চন্দ্রকোনা রোডের ভাঙাবাঁধ আদিবাসী পাড়ায় জল জীবন মিশনের ট্যাপ বসলেও জল পড়ে না। নিজস্ব চিত্র।
কথা রাখেননি বিদায়ী সাংসদ।
পানীয় জল আনতে এখনও পাশের পাড়ায় যেতে হয় লক্ষ্মী হাঁসদা, রূপালি মাণ্ডিদের। রাত-বিরেতে আঁধার পথেই যাতায়াত করেন কুনু মাণ্ডিরা। সামনে আর একটা লোকসভা ভোট। বছর তিনেক আগে পাড়ায় এসে সাংসদের দেওয়া আশ্বাস পূরণ না হওয়ায় কার্যত হতাশ লক্ষ্মী, কুনুরা।
গড়বেতা ৩ (চন্দ্রকোনা রোড) ব্লকের সাতবাঁকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে বিলা কলোনির ভাঙাবাঁধ আদিবাসী পাড়া। ৮০-৯০টি আদিবাসী পরিবারের বাস সেখানে। সবাই খেটে-খাওয়া। লক্ষ্মী, রূপালি, কুনুদের মতো এই পাড়ার আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকেই পানীয় জল আনতে পাশের পাড়ায় যান। ওই পাড়ায় ঢালাই রাস্তা হলেও পথবাতি নেই। ফলে সন্ধ্যার পর অন্ধকারেই যাতায়াত করতে হয়। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে এই অসুবিধার কথাগুলো তাঁরা বলেছিলেন ঝাড়গ্রামের বিদায়ী বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমকে। বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সেবার সাংসদকে ওই গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন। সব শুনে সাংসদ না কি তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে ওই পাড়ায় পরিশুদ্ধ পানীয় জল আর সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তারপরে তিন বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ভাঙাবাঁধের ওই আদিবাসী পাড়ায় সৌরবিদ্যুৎ বা জলপ্রকল্প— কোনওটাই হয়নি। শনিবার ওই পাড়ার ঢালাই রাস্তার পাশে কর্দমাক্ত ড্রেনের ধারে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মী হাঁসদা, রূপালি মাণ্ডিরা বললেন, ‘‘সেবার এমপি এসে ভাল জল আর সোলার আলোর (সৌর বিদ্যুৎ) ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তা হয়নি। এখনও পাশের পাড়া থেকে খাবার জল আনতে হয়।’’ কুনু মাণ্ডি, চুনা হাঁসদাদের আক্ষেপ, ‘‘সন্ধ্যা হলে অন্ধকারেই যাতায়াত করতে হয়।’’
এবারের লোকসভা ভোটে কুনারকে প্রার্থীও করেনি বিজেপি। কুনারও সম্প্রতি বিজেপি ছেড়েছেন। এই আবহে ভোটের আগে ওই এলাকায় গেরুয়া শিবিরও অস্বস্তিতে। সাতবাঁকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এক বিজেপি নেতাও বলছেন, ‘‘সাংসদ এসে জল-আলোর ব্যবস্থা করে দেবেন বলেছিলেন। তিন বছর হয়ে গেল সেই কাজ আর হয়নি। গ্রামের অনেকে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন। আমি কিছু বলতে পারি না।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা গৌতম কৌড়ি বলছেন, ‘‘সাংসদ জল-আলোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গ্রামের মানুষকে এস্টিমেট করে পাঠাতে বলেছিলেন সাংসদ। সেটা হয়তো কেউ করেননি। তাই হয়নি। তবে বিজেপি কথা দিলে সেই কথা রাখে।’’ বিদায়ী সাংসদ কুনারও বলছেন, ‘‘গ্রামের মানুষকে লিখিত আবেদন, প্ল্যান এস্টিমেট করে দিতে হত। তা না দেওয়ায় কাজ হয়নি।’’
পানীয় জল না এলেও ওই আদিবাসী পাড়ায় জল জীবন মিশনে পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। বসেছে ট্যাপ। কিন্তু জলের সংযোগ এখনও আসেনি। সাংসদ না হয় প্রতিশ্রুতি রাখেননি। পঞ্চায়েত কী করছে? তৃণমূল পরিচালিত সাতবাঁকুড়া পঞ্চায়েতের প্রধান মণিকাঞ্চন রায়ের দাবি, ‘‘আদিবাসী পাড়ায় ঢালাই রাস্তা হয়েছে। আলোর সংযোগ না হলেও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের অর্থে বাতিস্তম্ভ হয়েছে। গ্রামে সাবমার্সিবল পাম্প আছে। সেখান থেকেই জল নেন আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দারা। সাংসদকে তো এলাকায় দেখাই যায় না।’’ সাংসদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ সরকারের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপি ভাঁওতা প্রতিশ্রুতি দেয় এটা প্রমাণিত সত্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy