ব্রিগেডের মঞ্চে মমতা-অভিষেক। — ছবি: পিটিআই।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃণমূলের ‘জনগর্জন সভা’য় নজিরবিহীন ভাবে প্রার্থিতালিকা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দলনেত্রীর সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটলেন প্রার্থীরা। প্রার্থিতালিকা ঘোষণায় এমন অভিনবত্ব আগে দেখেনি দেশ। তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে চমকের পর চমক। এ ছাড়াও, আট জন সাংসদ গত বার জিতেও এ বার টিকিট পেলেন না। তার মধ্যে যেমন রয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ, তেমনই রয়েছেন কাঁথি এবং তমলুকের সাংসদ যথাক্রমে শিশির এবং দিব্যেন্দু অধিকারী, যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তীরা। তবে শিশির, দিব্যেন্দুর বাদ পড়াটা নিয়ে কোনও সংশয়ের অবকাশ ছিল না।
২০১৯ সালের ভোটে যাদবপুর এবং বসিরহাট আসন থেকে জিতেছিলেন তারকা অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান। এ বার দু’জনের কেউই টিকিট পাননি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মিমি। বেরিয়ে এসে দাবি করেছিলেন, তিনি রাজনীতির লোক নন। সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দিতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এসেছিলেন। দলনেত্রী তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করলে লোকসভার স্পিকারের কাছে তা পাঠাবেন। মমতা সেই ইস্তফা গ্রহণ করেছিলেন কি না জানা নেই। রবিবার প্রকাশিত প্রার্থিতালিকায় দেখা গেল নাম নেই মিমির। টালিগঞ্জের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর জায়গায় অবশ্য যাদবপুরে এ বার লড়াই করবেন আর এক অভিনেত্রী তথা যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ।
টিকিট পাননি বিদায়ী সাংসদ তথা তারকা অভিনেত্রী নুসরতও। তিনি বসিরহাটের সাংসদ ছিলেন। যে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে সন্দেশখালি। তৃণমূলের অন্দরের একটি সূত্রের দাবি, গত পাঁচ বছরে নুসরতের কাজে খুশি নন দলনেত্রী। তারই প্রতিফলন ঘটেছে প্রার্থিতালিকায়। এর পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সন্দেশখালির গোলমালেও নুসরতের বিশেষ দেখা পাওয়া যায়নি। ফ্ল্যাট দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে ইডি তদন্তও চলছে তারকা অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে।
আরামবাগ লোকসভা থেকে ২০১৯ সালে খুবই সামান্য ব্যবধানে জয় পেয়ে সংসদে গিয়েছিলেন অপরূপা পোদ্দার। কিন্তু এ বার তিনি টিকিট পাননি। তাঁর বদলে তৃণমূল আরামবাগে প্রার্থী করেছে মিতালি বাগকে। প্রসঙ্গত, শনিবার ব্রিগেডে মঞ্চ দেখতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে অন্যান্য নেতানেত্রীর পাশাপাশি মঞ্চ তৈরির কাজের তদারকি করতে দেখা গিয়েছিল অপরূপাকেও। কিন্তু রবিবার ব্রিগেডের র্যাম্পে হাঁটতে পারলেন না অপরূপা।
বর্ধমান পূর্বে ২০১৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন সুনীল মণ্ডল। তার পরে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। আবার ফিরে আসেন তৃণমূলে। কিন্তু তৃণমূল থেকে বিজেপি হয়ে আবার তৃণমূলে ফিরলেও লোকসভার টিকিট তাঁর কাছে ফিরল না। বর্ধমান পূর্বে তৃণমূল প্রার্থী করেছে শর্মিলা সরকারকে।
মথুরাপুর লোকসভার সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন আইপিএস চৌধুরীমোহন জাটুয়া। কিন্তু তিনি শারীরিক ভাবে সুস্থ নন। তাঁর বদলে এ বার মথুরাপুর পেল নতুন তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদারকে।
২০১৯ সালে ব্যারাকপুর লোকসভায় তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেছিলেন অর্জুন সিংহ। কিন্তু প্রথম বার সংসদে যাওয়ার পর আবার ফিরে এসেছিলেন সেই তৃণমূলেই। তবু রবিবারের ব্রিগেডে র্যাম্পে হাঁটা হল না অর্জুনের। ব্যারাকপুরে তৃণমূল প্রার্থী করল রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে।
এ ছাড়াও রাজ্যের আরও দু’টি লোকসভা আসনে প্রার্থী বদল করেছে তৃণমূল। কার্যত তা অনিবার্যই ছিল। সেই কেন্দ্র দু’টি হল কাঁথি এবং তমলুক। ২০১৯ সালে কাঁথিতে জিতেছিলেন শিশির অধিকারী আর তমলুকে দিব্যেন্দু অধিকারী। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে অমিত শাহের হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর পরে তাঁর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারীও বিজেপিতে যান। তার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভামঞ্চে হাজির ছিলেন প্রবীণ সাংসদ শিশির। তৃণমূল একাধিক বার তাঁর এবং তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দুর সাংসদপদ বাতিলের আবেদন করেছে। শিশির বা দিব্যেন্দু তৃণমূলের সাংসদপদ না ছাড়লেও বিজেপি-সখ্য লুকোননি। স্বভাবতই শুভেন্দুর বাবা এবং ভাই যে এ বার তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় স্থান পাওয়ার কথা ছিল না। ব্রিগেডের র্যাম্পে কাঁথি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে হাঁটলেন উত্তম বারিক আর তমলুকে ঘাসফুলের প্রার্থী হিসাবে লড়াই যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy