এই গরমে চিকিৎসকেরা জোর দিচ্ছেন সাবধানতা ও সতর্কতায়। — প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
চৈত্রের শেষে তীব্র তাপে নাজেহাল বঙ্গবাসী। বৈশাখে তা আরও বাড়বে বলেই পূর্বাভাস আবহাওয়া দফতরের। এ দিকে, ডান-বাম সব দলই প্রচার শুরু করেছে লোকসভা ভোটের জন্য। তীব্র গরমে প্রচার চালাতে গিয়ে ঘেমেনেয়ে যাচ্ছেন প্রার্থী থেকে দলীয় কর্মীরা। বেশ কিছু জায়গায় মিছিলে হাঁটতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরও মিলছে। শুক্রবার হুগলিতে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রচারে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক পুরপ্রধান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকেরা জোর দিচ্ছেন সাবধানতা ও সতর্কতায়। বলছেন, ‘‘বিপক্ষের সঙ্গে লড়াই থাকুক, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে নয়। ঝোঁকের বশে এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে গরমের কাছে বোল্ড আউট হতে হয়।’’
তীব্র গরমে প্রচার, ভোটের দিন বা গণনার সময়ে প্রার্থী থেকে কর্মী বা ভোটার, যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের চিকিৎসায় যাতে কোনও খামতি না থাকে, সে দিকে জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। গরমের জেরে অসুস্থতা সামাল দিতে সব রাজ্যকে প্রস্তুত থাকতে ইতিমধ্যেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। সেই মতো সমস্ত রাজ্যের সমস্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা স্তরের হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য ভবনের আগাম অনুমতি ছাড়া কোনও ছুটি নেওয়া যাবে না। তবে, প্রত্যেক প্রার্থীকে নিজের এবং কর্মীদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে বলেই দাবি চিকিৎসকদের।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, খনিজ পদার্থ রয়েছে, এমন তরল বার বার পান করতে হবে। ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তার ওষুধ যেন কোনও ভাবেই বন্ধ না হয়। তিনি বলেন, ‘‘বেশির ভাগ প্রার্থীই সাধারণত গাড়িতে অভ্যস্ত। কিন্তু এখন প্রত্যেককে তাঁর নিজের ক্ষমতা বুঝে হাঁটতে হবে। মনে রাখতে হবে, অকারণ পরিশ্রমের একটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে।’’ প্রচারের ফাঁকে দুপুরে কর্মীদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের হিড়িকেও সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। জানাচ্ছেন, তীব্র গরমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাতে সহজেই ভাইরাস ও ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণে পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, ‘‘তেল-মশলাযুক্ত খাবারের বদলে সহজে হজম হবে, এমন খাবার খেতে হবে। সম্ভব হলে বাড়ি থেকে জল নিয়ে বেরোনো ভাল। কারণ, বার বার জলপান করতেই হবে। আর, কোনও ভাবেই রাস্তার কাটা ফল চলবে না।’’
চিকিৎসকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, জনপ্রিয়তা বাড়াতে গিয়ে অনেক প্রার্থীই এমন কিছু কাজ করেন, যাতে শরীর খারাপের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সকাল ৯টার পরে কর্মীদের রাস্তায় ঘুরতে নিষেধ করেছেন বলে দাবি ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী, মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের। তিনি বলেন, ‘‘সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঘুরে প্রচার বন্ধ। তার পরে ঘরোয়া বৈঠক। বিকেলে রোদ কমলে আবার বেরোচ্ছি।’’ সকালে ছাতুর শরবত দিয়ে শুরু করে দুপুরে একটি রুটি, আনাজের তরকারি আর সারা দিনে বেশি করে নুন-চিনির শরবত ও ডাবের জল খাচ্ছেন তিনি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কিডনির সমস্যা না থাকলে সারা দিনে অন্তত তিন লিটার জল পান করতেই হবে। কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জল পান করতে হবে। দমদমের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, সকালের দিকে রুটিন করে কর্মীদের বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সকালে দু’টি রুটি ও টকদই খেয়ে বেরোচ্ছি। দুপুরে ভাত, টক ডাল ও পাতলা মাছের ঝোল খাচ্ছি। আর গাড়িতে মুড়ি রেখে দিচ্ছি।’’
বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষ জানান, তাঁর সঙ্গেই নুন, চিনি, লেবু থাকছে। শরবত বানিয়ে খাচ্ছেন। রোদে প্রচার করে শরীরে যাতে জলশূন্যতা তৈরি না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সশরীরে প্রচারের থেকে ওই সব মাধ্যমে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন। আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে নির্বাচন কমিশনেরও এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy