(বাঁ দিকে) পোশাকবিধির প্রতিবাদে ইরানের রাস্তায় অন্তর্বাস পরে হাঁটা সেই তরুণী। ইরানে পোশাকবিধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
ইরানের কড়া পোশাকবিধির প্রতিবাদে শুধু অন্তর্বাস পরে নেমে পড়েছিলেন প্রকাশ্য রাস্তায়। কে তিনি? গ্রেফতারির পরেই বা কোথায় রয়েছেন সেই তরুণী? সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর। কী রয়েছে তাঁর ভাগ্যে, তা এখনও অজানা।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণী তেহরানের ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তবে তাঁর নাম পরিচয় এখনও অধরাই। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই তরুণী মানসিক ভাবে ‘অসুস্থ’ ছিলেন। অভিযোগ, সম্প্রতি নানা কারণে মানসিক চাপেও ছিলেন ওই তরুণী। সম্ভবত তার জেরেই এই কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছেন তিনি। যদিও ইতিমধ্যেই তরুণীর সাহসের প্রশংসা শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মহলে। এমনকি, তাঁকে নারীবাদী আন্দোলনের নয়া ‘মুখ’ হিসাবেও তকমা দিয়ে ফেলেছেন কেউ কেউ!
অন্য দিকে, তরুণীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিবাদ। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। ইরানের আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়ে তরুণীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তরুণীর উপর যাতে কোনও রকম অত্যাচার না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, তরুণীকে গ্রেফতারের সময়ে মারধর এবং তাঁর উপর যৌন হেনস্থার কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। সেই অভিযোগগুলির ভিত্তিতেও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে অ্যামনেস্টি। ইরানে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি মাই সাটো বলেছেন, ‘‘ঘটনাটির দিকে আমরাও নজর রেখেছি। বিশেষত, ইরান সরকারের তরফে কী পদক্ষেপ করা হয়, কী বিবৃতি আসে, তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’
সম্প্রতি ইরানের পোশাকবিধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় পোশাক খুলে ফেলেছিলেন ওই তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হেঁটেছিলেন শুধু অন্তর্বাস পরেই। ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই সেই তরুণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর থেকেই আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি তাঁর। তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, গ্রেফতারির পর কোথায় রাখা হয়েছে তরুণীকে, তিনি কী অবস্থায় রয়েছেন— এখনও পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি। এই ঘটনা বিশ্ববাসীকে আরও এক বার মনে করিয়ে দিচ্ছে মাহসা আমিনির কথা। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হিজাববিধি না মানার ‘অপরাধে’ ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল নীতিপুলিশ। সেই গ্রেফতারির পর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই ঘটনার পর বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের ঢেউ। হিজাব ফতোয়া উড়িয়ে, চুল কেটে প্রতিবাদে শামিল হন ইরানের মেয়েরা। যদিও সেই প্রতিবাদ কড়া হাতে দমন করেছিল ইরান-প্রশাসন। ধর্মীয় ফতোয়া অবমাননা করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল বহু বিক্ষোভকারীর। সদ্য সেই ঘটনার দু’বছর পেরিয়েছে। এরই মধ্যে তেহরানের ঘটনায় ইরানে নারী স্বাধীনতা নিয়ে আবারও উঠল প্রতিবাদের ঢেউ।
প্রসঙ্গত, ইরানে মহিলাদের জন্য কড়া পোশাকবিধি রয়েছে। সে দেশে মহিলাদের আবশ্যিক ভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাবে। রাস্তায় বার হলে সবসময় ঢিলেঢালা পোশাক পরার নিয়ম। ইরানের প্রাক্তন ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনির পর বর্তমান ধর্মগুরু আলি খামেনেইও এই ফতোয়া জারি রেখেছেন। তা ভাঙলে কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে সে দেশে।