Advertisement
Back to
Amit Shah-Mamata Banerjee

তোষণের রাজনীতি করছেন মুখ্যমন্ত্রী! ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ নিয়ে বিতর্কে মমতাকে নিশানা শাহের

লোকসভা ভোটের প্রচারে গত কয়েক দিন ধরেই রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলির সাধু-সন্তদের একাংশকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাগ্‌যুদ্ধ সপ্তমে।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত শাহ (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমিত শাহ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৪ ২২:১৭
Share: Save:

লোকসভা ভোটের প্রচারে গত কয়েক দিন ধরেই রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলির সাধু-সন্তদের একাংশকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাগ্‌যুদ্ধ সপ্তমে। সেই বিতর্কে এ বার মমতাকে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর অভিযোগ, শুধুমাত্র তোষণের রাজনীতি করতেই অযৌক্তিক অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শাহের বক্তব্যের জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি তৃণমূল শ্রদ্ধাশীল। কোনও কোনও ব্যক্তি সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে রাজনীতি করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদেরই সমালোচনা করেছেন। কোনও প্রতিষ্ঠানের নয়। বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করতেই এ সব কথা বলছে।’’

গত শনিবার আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের কামারপুকুরে সভা করতে গিয়ে মমতা বহরমপুরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের কার্তিক মহারাজকে নিশানা করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, কার্তিক মহারাজ বুথে তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেবেন না বলেছিলেন! আসানসোলের একটি রামকৃষ্ণ মিশন এবং ইস্কনের ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর অভিযোগ ছিল, দিল্লির নির্দেশে ওই প্রতিষ্ঠানগুলির তরফে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার প্রচার করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ভোটের প্রচারে হাতিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। নির্বাচনী সভায় তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূল মানে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ভাই-ভাইপোতন্ত্র! হিন্দু সমাজকে তারা লাগাতার অপমান করছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় দেশ ও গোটা বিশ্বের মানবতাপ্রেমী মানুষ দুঃখ পেয়েছেন। তৃণমূলের এক জন বিধায়ক বলেছিলেন, হিন্দুদের জলে ফেলে দেওয়া হবে। সন্তেরা বলেছেন, এই রকম কথা বলবেন না। তখন মুখ্যমন্ত্রী সীমা ছাড়িয়েছেন! রামকৃষ্ণ মিশন, ইস্কন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আক্রমণ করছেন। গোটা হিন্দু সমাজকে অপমান করেছেন।’’ ‘তোষণের রাজনীতি’র চেনা অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘নিজের বিধায়ককে একটা শব্দও বলছেন না। শাহজাহানকে বাঁচাতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন! ভোটব্যাঙ্কের সামনে নতজানু হয়ে আছে তৃণমূলের সরকার। এরা একটা ভোট পাওয়ারও যোগ্য নয়!’’

শাহেরও বক্তব্য, ‘‘ভারত সেবাশ্রম সংঘ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের মতো স্বনামধন্য সমাজকল্যাণ সংস্থার বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এই অযৌক্তিক অভিযোগ শুধুমাত্র ভোটারদের একটি অংশকে সন্তুষ্ট করতে এবং কিছু ভোট পাওয়ার জন্য।’’ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে শাহ লিখেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানা উচিত যে, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ না থাকলে পশ্চিমবঙ্গ আজ ভারতের না হয়ে বাংলাদেশের অংশ হত।’’

মমতা যা অভিযোগ করেছেন, তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কার্তিক মহারাজ। তিনি বলেন, “আমি হিন্দু সন্ন্যাসী, কোনও রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারি করি না। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রমাণ দিতে পারবেন? এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। এর বিরুদ্ধে আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। সঙ্ঘকে যে ভাবে বদনাম করছেন, তার প্রতিবাদ হবে।” মমতার মন্তব্য নিয়ে বিতর্কে তৃণমূল অবশ্য শনিবারই জানিয়েছিল, কোনও প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে কিছু বলা হয়নি। ওই সব প্রতিষ্ঠানের ‘ব্যক্তিবিশেষ’ সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তৃণমূলনেত্রী রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম বা ইস্কন সম্পর্কে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ ভাবে ‘রাজনীতি’ করার বা রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার কথা বলেননি। বলেছিলেন ওই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কয়েক জন সাধু-সন্ন্যাসীর কথা। কিন্তু বিতর্ক থামেনি। মমতাকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন কার্তিক মহারাজ। জানিয়েছেন, ক্ষমা না-চাইলে মানহানির মামলা করবেন।

কিন্তু মমতা তাঁর আগের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। রবিবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মঞ্চ থেকে তাঁকে নিশানা করেছিলেন মোদী। সোমবার সেই বিষ্ণুপুরে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাব দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে নই। কেন আমি একটা ইনস্টিটিউশনের (প্রতিষ্ঠানের) বিরুদ্ধে হব? আর আমি অসম্মানই বা কেন করব? কয়েক দিন আগেও মহারাজ অসুস্থ ছিলেন। আমি তো তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। গঙ্গাসাগরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের অফিস আছে। আশ্রম আছে। ওরা এত ভাল! মানুষের কাজ করে, ওরা সত্যি আমাকে ভালবাসে। সেটা নয়। আমি বলেছি দু’-এক জনের কথা। আমি একটি লোকের নাম করে বলেছিলাম। তাঁর নাম কার্তিক মহারাজ। তিনি আমাদের এজেন্ট বসতে দেননি। ভোটের দু’দিন আগে মুর্শিদাবাদে যে অশান্তি হয়েছিল, তার হোতা ছিলেন উনিই। আমি সেই জন্য বলেছিলাম। এবং বলে যাবও।’’

কার্তিক মহারাজকে চ্যালেঞ্জ করেই মমতা বলেছেন, ‘‘ওখানে কিছু লোককে (উনি) খেপিয়েছেন, যাঁরা ছানার ব্যবসায়ী। খবর আমিও রাখি। এলাকায় এলাকায় গিয়ে ধর্মের নামে আপনি বিজেপি করে বেড়ান। আমি বলছি, আপনি করুন! কিন্তু বিজেপির চিহ্নটা বুকে লাগিয়ে রেখে করুন। লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? আমি যেটা বলি, আমি প্রমাণ ছাড়া বলি না।’’ আত্মপক্ষ সমর্থনে জনতার উদ্দেশে মমতা প্রশ্ন করেন, ‘‘আমাদের রাজ্য বাংলা। আর সেখানে তৃণমূলের এজেন্ট বসবে না! আর ভোটের দু’দিন আগে দাঙ্গা বাধিয়ে দেবে! তাদের আমি ছেড়ে দেব? আপনারা কী মনে করেন? ছেড়ে দেওয়া উচিত?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy