Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024 Result

‘ঘরের ভোট’ও তৃণমূলে, মানছে বাম

জেলার বাম নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে বেশির ভাগ মানুষ তৃণমূলকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪ ০৮:২৮
Share: Save:

‘হাল ফেরাতে, লাল ফেরাও’— এ বার এই স্লোগানে ভরসা রেখেছিল রাজ্যের বাম। লাল ফেরেনি। উল্টে লোকসভা ভোটে আরও বেহাল হয়েছে বাম।

কেন এই ফল, তার কাটাছেঁড়ায় দেখা যাচ্ছে, বাম ভোট শুধু রামে গিয়েছে, এমন নয়। নিশ্চিত বাম ভোটের একটা বড় অংশ এ বার তৃণমূলেও গিয়েছে।

গোটা রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরেও এ বার বামেদের ভোট- প্রাপ্তি গতবারের চেয়ে কমেছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও লাভ হয়নি। আর যেখানে বাম শরিক দলের প্রার্থী ছিল, সেখানে ভোট আরও কমেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে লোকসভার আসন দু’টি— মেদিনীপুর এবং ঘাটাল। দুই আসনেই বামদের ভোট ৫ শতাংশের নীচে— মেদিনীপুরে ৩.৯০ শতাংশ, আর ঘাটালে ৪.৬৮ শতাংশ। মেদিনীপুরের সিপিআই প্রার্থী বিপ্লব ভট্ট মানছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যাঁদের থাকার কথা, তাঁদের একটি অংশও তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। আমার সঙ্গে প্রচারে যে লোকজন বেরিয়েছিলেন, তাঁদের সকলে যদি আমায় ভোট দিতেন, তা হলে অন্তত দু’লক্ষ ভোট পেতাম।’’ ঘাটালের বাম প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায়েরও স্বীকারোক্তি, ‘‘আমাদের সমর্থকের একটা অংশ, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের একটা অংশ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন।’’

কিন্তু বামেদের ‘ঘরের ভোট’ তৃণমূলে গেল কেন?

জেলার বাম নেতৃত্বের পর্যবেক্ষণ, বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে বেশির ভাগ মানুষ তৃণমূলকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন। সিপিআই নেতা বিপ্লবের মতে, ‘‘প্রচারে আমরা বিজেপিকে আক্রমণ করেছি। তৃণমূলও করেছে। অনেকের মনে হয়েছে, তৃণমূল চোর ঠিক আছে, কিন্তু আগে বিজেপিকে তাড়াতে হবে। তৃণমূলকে ভোট দিলেই সেটা সম্ভব।’’

মেদিনীপুরে এ বার তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.৪০ শতাংশ ভোট, বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে ৪৫.৫৬ শতাংশ ভোট। আর বামেরা ভোট পেয়েছে ৩.৯০ শতাংশ। ২০১৯-এর লোকসভায় এই কেন্দ্রে বামেরা পেয়েছিল ৪.৪২ শতাংশ ভোট, আর ২০১৪-য় ৩১.৩৬ শতাংশ ভোট। অন্য দিকে, ঘাটালে এ বার তৃণমূল পেয়েছে ৫২.৩৬ শতাংশ ভোট, বিজেপি ৪০.৯৩ শতাংশ আর বামেরা ৪.৬৮ শতাংশ। এই কেন্দ্রে ২০১৯-এ বামেরা পেয়েছিল ৬.৫২ শতাংশ ভোট আর ২০১৪-য় ৩১.০৮ শতাংশ ভোট।

অথচ বাম-আমলে পশ্চিম মেদিনীপুর ছিল ‘লাল-দুর্গ’। এখানে লোকসভার দু’টি আসনেই বরাবর প্রার্থী দেয় সিপিআই। এক সময়ে ঘাটালে (পূর্বতন পাঁশকুড়া) জিততেন গীতা মুখোপাধ্যায়, মেদিনীপুরে ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। ইন্দ্রজিৎ পাঁচ বার জিতেছিলেন। গীতা জিতেছিলেন ছ’বার। রাজ্যে পালাবদলের পরে অবশ্য দল আর জয়ের মুখ দেখেনি। গত কয়েক বছরে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবেও উঠে এসেছে বিজেপি। গত কয়েকটি ভোটে বাম ভোট বিজেপিতে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এ বার আবার নিশ্চিত বাম ভোটের একটা অংশ গিয়েছে তৃণমূলে।

জেলার বাম নেতৃত্বের মতে, বিজেপি বিরোধিতাই একমাত্র কারণ নয়। শ্রমজীবী, দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের যে সব ভোট এক সময় বামেরা পেতই, পরিষেবা-ভোট হিসেবে তা-ও এ বার গিয়েছে ঘাসফুলের ঘরে। তপন মানছেন, ‘‘তৃণমূল সরকার মানুষকে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। আমরা মানুষকে বোঝাতে পারিনি যে, এই সুযোগ-সুবিধা তাঁদের হক, বাড়তি কিছু নয়।’’ সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও মানছেন বাম নেতা-কর্মীরা।

তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়ের মতে, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নেই বেশির ভাগ মানুষ আস্থা রেখেছেন।’’ আর জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের দাবি, ‘‘বামেরা এখন অপ্রাসঙ্গিক। বিকল্প বিজেপিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 CPIM midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE