্চলিক দল হয়েও বর্ধমান-দুর্গাপুরে স্থানীয় কোনও প্রার্থী তৃণমূল পেল না। বাইরে থেকে যাঁকে আনা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে আবার গুরুতর বিদ্বেষের অভিযোগ রয়েছে। সব দেখেশুনে তৃণমূল কর্মীরাই বিভ্রান্ত!’’ তৃণমূলের পাল্টা দাবি, আসানসোলে ভোজপুরি
তারকা পবন সিংহকে নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলার পরে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে তিনি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সেখানে বিজেপি সমস্যায় পড়েছে। তাই ১৯৮৮ সালের কোনও ঘটনার সঙ্গে কীর্তির পরিবারের নাম জোর করে জড়িয়ে বদলা নিতে চাইছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘এ সব বিজেপির নোংরা রাজনীতি। মানুষের ভোটে জেতার ক্ষমতা নেই, তাই বাঁকা পথ নেওয়ার চেষ্টা। কীর্তিকে জয়ী করে এর বদলা নেবেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের মানুষ।’’ গোটা বিষয়টিকে আমল দিতে চাননি কীর্তি নিজেও।
ভোট ঘোষণার আগে প্রচার শুরু করায় তৃণমূল প্রার্থী কি এগিয়ে গেলেন? এই লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক আশিস পালের বক্তব্য, “গত বার ভোটের ২১ দিন আগে প্রার্থী ঠিক হওয়ার পরেও আমরা জিতেছিলাম। মানুষ ‘মোদীর গ্যারান্টি’কে ভোট দেবেন বলে
মুখিয়ে আছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy