কালনায় গান গেয়ে প্রচার বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
কয়েক দিন আগে বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পোস্টার সাঁটা হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ায় ইংরেজিতে গান গেয়েছিলেন অসীম। এ বার তাঁকে নিয়ে পোস্টার পড়ল কালনা শহরের নানা এলাকায়। ‘রাষ্ট্রীয়বাদী হিন্দু সংগঠন’ নামাঙ্কিত ওই পোস্টারগুলিতে অসীমের উদ্দেশে ‘দূর হটো’ বার্তা দিয়ে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী বদলের দাবি তোলা হয়েছে। বিজেপি অথবা অসীম, কেউই অবশ্য বিষয়টিকে বাড়তি গুরুত্ব দেননি। উল্টে, বিজেপির সিদ্ধান্ত, প্রত্যেক পঞ্চায়েতে প্রার্থীর গলায় কবিগান শুনিয়ে ভোট প্রার্থনা করা হবে। দলের দাবি, স্বল্প দিনের প্রচারে লক্ষ্য করা গিয়েছে, চিরাচরিত প্রথা ভেঙে হেলে-দুলে, কবিগানে বিরোধীদের মিঠেকড়া আক্রমণ করার যে কৌশল অসীম নিয়েছেন, তাতে সাড়া মিলছে ঢের বেশি।
আগে মেমারি ও পূর্বস্থলী২ ব্লকে অসীমের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছিল। শনিবার সকাল হতেই কালনা শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে, আদালত চত্বর-সহ বিভিন্ন জায়গায় লাল, সবুজ এবং হলুদ কালিতে লেখা বেশ কিছু পোস্টার নজরে আসে। তাতে লেখে ‘ভারতীয় জনতা পার্টির পূর্ব বর্ধমান জেলার ৩৮ লোকসভা কেন্দ্রের বহিরাগত প্রার্থী অসীম সরকার দূর হটো। তোমায় আমরা মানছি না মানব না।’ পোস্টারের নীচের অংশে লেখা রাষ্ট্রীয়বাদী হিন্দু সংগঠন। অসীমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না, যাঁরা এমন পোস্টার মারছেন, তারা বিজেপির লোক।’’ বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওই নামে দলের কোনও সংগঠন নেই। এর পিছনে রয়েছে রাজ্যের শাসক দল। আমাদের প্রার্থীর জনপ্রিয়তা দেখে তারা রাতের অন্ধকারে এমন পোস্টার মেরে যাচ্ছে।’’ তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র তথা কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের কটাক্ষ, ‘‘আমাদের কর্মীদের খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে এই সব পোস্টার মারবে। বিজেপির গোষ্ঠী কলহের কথা এলাকার সকলের জানা। কোন্দল আড়াল করতে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে বিজেপি।’’ তবে অসীমের প্রার্থিপদ নিয়ে বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন রয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। এক বিজেপি নেতার দাবি, ‘‘দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে প্রার্থী বদলের আবেদন করা হয়েছে। দল ব্যবস্থা না নিলে নির্দল হিসেবে এক জন মনোনয়ন জমা দেবেন।’’
বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে সাতটি বিধানসভা। রয়েছে ৮০টি পঞ্চায়েত। দিনে তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রার্থীকে নিয়ে প্রচার চলছে। সকালে বিভিন্ন মন্দিরে যাচ্ছেন অসীম। প্রচার করছেন বাজার এলাকায়ও। বিকেল হলে বদলে যাচ্ছে প্রচারের কৌশল। ছোট পথসভায় মাইক হাতে গান গাইতে দেখা যাচ্ছে কবিগানের শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করা অসীমকে। তাঁর সঙ্গে থাকছে হারমোনিয়াম, ঢোল। থাকছেন বাদকেরাও। গেরুয়া পোশাক পরে হেলে-দুলে কখনও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃমমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে বিঁধছেন, কখনও বিদ্রুপ করছেন গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়া বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল এবং রেশন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও।
অসীম বলেন, ‘‘ভোটপ্রচারে গানকেই অস্ত্র করেছি। বেশ কিছু নতুন গান শুনবেন ভোটাররা।’’ গোপাল জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত প্রার্থী এ ধরনের ছ’টি সভা করেছেন। প্রতিটিতেই পাঁচশোর বেশি মানুষ ছিলেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে এই ধরনের সভা হবে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘প্রার্থী হয়ে উনি প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে একটি গান লিখে নিজেই সুর দেন। গানটি জনপ্রিয় হয়েছে। তার পরেই কৌশল বদল করা হয়।’’
তৃণমূল অবশ্য বিষয়টিকে পাত্তা দিতে চায়নি। দেবপ্রসাদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিজেপির না আছে সংগঠন, না আছে মানুষের সমর্থন। ওরা কী ভাবে প্রচার করছে, তা নিয়ে ভাবছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy