গোবর্ধনপুর এলাকায় নদী চলে এসেছে দুয়ারে। বাড়ছে উদ্বেগ। নিজস্ব চিত্র।
পুরনো ভাঙা ইটের উপরে কাদার প্রলেপ দিয়ে খড়ের ছাউনির বাড়ি। সেই বাড়ির সামনে বসে জাল সারাই করছিলেন বছর সত্তরের মহেশ্বরী জানা। বললেন, ‘‘দূরে দেখুন, নদীবাঁধ নড়বড় করছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, কটালে বাঁধ উপচে কুঁড়ে ঘরে জল ঢুকে যায়। বাইরে বেরোতে গেলে একহাঁটু জলে নৌকোই ভরসা।’’ ভোট এসেছে বলেই তাঁর খোঁজখবর করা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন করলেন বৃদ্ধা। বোঝা গেল, ভোট এলে তাঁর খোঁজ পড়ে আজও।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের জি প্লটের গোবর্ধনপুর মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে পড়ে। গোবর্ধনপুর গ্রামটি নদীনালা ঘেরা এক দ্বীপ। পশ্চিমে সপ্তমুখী আর পূর্বে জগদ্দল নদীর মাঝে অবস্থিত গোবর্ধনপুর। সাগরের তাণ্ডবলীলায় এখানে দোসর সাজে নদী।
আয়লার পরে আমপান, ইয়াসে গোবর্ধনপুর এলাকার সমুদ্রবাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বাঁধভাঙা নোনা জলে প্লাবিত হয় কৃষিজমি, পুকুর, খালবিল। সমুদ্র লাগোয়া কৃষিজমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিল। তারপরে কেটে গিয়েছে কয়েকটা বছর। এখনও সেই ধ্বংসস্মৃতি স্পষ্ট রয়েছে এলাকাবাসীর মনে। ভূমিহারা কৃষকেরা আজ কার্যত সর্বস্বান্ত। অধিকাংশই কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মিন ধরে, দিনমজুরি করে কোনও ক্রমে দিন চলে।
গত কয়েক বছরে অনেক নির্বাচন হয়েছে। সব দলের প্রার্থীই এ অঞ্চলে ভোট চাইতে গিয়ে মূলত তিনটি প্রতিশুতি দেন। বাঁধ মেরামতি হবে, জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সরকারি প্রকল্পের বাড়ি করে দেওয়া হবে। এ বার তৃণমূল ও বিজেপির কিছু দেওয়াল লিখন, পতাকা চোখে পড়ছে।
জি প্লট এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা মৎস্যজীবী। গ্রামটি ভাঙনের জেরে ছোট হয়ে আসছে। বেহাল বাঁধে বসে কথা বলছিলেন এলাকার বাসিন্দা, মহাদেব বেরা ও সুশান্ত জানা। সুশান্তদের এক সময়ে ৩০ বিঘা জমি, ৩টি বড় পুকুর ও বড় বাড়ি ছিল। সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। সুশান্তের সঙ্গে ছিলেন মহাদেব। যেখানে বসেছিলেন, সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘এখন যেখানে সমুদ্র, ওখানেই ছিল আমাদের বাড়ি, পুকুর, জমি। এক সময়ে নিজের জমিতে কাজ করানোর জন্য শ্রমিক লাগাতে হত। আর এখন পেটের তাগিদে আমরাই এখানে ওখানে কাজ খুঁজে বেড়াই। সময় মতো বাঁধ মেরামতি হলে এ অবস্থা হত না।’’ ভোটের কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘‘ইচ্ছে না থাকলেও ভোটটা দিতে যাব।’’ নদীবাঁধের উপরেই নলকূপ। সেখানে জল আনতে এসে সুজাতা বেরা বলেন, ‘‘সব দলের নেতাদের একই প্রতিশ্রুতি। নেতাদের কথা শুনে ভোট দিয়ে এত দিন ধরে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কী পেলাম? বুথে যাব কি না ভাবছি।’’ গত বছর মার্চ মাসে প্রকাশিত, রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের সিন্থেসিস রিপোর্টে বলা হচ্ছে, সমুদ্রে জলস্তর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে ভারতের উচিত, সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি রোধের জন্য তৈরি থাকা। রিপোর্টে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সুন্দরবনের কথা। তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১৮ মধ্যে প্রতি বছর জলস্তর বেড়েছে ৩.৭ মিলিমিটার করে। ১৯৭১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সেই বৃদ্ধি ছিল বছরে ১.৯ মিলিমিটার।
পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীরকুমার জানা বলেন, ‘‘আমাদের মাথায় রয়েছে গোবর্ধনপুর এলাকার নদীবাঁধের বিষয়টি নিয়ে। ইতিমধ্যে ওই এলাকায় প্রায় ৪০০ মিটারের কাছাকাছি বেহাল বাঁধ কংক্রিটের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া, বাকি যে জায়গাগুলিতে বাঁধ বেহাল, সেখানে টেন্ডার হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ হবে। আমরা সর্বদাই বাঁধগুলির দিকে নজরে রাখি।’’
পাথরপ্রতিমার বিজেপি নেতা অশোক জানা বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার সুন্দরবন মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছিল, তার কাজ কিছুই হয়নি। নদীবাঁধগুলি নামমাত্র মেরামত করা হয়। সকলে কাটমানি খেলে নদীবাঁধ বেশি দিন যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy