দেবের নামে পোস্টার বিজেপি বিধায়কের। ঘাটালে। —নিজস্ব চিত্র।
ভয় পেয়েছেন দেব। বলছে বিজেপি। মুখে নয়। রীতিমতো পোস্টার সেঁটে। দেব নিজে কিছু বলছেন না। তবে বলছেন তাঁর দলের নেতারা। দাবি করছেন, দেব দলের সঙ্গেই আছেন। যাঁর সঙ্গে তাঁর ‘শীতল’ সম্পর্ক সেই শঙ্কর দোলই হঠাৎ করেই দেবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। ইঙ্গিত, জল্পনার উপাদানে ভরপুর ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেবের (দীপক অধিকারী) একযোগে তিনটি পদ থেকে পদত্যাগের পর ২৪ ঘণ্টা।
শনিবার বিকেলের দিকে আচমকাই সাংসদ সুবাদে পাওয়া একযোগে তিনটি পদ থেকে পদত্যাগ করেছে দেব। ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান এবং বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দেব। পদত্যাগের খবর চাউর হতেই শোরগোল পড়ে যায় ঘাটাল জুড়ে। তৃণমূলের অন্দরেও চলে তুমুল আলোচনা। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের আগে দেবের ওই ইস্তফার জেরে তিনি আর ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন নাকি নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন তা নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া চলছে সব মহলে। এখনও পর্যন্ত দেবের ইস্তফা নিয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রবিবার ফালাকাটায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শুধু বলেছেন, ‘‘দেব আমাদের সঙ্গে ছিল এবং আছে।’’ সাংসদ ঘনিষ্ঠেরাই বলেছেন ব্যক্তিগত কারণেই এই পদত্যাগ। সাংসদ নিজে কিছু বলেননি। এই আবহে দুর্নীতির প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছে বিজেপি।
এ দিন সকাল থেকেই ঘাটাল পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড-সহ কলেজ মোড় এলাকায় পোস্টার চোখে পড়ে। সেখানে সরাসরি বিজেপির ঘাটাল বিধানসভার তরফে বিধায়ক কর্মীদের নিয়ে পোস্টার সাঁটে। সেখানে লেখা, ‘দুর্নীতির ঢাকতে বিজেপির ভয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন দেব’। এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন সাংসদ পথ থেকেও ইস্তফা দেবেন দেব। সবে তো সকাল। দুপুর এখনও বাকি।’’ একই সুরে বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটও বলেছেন, “দুর্নীতির অভিযোগেই ঘাটালের সাংসদকে সিবিআই ডেকেছিল। আবারও ডাকবে। আর সেই কারণেই দুর্নীতি ঢাকতেই বিজেপির ভয়ে পদত্যাগ করেছেন সাংসদ।” এ ব্যাপারে তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান শঙ্কর দোলই বলেন, “দেব একজন ভাল মানুষ। এমন কুৎসা তৃণমূল মেনে নেবে না। প্রয়োজনে বিজেপির অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা হবে।” শঙ্করের সংযোজন, “দেবের মত একজন ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক আবার পোস্টার দিবে কী! বিজেপির ওই বিধায়ক তো নিজে একজন বড় দুর্নীতিবাজ। ধাপ্পাবাজও। কর্মীরা সব ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছে।”
বিজেপির ওই পোস্টার তার সঙ্গে দেবের ওই ইস্তফার বিষয়টি ঘাটাল রাজনীতিতে বহুল চর্চিত প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের অন্দরে কর্মীদের অনেকেই বলছেন, গত এক বছর ধরে ঘাটালের সঙ্গে দেবের ‘আত্মীক’ সম্পর্কে ভাটা পড়েছিল। দেবের সঙ্গে নাকি শীর্ষ স্তরের নেতৃত্বদের সঙ্গে হাল্কা দূরত্বও তৈরি হয়েছে। ইদানীং নানা স্তরে সাংসদ অনুগামীদের প্রভাবও কমছিল। হয়তো সে কারণেই ইস্তফা। শাসক শিবিরের অন্য একটি অংশ আবার বিজেপির করা সেই দুর্নীতির অভিযোগকে পরোক্ষ ভাবে সিলমোহর দিয়েছে। তাদের মতে, সাংসদ নয়, তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে নিয়োগ সংক্রান্ত নানা অভিযোগ নাকি পুলিশের সর্বোচ্চ মহলে জমা পড়েছে। একই অভিযোগ তৃণমূলের শীর্ষ মহলেও জমা পড়েছে। তবে কোথায়, কখন নিয়োগ, তা এখনও সামনে না এলেও তার তদন্ত নাকি হওয়ার কথা। তৃণমূলের একাংশ এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অনুগামীদের একাংশ যদি তাঁর নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি করে থাকেন সে ক্ষেত্রে নামের মালিক দায় এড়াতে পারেন না। অন্তত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আর্থিক ও নিয়োগ দুর্নীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত সব পক্ষেরই। অভিযোগ হওয়ার আগেই রাজনৈতিক ভাবে হস্তক্ষেপ করলে হয়তো সমস্যা এড়ানো সম্ভব হত।
কালীঘাটের বৈঠকে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে দেবের উচ্চ প্রশংসার পরই দেব যে ফের ঘাটালে প্রার্থী হচ্ছেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ পদত্যাগে নানা কানাঘুষো ভাসছে। তাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে বিজেপির পোস্টার। তৃণমূলের জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, “বিজেপি একটা মিথ্যা-বুজরুকির দল। তারা কোথায় কী পোস্টার দিল, ঘাটালের মানুষ চেয়েও দেখবেন না। দেব সবার প্রিয়।” সাংসদ অনুগামীদের একাংশ অবশ্য দাবি, পদ থেকে ইস্তফা মানেই প্রার্থিপদের লড়াই থেকে সরে যাওয়া নয়।
গেরুয়া শিবির দুর্নীতি, ভয়ের সঙ্গে জড়াতে চাইছে দেবকে। তৃণমূল সামনে রাখছে ‘ভাল মানুষ’ দেবকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy