বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। —ফাইল চিত্র।
রামনবমীতে ‘অতিরিক্ত’ বাধা-নিষেধের প্রতিবাদে রেলশহরে থানার সামনে ধর্নায় বসেছিলেন মেদিনীপুরের পদ্মপ্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। আবার পাশের শহর মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে নিমরাজি হওয়ায় পুলিশকে কার্যত ধমক দিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সেই ঘটনায় জামিন অযোগ্য ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। এ বার রেলশহরের ঘটনায় তৃণমূল নেতার অভিযোগে বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে শো’কজ় করল নির্বাচন কমিশন! মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার ঘটনাতেও তাঁকে শো-কজ় করেছে কমিশন।
রেলশহরের ঘটনায় খড়্গপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার হিসেবে মহকুমাশাসকের মাধ্যমে অগ্নিমিত্রার কাছে ‘ব্যাখ্যা’ চাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল খড়্গপুর টাউন থানার সামনের রাস্তায় ধর্নায় বসেন অগ্নিমিত্রা। তাঁর দাবি ছিল, অতিরিক্ত বাধা-নিষেধ জারি করে রামনবমীর আখড়াগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করছে পুলিশ। ঘটনায় থানা থেকে বেরিয়ে আসেন টাউন আইসি ও এসডিপিও। পুলিশকে বিধি-নিষেধের নির্দেশিকা পাঠ করতেও দেখা যায়। তার পরেই আইসির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে যান বিজেপি প্রার্থী তথা আসানসোলের বিধায়ক। এরপর গত ১৮ এপ্রিল খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী জেলার রিটার্নিং অফিসারের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান। সেখানে রাস্তা অবরোধ করা ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা পুলিশ অফিসারদের হুমকি দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তৃণমূল নেতা। এর পরেই এ দিন কমিশন অগ্নিমিত্রাকে শো-কজ় চিঠি পাঠিয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযোগকারী দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘অগ্নিমিত্রা পাল আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করেছেন। শহরে থানার সামনে রেল হাসপাতাল ও রেল কারখানায় যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করেছেন। সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কদর্য ভাষায় কথা বলেছেন।’’ বিষয়টি নিয়ে জেলার রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী বলেন, ‘‘ওঁর (অগ্নিমিত্রা পাল) বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ এসেছিল। নির্বাচন কমিশনের হেল্পলাইনেও অভিযোগ পৌঁছেছিল। সেই কারণে ওই অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বিজেপির ঘোষিত প্রার্থীকে।’’
অন্য দিকে, গত বুধবার কোতোয়ালি থানার সামনেও অবস্থানে বসেছিলেন অগ্নিমিত্রা। থানার গেটে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির একদল নেতা-কর্মী। বিজেপি প্রার্থীর অবশ্য দাবি, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে থানায় গিয়েছিলেন। ডিউটি-অফিসার এফআইআর নিচ্ছিলেন না। তাই তিনি অবস্থানে বসেছিলেন। টেবিল-ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীর উদ্দেশে সে দিন অগ্নিমিত্রা সরাসরি প্রশ্নও ছুঁড়েছিলেন, ‘‘আমার এফআইআর কে নেবে? আমি আপনাকে এফআইআর দিচ্ছি। আপনি রিসিভ করুন। আমি বাইরে রাস্তা অবরোধ করছি। দেখি আপনি কতক্ষণ না রিসিভ করতে পারেন!’’ মেদিনীপুরের এই ঘটনায় বিজেপি প্রার্থী-সহ গেরুয়া শিবিরের কয়েকজনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলাও দায়ের করে পুলিশ। জেলা থেকে রিপোর্ট গিয়েছিল কমিশনেও। এরপরই ওই ঘটনায় শনিবার বিজেপি প্রার্থীকে শো-কজ়করেছে কমিশন। কমিশনের তরফে তাঁকে শো-কজ়ের চিঠি পাঠিয়েছেন মেদিনীপুরের এআরও। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘ওঁকে শো-কজ় করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।’’
কোতোয়ালি থানার ঘটনা নিয়ে বিজেপি প্রার্থীকে বিঁধেছেন তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া। জুন বলেছেন, ‘‘কথায় কথায় ধর্না, দাঙ্গা-বাজি। কী কী করছেন উনি, সব কিন্তু মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের মানুষ দেখছেন।’’ অগ্নিমিত্রা অবশ্য দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে গিয়েছিলাম। ডিউটি অফিসার এফআইআর নিতে চাইছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রী কী আইনের ঊর্ধ্বে? তখন আমি প্রতিবাদ করেছি। পুলিশ দায়িত্ব পালন করছিল না। আমি তখন রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করেছি।’’ তবে এ হেন জোড়া শো’কজ়ের পিছনে তৃণমূল-পুলিশের আঁতাত দেখছেন বলেও দাবি করেছেন পদ্মপ্রার্থী। অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘এখন এই রাজ্যে পুলিশ মানেই তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশমন্ত্রী বলে তৃণমূলও নিজেদের পুলিশ ভেবেছে। তাই তৃণমূল নেতা আমার নামে অভিযোগ জানিয়েছেন। অথচ মানুষের জন্য কথা বলার কেউ নেই। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তার উপযুক্ত ব্যাখ্যা আমার কাছে রয়েছে। আইনজীবীরা কমিশনকে যথাসময়ে সেই ব্যাখ্যা দিয়ে দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy