অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাতে থাকবে খাতা-কলম। সাধারণ মানুষ কোনও সমস্যার কথা বললেই তা লিখে রাখতে হবে সেই খাতায়। যাতে ভোটের পর ধরে ধরে সেই সব সমস্যার সমাধান করা যায়। ঝাড়গ্রামে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই খবর তৃণমূল সূত্রে। সেই সঙ্গে দলীয় প্রার্থী এবং নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কী বলবেন, কোন বিষয়গুলিতে বেশি জোর দেবেন, তা-ও বাতলে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
গত লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসন দখল করে নিয়েছিল বিজেপি। দলীয় সূত্রে খবর, সেই আসন পুনরুদ্ধার করতে গেলে যে আগে অন্দরের দ্বন্দ্ব মেটানো জরুরি এবং দলের সকলের সমন্বয় রেখে কাজ করা উচিত, তা বৈঠকে বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। সেনাপতির সঙ্গে বৈঠকের আগে মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার দলীয় নির্বাচনী সংসদীয় কমিটির হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল দলের অন্দরে। অভিষেকের ঘণ্টাদুয়েকের বৈঠকের পরে বিরবাহাও লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জেতার লক্ষ্যে সকলকে নিয়ে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বার বার বলেছেন, নিজেদের মধ্যে যেন কোনও দ্বন্দ্ব না থাকে।’’
বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের হেলিপ্যাড সংলগ্ন একটি বেসরকারি রিসর্টে নির্বাচনী কমিটি-সহ আরও কয়েক জন আমন্ত্রিত নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন অভিষেক। দুপুর ২টো বেজে ১০ মিনিট নাগাদ তিনি রিসর্টে পৌঁছন। তাঁর আসার আগেই ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের আওতাধীন তিন জেলার সাতটি বিধানসভার দলীয় নেতৃত্ব হাজির হয়ে গিয়েছিলেন সেখানে। তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠক শুরু হয় ২টো বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ। তা চলে বিকেল প্রায় ৪টে ৪০ পর্যন্ত। বৈঠকে বার বার দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু ও নয়াগ্রাম ব্লকের একটা সময়ের দাপুটে এক তৃণমূল নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রায়ই জেলায় দলের অন্দরে আলোচনা হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার আলাদা ভাবে ওই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়েও কথা বলেছেন অভিষেক।
ঝাড়গ্রাম আসনে এ বার সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সরেনকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। কালীপদ জানান, প্রচারে বেরিয়ে কী কী সমস্যায় পড়েছেন, বৈঠকে তা অভিষেককে জানিয়েছিলেন তিনি। সেনাপতি তাঁকে জানিয়েছেন, প্রচারে মানুষ যে সব সমস্যার কথা তাঁকে বলবেন, তা খাতায় লিখে রাখতে হবে। বৈঠকের পর কালীপদ বলেন, ‘‘সবাইকে নিয়ে চলার কথা বলে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারে গিয়ে যে সব অসুবিধা হচ্ছিল, তা জানিয়েছি। মানুষ উন্নয়ন নিয়ে যে সব অভিযোগ করছেন, নোট নিয়ে রাখতে বলেছেন।’’
দলীয় সূত্রে খবর, কী ভাবে সমন্বয় বজায় রেখে প্রচারে যেতে হবে, তা বলে দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কড়া নির্দেশ, যে অঞ্চলে প্রার্থীর প্রচার হবে, সেই এলাকার বুথ, অঞ্চল ও ব্লক নেতৃত্বকে আগেভাগে জানিয়ে দিতে হবে। তাঁদেরও প্রচারের অংশ করতে হবে। ঝাড়গ্রাম লোকসভায় নির্বাচন পরিচালনার জন্য গত ১৩ মার্চ ৪২ জনের নির্বাচনী কমিটি গঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান হন দুলাল। চার দিনের মধ্যে কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৭ করা হয়। ২০ মার্চ ‘ঝাড়গ্রাম পি সি ইলেকশন কমিটি ২০২৪’ নামে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপটি তৈরি করেন দুলাল। নির্বাচনী প্রচার কৌশল কী হবে, কবে, কোথায়, কখন প্রচারে কোন কোন নেতা-নেত্রীকে কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, সে সব আলোচনার জন্য এই গ্রুপ। কিন্তু জেলা নেতাদের একাংশের অনুযোগ, গোড়া থেকেই তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থার তরফে প্রার্থীর প্রচার কর্মসূচি স্থির করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা নেতারা তা জানতেও পারছেন না। বরং, পরামর্শদাতা সংস্থার তৈরি মিডিয়া হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে মাঝেমধ্যে আগাম প্রচারসূচি পোস্ট করা হচ্ছে। দলীয় সূত্রের দাবি, এতে ভীষণই অসন্তুষ্ট হন বিরবাহা। রবিবার তিনি গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রয়াত ভাইয়ের পারলৌকিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন দুলাল। বিষয়টি তাঁর নজরে আসতেই বুধবার মন্ত্রীকে ফের গ্রুপে যুক্ত করেন তিনি।
যদিও অসন্তোষের কথা বিরবাহা প্রকাশ্যে কখনওই স্বীকার করেননি। তিনি শুধু বলছেন, ‘‘গ্রুপে এত ছবি পোস্ট করা হচ্ছিল যে, আমার মোবাইল ঠিক মতো কাজ করছিল না। গ্রুপে তো অন্য কিছু দরকারি পোস্ট হচ্ছিল না। তাই গ্রুপ ছেড়েছিলাম। জেলা সভাপতি বুধবার ফের আমাকে যুক্ত করেছেন দেখলাম।’’ তবে বৃহস্পতিবার অভিষেকের বৈঠকের পর তিনিও লড়াইয়ে থাকার বার্তা দেওয়ায় খানিক স্বস্তিতে দলের জেলা নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy