কাজল শেখ। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নানুর এবং কেতুগ্রাম বিধানসভার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে বলেছেন। সেই নির্দেশ মেনে, লোকসভায় ওই দুই বিধানসভা কেন্দ্রকে পাখির চোখ করেছেন বীরভূমের জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। ওই দুই কেন্দ্রে থেকে রেকর্ড সংখ্যক জয়ের ব্যবধান পাওয়াই এখন তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দলীয় প্রার্থী অসিত মালকে নিয়ে মন্দিরে পুজো দেওয়া থেকে শুরু করে কর্মিসভায় লিড বেঁধে দিতে দেখা যাচ্ছে কাজলকে। লিড বাড়াতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণাও করতেও শোনা যাচ্ছে তাঁকে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কেতুগ্রামে অসিত মাল পেয়েছিলেন ১,০২,৬৭৯ টি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির রামপ্রসাদ দাস ৭৫,১৬৫ টি ভোট। নানুর বিধানসভায় ওই পরিসংখ্যান ছিল যথাক্রমে ১,০৮,৭১৭ এবং ৯০,৯৮৬। দুই বিধানসভা মিলিয়ে জয়ের ব্যবধান ছিল ৪৫,২৫৪। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নানুরে তৃণমূলের বিধানচন্দ্র মাঝি এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির তারক সাহা যথাক্রমে ১,১২,১১৬ এবং ১,০৫,৪৪৬ টি ভোট পান।
কেতুগ্রামে তৃণমূলের শেখ শাহনাওয়াজ এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির মথুরা ঘোষের প্রাপ্ত ভোট ছিল যথাক্রমে ১,০০,২২৬ এবং ৮৭,৫৪৩। ২০২১ সালে ওই দুই বিধানসভা মিলিয়ে জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ১৯,৩৫৩। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই ব্যবধান কমার অন্যতম কারণ ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’। এখন এই ব্যবধানকে যতটা সম্ভব বাড়ানোই কাজলের লক্ষ্য। কাজল বলেন, ‘‘বিধানসভায় কী হয়েছে দেখার দরকার নেই। আমরা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে অনেক এগিয়ে আছি।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, দু’টি এলাকাই কাজলের ‘খাসতালুক’ হিসেবে পরিচিত। তাঁর বাড়ি নানুরের পাপুড়ি গ্রামে। নানুর এলাকা থেকেই রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জিতে জেলা সভাধিপতি হয়েছেন তিনি। কেতুগ্রামে তাঁর দাদা শাহনাওয়াজ বিধায়ক। তাঁর হয়ে ওই এলাকায় ভোট করানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে কাজলের। সেই কথা বিবেচনা করেই দলনেত্রী তাঁকে ওই দু’টি বিধানসভা এলাকা দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
বিশেষজ্ঞদের অন্য অংশের মতে, দলের জেলা কোর কমিটি তথা জেলা কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ‘ক্ষোভ’ প্রশমনে কাজলের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন দলনেত্রী। দলীয় সূত্রের খবর, কাজলের সঙ্গে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ‘বিরোধ’ রাজনৈতিক মহলে সুবিদিত। অনুব্রত জেলে যাওয়ার আগে কাজলকে দলে কার্যত ‘ব্রাত্য’ হয়ে থাকতে হত। তাঁর সভাধিপতি হওয়াটা তাই অনুব্রত অনুগামীদের কাছে ছিল ‘অপচ্ছন্দের’।
সূত্রের খবর, সভাধিপতি হওয়ার পরে ওই সব নেতাদের ‘অন্ধকারে’ রেখে কাজলকে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। অনুব্রত অনুগামী নেতারা বিষয়টিকে ‘ভাল’ ভাবে নেননি। তার উপরে জেলায় একটি প্রশাসনিক বৈঠক থেকে উষ্মা প্রকাশ করে বেরিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ ওঠে কাজলের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, কালীঘাটের বৈঠকে সে ব্যাপারে দলনেত্রীকে ‘বিরক্তি’ প্রকাশ করে কাজলকে জেলা দেখার দরকার নেই বলতেও শোনা যায়। সেখানেই কাজলকে দু’টি বিধানসভার মধ্যে ‘সীমাবদ্ধ’ করে দেন দলনেত্রী।
স্বাভাবিক ভাবেই নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে ওই দু’টি বিধানসভাকেন্দ্রে রেকর্ড সংখ্যক ব্যবধান বাড়ানোই এখন কাজলের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। কাজল নিজে অবশ্য বলেন, ‘‘শুধু ওই দু’টি বিধানসভাই নয়, বীরভূমের দু’টি লোকসভা কেন্দ্রেই ব্যবধান বাড়ানোই আমার চ্যালেঞ্জ। সেটা করে দেখিয়ে দেব।’’ যদিও বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর ) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘ভোটে পুলিশ আর বোমা বন্দুক ব্যবহার না করলে ব্যবধান বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ ঘুচে যাবে।’’
বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহা বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। সময়ই বলবে কী হবে।’’ যদিও বোলপুরের বর্তমান সাংসদ ও তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উন্নয়ন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার পাশাপাশি নাগরিকত্ব আইনের জন্য এ বার আমরা ব্যবধান বাড়িয়ে জিতব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy