মাটির বাড়িতেই থাকেন বৃদ্ধ দম্পতি। নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টি হলেই ত্রিপলের ছিদ্র দিয়ে জল ঢুকে ঘর ভাসায়। শীতের রাতে হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপে। বছরের পর বছর এ ভাবেই জীর্ণ মাটির ঘরে দিন কাটে মানকরের মল্লিকপাড়ার বৃদ্ধ দম্পতি রবিন সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী সর্বমঙ্গলার। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বার বার একটি ঘর করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েও সাড়া মেলেনি। ফের একটি ভোট আসছে। তাঁদের আশা, এ বার নিশ্চয়ই পাকা ঘর পাবেন তাঁরা। যদিও তাঁদের আশার আলো দেখাতে পারেননি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।
বৃদ্ধ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন ঘর দেবেন বলে শুনছি। তাই হাল ফিরবে, এই আশায় রয়েছি।” মানকর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের তন্ময় ঘোষের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনার বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকের বাড়ি তৈরি করা যাচ্ছে না।
প্রায় ৩৬ বছর ধরে মানকরের মল্লিকপাড়ায় একটি পুকুরের ধারে মাটির ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে বাস করছেন রবিনবাবু। তিনি জানান, তাঁদের দুই ছেলের কেউই এখানে থাকেন না। খোঁজখবরও রাখেন না বাবা-মায়ের। শারীরিক ভাবে অক্ষম রবিন কাজ করতে পারেন না। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি বামকর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে এক বার মার খেয়ে আহত হয়েছিলেন তিনি। তখনই তাঁর একটি পা অক্ষম হয়ে যায় তাঁর। কাজ করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। এই অবস্থায় সংসার চালান তাঁর স্ত্রী। বৃদ্ধা সর্বমঙ্গলা এখন বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। তাতে কোনও রকমে চলে সংসার। সর্বমঙ্গলা বলেন, ‘‘বছর দুই আগে (তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানকরে এসেছিলেন। সে সময়ে প্রশাসনের তরফে বাড়িতে ত্রিপল ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছিল। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল নতুন বাড়িরও।’’ কিন্তু আজও সেই কাজ হয়নি, আক্ষেপ বৃদ্ধার।
খড় কিনতে না পারায় ঘরের ছাউনিটুকুর ব্যবস্থাও করতে পারেননি বৃদ্ধ দম্পতি। প্রশাসনের দেওয়া ত্রিপল টাঙিয়ে তার নীচে বাস করেন তাঁরা। সেই ত্রিপলে রয়েছে অজস্র ছিত্র। রবিনের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের খোঁজখবর কেউ রাখেন না। মৃত্যুর আগে নতুন বাড়ি পাব কি না জানি না। আবাস যোজনায় একটি ঘরের জন্য বারবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু মেলেনি। এখন রাজ্য সরকার নতুন ঘর তৈরির আশ্বাস দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে তো কিছুই পেলাম না। রাজ্য সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।’’
উপপ্রধানের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনার বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই এই সমস্যা। রাজ্য সরকারের তরফে ঘর দেওয়া শুরু হলে আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।’’ বিজেপির বর্ধমান (সদর) সহ-সভাপতি রমন শর্মার কটাক্ষ, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। ওই পঞ্চায়েতও তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে। কেন ওই দম্পতি এখনও আবাস যোজনায় ঘর পেলেন না, তার উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব পঞ্চায়েতেরই। তৃণমূল স্বজনপোষণেই ব্যস্ত। তাই যোগ্য মানুষ আবাস যোজনার
বাড়ি পাননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy