Advertisement
Back to
Chhattisgarh Lok Sabha Election Result 2024

মোদী-শাহের মাও-মুক্ত ছত্তীসগঢ়ের প্রতিশ্রুতির কাছে পরাজয় কংগ্রেসের সংরক্ষণের অঙ্গীকারের!

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ৯টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল দু’টি। এ বার ১১-য় ১১ করার লক্ষ্যে মোদী-শাহের প্রতিশ্রুতি ছিল মাও-মুক্ত ছত্তীসগঢ়ের।

Chhattisgarh results

ছত্তীসগঢ়ে হ্যাটট্রিক বিজেপির। —ফাইল চিত্র।

সৈকত দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ২০:১২
Share: Save:

মাত্র পাঁচ মাস আগে বিধানসভা ভোটে অভাবনীয় ফল আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল বিজেপিকে। লোকসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের মুখে মাওবাদী সমস্যার সমাধান করে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শুনেছিলেন ছত্তীসগঢ়বাসী। সঙ্গে ছিল রামমন্দির তৈরির ‘সাফল্য’ এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চড়া দাগের আক্রমণ। পাল্টা জাতপাতের রাজনীতির অভিযোগ করে ঝাড়খণ্ডে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা শুনিয়েছিল কংগ্রেস। কোন দিকে ঝুঁকবেন ছত্তীসগঢ়বাসী, সেই চর্চা চলেছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। ভোটের ফল বলছে, বিজেপি তার লক্ষ্যমাত্রার খানিক দূরে গিয়ে থমকেছে। ১০টি আসনে জয়ী তারা। কংগ্রেস পেয়েছে একটি।

ছত্তীসগঢ়ের ১১টি লোকসভা আসনের জন্য এ বার তিন দফায় ভোট হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও তিন দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছিল। সে বার বিজেপি পেয়েছিল ৯টি আসন। কংগ্রেস দু’টি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি জয়ী হয় ১০টি আসনে। একটি পায় কংগ্রেস। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের ‘অর্জন’ বলতে ছিল একটি আসন। এ বারও বিজেপি জয় পেয়েছে ১০টি আসনে।

দেশ: ৫৪৩৫৪৩

সংখ্যাগরিষ্ঠতা: ২৭২

  • দল
  • আসন
বিজেপি ২৪০
কংগ্রেস ৯৯
এসপি ৩৭
তৃণমূল ২৯
ডিএমকে ২২
টিডিপি ১৬
জেডিইউ ১২
শিবসেনা(উদ্ধব)
শিবসেনা(শিন্ডে)
এনসিপি(শরদ)
এলজেপি
ওয়াইএসআরসিপি
সিপিআইএম
আরজেডি
আপ
জেএমএম
আইইউএমএল
জেডিএস
জেকেএন
সিপিআই
আরএলডি
জেএনপি
সিপিআইএমএল
ভিসিকে
এজিপি
কেসি(এম)
আরএসপি
এনসিপি(অজিত)
ভিওটিপিপি
জ়েডপিএম
অকালি দল
আরএলটিপি
এসকেএম
এমডিএমকে
এএসপিকেআর
এআইএমআইএম
ইউপিপিএল
আপনা দল
এজেএসইউপি
ভারতএপি
এইচএএম (এস)
নির্দল

২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে দেড় দশকের বিজেপি শাসনের ইতি ঘটিয়ে প্রথম বার ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতা দখল করেছিল কংগ্রেস। রাজ্যের ৯০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬৮টিতে জিতেছিল তারা। বিজেপি পায় মাত্র ১৫টি। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে ‘উলটপুরাণ’। ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি জেতে ৫৪টি আসন। কংগ্রেস পায় ৩৫টি। সেই ফলাফল বিজেপি এবং কংগ্রেস, যুযুধান দু’পক্ষকেই বিস্মিত করেছিল। সমস্ত জনমত সমীক্ষা ভুল প্রমাণ করে বিজেপি পেয়েছিল ৪৬.২৭ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ৪২.২৩ শতাংশ। ফারাক মাত্র ৪ শতাংশের। বস্তুত, ছত্তীসগঢ়ে সে পর্যন্ত সেটাই বিজেপির সবচেয়ে বড় জয়। ফলাফলের পর বিজেপি নেতারা বলেছিলেন, মোদী-শাহের পর পর সভাই সাফল্যের অন্যতম কারণ। ছত্তীসগঢ়ে বার বার তাঁদের ছুটে যাওয়া উদ্বুদ্ধ করেছে স্থানীয় পদ্ম নেতৃত্বকে। ভোটবাক্সে তারই ফল মিলেছে।

চলতি লোকসভা ভোটেও মোদী-শাহ ছত্তীসগঢ়ে বেশ কয়েকটি সভা এবং রোড-শো করেছেন। তাঁদের নির্বাচনী ভাষণে মূলত দু’টি বিষয় প্রাধ্যন্য পেয়েছে। এক, মাওবাদী। দুই, কংগ্রেসের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিকে পাল্টা আক্রমণ। কংগ্রেসের প্রচারের ‘থিম’ ছিল সামাজিক সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ। রাহুল গান্ধীদের প্রচারে উঠে এসেছিল ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি। যা সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে-পড়া জনজাতিকে সহায়তা করবে বলে দাবি করেছিলেন তাঁরা। তবে কংগ্রেসের ‘সামাজিক ন্যায়’কে কটাক্ষ করে মোদী-শাহ পাল্টা দাবি করেছিলেন, বিজেপি কখনও চায় না, সংরক্ষণ তুলে দেওয়া হোক। কংগ্রেস যদি তা করতে যায়, তা হলে বিজেপি তার বিরোধিতা করবে। বিধানসভা ভোটের মতো লোকসভা ভোটেও বিজেপি প্রচারে নিয়ে এসেছিল ‘মহাদেব বেটিং অ্যাপ’ কাণ্ডকে।

দেশ: ৫৪৩৫৪৩

সংখ্যাগরিষ্ঠতা: ২৭২

  • দল
  • আসন
বিজেপি ২৪০
কংগ্রেস ৯৯
এসপি ৩৭
তৃণমূল ২৯
ডিএমকে ২২
টিডিপি ১৬
জেডিইউ ১২
শিবসেনা(উদ্ধব)
শিবসেনা(শিন্ডে)
এনসিপি(শরদ)
এলজেপি
ওয়াইএসআরসিপি
সিপিআইএম
আরজেডি
আপ
জেএমএম
আইইউএমএল
জেডিএস
জেকেএন
সিপিআই
আরএলডি
জেএনপি
সিপিআইএমএল
ভিসিকে
এজিপি
কেসি(এম)
আরএসপি
এনসিপি(অজিত)
ভিওটিপিপি
জ়েডপিএম
অকালি দল
আরএলটিপি
এসকেএম
এমডিএমকে
এএসপিকেআর
এআইএমআইএম
ইউপিপিএল
আপনা দল
এজেএসইউপি
ভারতএপি
এইচএএম (এস)
নির্দল

ছত্তীসগঢ়ের দারিদ্র এবং বেকারত্বের মতো সমস্যার দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে দিয়ে মোদী বলেছিলেন, স্বাধীনতা ইস্তক ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড-সহ বিভিন্ন রাজ্যের গরিব মানুষ, বিশেষত জনজাতিকে উপেক্ষা করে এসেছে কংগ্রেস। বস্তারে একটি সভা থেকে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারকে ‘মুসলিম লিগের অনুকরণ’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর শাহ পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ছত্তীসগঢ়ের মানুষ বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার পর বিষ্ণু দেও সাঁই মুখ্যমন্ত্রী হতেই গত চার মাসের মধ্যে ৯০ জন মাওবাদী নিকেশ হয়েছে। ১২৩ জন মাওবাদী গ্রেফতার হয়েছে। ২২৫ জন মাওবাদী অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করেছে।’’ বিজেপির প্রতিশ্রুতি, মোদী সরকার তৃতীয় দফায় মাও-মুক্ত ছত্তীসগঢ় তৈরি করবে। শাহের দাবি, কংগ্রেসের ‘বিমারু’ ছত্তীসগঢ় অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানা খেকে ‘আবাদি ভূমিতে’ পরিণত হতে শুরু করেছে। সেই উন্নয়নযজ্ঞ আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে মোদী সরকার। সেই সঙ্গে ভোটের আগে বস্তার-সহ ছত্তীসগঢ়ের একের পর এক মাও উপদ্রুত এলাকায় ‘এনকাউন্টার’-এর কথা ফলাও করে প্রচার করেছে বিজেপি।

বস্তুত, ২০২৩ সালে যেখানে মাওবাদী হত্যার সংখ্যা ছিল ২২, চলতি বছরের মে পর্যন্ত সেই সংখ্যাই দাঁড়িয়েছে ১১৬-তে। যদিও ভুয়ো ‘এনকাউন্টার’-এর অভিযোগ তুলে ভোটের আগে বস্তারে বন্‌ধ ডেকেছিলেন মাওবাদীরা। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়েছিল ভোটের দিন। নির্বাচন প্রক্রিয়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটেছে। বস্তার গত বার কংগ্রেসের জেতা আসন। তবে বিদায়ী সাংসদ দীপক বৈজকে টিকিট না দিয়ে সেখানে এ বার কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল কওয়াসি লখমাকে। ছ’বারের কংগ্রেস বিধায়ক তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা মহেশ কশ্যপকে। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন মহেশ।

রায়পুর লোকসভা আসনেও এ বার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। বিজেপি প্রার্থী করেছিল ব্রিজমোহন আগরওয়ালকে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ব্রিজমোহন ছত্তীসগঢ়ের রাজনীতিতে পরিচিত নাম। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল প্রাক্তন বিধায়ক বিকাশ উপাধ্যায়কে। বিজেপি প্রার্থী বিপুল ভোটে ওই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। ছত্তীসগঢ় রাজ্যের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আসন রাজনন্দগাওঁ। বিদায়ী সাংসদ সন্তোষ পাণ্ডের উপর আস্থা রেখেছিল বিজেপি। আর কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলকে। পরাজিত হয়েছেন তিনি। সরগুজা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস প্রার্থী শশী সিংহ কোরামকে প্রায় ৭১ হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন চিন্তামণি মহারাজ। গত বিধানসভা ভোটের সময় চিন্তামণি কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

ছত্তীসগঢ়ে আরও একটি উল্লেখযোগ্য আসন কোরবা। ওই কেন্দ্রে বিজেপি টিকিট দিয়েছিল তাদের প্রভাবশালী মহিলা মুখ, প্রাক্তন সাংসদ সরোজ পাণ্ডেকে। তাঁর লড়াই ছিল কংগ্রেসের বিদায়ী সাংসদ জোৎস্না মোহন্তের সঙ্গে। জ্যোৎস্না জয়ী হয়েছেন ওই কেন্দ্রে। দুর্গ লোকসভায় এ বার নতুন মুখকে লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়েছিল ‘হাত’ শিবির। রাজেন্দ্র সাউয়ের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছিল বিজয় বঘেলকে। তিনিও জয়ী হয়েছেন। বিলাসপুর আসনে কংগ্রেসের দেবেন্দ্র যাদবের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল বিজেপির টোখন সাউয়ের। শেষ হাসি হাসেন টোখনই।

জঞ্জগির-চম্পা ছত্তীসগঢ়ের একটি মাত্র ‘এসটি’ সংরক্ষিত আসন। সেখানেও বিজেপির কমলেশ জংড়ে কংগ্রেস প্রার্থী শিবকুমার দেহরিয়াকে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন। ফলাফল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু বলেন, ‘‘তৃতীয় বার ছত্তীসগঢ়ের মানুষের আশীর্বাদ পেল এনডিএ। এ বার আমরা হ্যাটট্রিক করলাম। অন্য দিকে, নরেন্দ্র মোদীও তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী। আনন্দ তো হবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Chhattisgarh BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE