(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আসন সমঝোতা নিয়ে তিক্ততা এখন অতীত। বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে ফের একই অবস্থানে চলে এল কংগ্রেস ও তৃণমূল।
রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের গ্রেফতারিকে সামনে রেখে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ এক সুরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরের রাজনৈতিক অপব্যবহারের অভিযোগ তুলতে চলেছে। তার আগে আজ কোন কোন বিরোধী দলের নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআইকে কাজে লাগানো হয়েছে, তা নিয়ে কংগ্রেসের তৈরি তালিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেই উঠে এল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। যে সব বিরোধী শিবিরের নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাঁদের নিয়ে তৈরি কংগ্রেসের তালিকাতেও জায়গা করে নিলেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী, মিঠুন চক্রবর্তী, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়।
রবিবার ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’-এর স্লোগান তুলে রামলীলা ময়দানের জনসভায় কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি-র মতো ইন্ডিয়া-জোটের দলগুলির সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসও যোগ দিচ্ছে। তৃণমূলের হয়ে রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন ও সাগরিকা ঘোষ যোগ দেবেন। অন্যান্য বিরোধী দলের নেতানেত্রীরাও থাকছেন। এই দলগুলির মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস বা অন্য কোনও বিরোধী দলের আসন সমঝোতা না হলেও তৃণমূলের রামলীলা ময়দানে উপস্থিতিকে আজ কংগ্রেস বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে। উল্টো দিকে তৃণমূলও জানিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আসন সমঝোতা নিয়ে দর কষাকষির পর্ব মিটে গিয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর বিরুদ্ধে একসঙ্গে বিজেপির মোকাবিলা করতে হবে। কারণ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে এখন অরবিন্দ কেজরীওয়াল, হেমন্ত সোরেনের মতো নির্বাচিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রীদেরও জেলে পোরা হচ্ছে।
রবিবাসরীয় রামলীলায় জনসভার আগেই আজ কংগ্রেস, তৃণমূলের মধ্যে বিজেপিকে আক্রমণে সমন্বয় দেখা গিয়েছে। বিজেপিতে যোগ দিলেই ইডি, সিবিআই তদন্ত থেকে মুক্তির একের পর এক উদাহরণ তুলে শনিবার সকালে কংগ্রেস দিল্লিতে ‘বিজেপির ওয়াশিং মেশিন’ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। দুপুরে ঠিক একই ভাবে তৃণমূলও কলকাতায় ‘বিজেপির ওয়াশিং মেশিন’ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। এনসিপি ভেঙে অজিত পওয়ারের সঙ্গে মিলে বিজেপির হাত ধরা প্রফুল্ল পটেলের বিরুদ্ধে সিবিআই সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়া দুর্নীতির তদন্তের পাট গুটিয়ে ফেলেছে। সেই উদাহরণকে সামনে রেখে আজ কংগ্রেস, তৃণমূল একই সুরে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ওয়াশিং মেশিন’ চালানোর অভিযোগ তুলেছে। দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা, কলকাতায় তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, বিজেপিতে যোগ দিলেই ইডি, সিবিআইয়ের মামলায় অভিযুক্ত নেতারা ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে কালিমালিপ্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে আমাদের আসন সমঝোতা হয়নি। তা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতা রবিবার জনসভায় থাকবেন। কারণ এটা কোনও একটি দলের জনসভা নয়। এটা ইন্ডিয়া-র জনসভা। মোট ২৮টি দল এতে যোগ দিচ্ছে। তৃণমূলও এই জনসভায় যোগ দিচ্ছে। যার অর্থ হল, তৃণমূল ইন্ডিয়া জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায়নি।” একই ভাবে তৃণমূল নেতৃত্বও জানিয়েছেন, যে ভাবে হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ইডি, সিবিআই গ্রেফতার করছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, গোটা বিরোধী শিবিরকে এককাট্টা হতে হবে।
আজ কংগ্রেস মোট ৫১টি ঘটনার তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে ২০১৮ থেকে গত ছয় বছরে বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই পদক্ষেপ করেছে বা সমন পাঠিয়েছে অথবা গ্রেফতার করেছে। এই তালিকায় সাত নম্বরেই রয়েছে ২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী, শ্যালিকাকে সমন পাঠানোর উদাহরণ। একই সঙ্গে মলয় ঘটক, পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে অনুব্রত মণ্ডল, জাকির হোসেনের মতো তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআইয়ের তল্লাশি বা গ্রেফতারিরও উল্লেখ রয়েছে তালিকায়। একই সঙ্গে হিমন্তবিশ্ব শর্মার মতো যে সব নেতা কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দল থেকে বিজেপিতে গিয়ে ইডি, সিবিআই তদন্ত থেকে রেহাই পেয়েছেন, তাঁদেরও নামের তালিকা প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। সেখানে নারদকেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারী, শোভন চট্টোপাধ্যায়, সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হিসেবে মিঠুন চক্রবর্তী, মুকুল রায়ের নাম রয়েছে। যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছেন।
কংগ্রেসের পবন খেরা, তৃণমূলের কুণাল ঘোষ আজ এই তালিকারই সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে প্রফুল্ল পটেলের ঘটনা তুলে ধরেছেন। ইউপিএ সরকারের বিদেশমন্ত্রী প্রফুল্ল পটেলের বিরুদ্ধে অতীতে বিজেপিই এয়ার ইন্ডিয়ার কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলেছিল। তিনি এনসিপি ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার পরে সম্প্রতি সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপিকে দুর্নীতিগ্রস্তদের আশ্রয়স্থল হিসেবে উল্লেখ করে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এজেন্সিকে ব্যবহার করে বিরোধীদের নিশানা করা হচ্ছে। তাঁরা বিজেপিতে নাম লেখালে সব ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে যাচ্ছেন!’’ তাঁদের বক্তব্য, বিজেপির চাপের সামনে মাথা নোয়াননি বলেই হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরীওয়ালদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবার রামলীলা ময়দানে আম আদমি পার্টির নেতাদের সঙ্গে শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে, তেজস্বী যাদব, ফারুখ আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, ডি দেবরাজন, তিরুচি শিবার মতো বিরোধী শিবিরের নেতানেত্রীরা হাজির থাকছেন। তৃণমূলের তরফে থাকছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সোরেন, ঝাড়খণ্ডেরবর্তমান মুখ্যমন্ত্রী চাম্পাই সোরেনও থাকবেন। কংগ্রেসের তরফে মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি সনিয়া গান্ধীও হাজির থাকতে পারেন। বিজেপি কটাক্ষ করে বলেছে, ইন্ডিয়া জোট আগে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী কে হবেন, সেই বিবাদের নিষ্পত্তি করুক।
রবিবার আম আদমি পার্টি মূলত কেজরীওয়ালের গ্রেফতারিকেই প্রধান বিষয় হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও কংগ্রেস জানিয়েছে, এটা গণতন্ত্র বাঁচাও জনসভা। সংবিধানকে বাঁচানোর জনসভা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি, বিচারবিভাগকে নিশানা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো বিষয়ও তুলে ধরা হবে।
তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, এখন ‘মোদীর গ্যারান্টি’ বলে ঢাক পেটানো নরেন্দ্র মোদী গত দশ বছরের কোনও গ্যারান্টিই পূরণ করতে পারেননি। সেই ব্যর্থতাও তুলে ধরবে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy