Syria Civil War

তিন সন্তানকে নিয়ে আগেই রাশিয়ায় পালিয়ে গিয়েছেন আসাদ-পত্নী আসমা?

লন্ডনের কিংস কলেজে ফরাসি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন আসমা। সে সময় লন্ডনে ডাক্তারি পড়ছিলেন আসাদ। তখন দু’জনের পরিচয় হয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৩০
(বাঁ দিকে) আসমা আল আসাদ। বাশার আল আসাদ (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) আসমা আল আসাদ। বাশার আল আসাদ (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

গত সপ্তাহেই তিন ছেলেকে নিয়ে রাশিয়া পালিয়ে গিয়েছেন সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের স্ত্রী আসমা আল আসাদ! শুক্রবার এমনটাই দাবি করেছে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’। সিরিয়ার নিরাপত্তা আধিকারিকদের উদ্ধৃত করে দাবি করেছে সেই সংবাদ সংস্থা। যদিও আসাদ-বন্ধু রাশিয়ার তরফে এই বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। এর আগেও যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সিরিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’-কে সেই প্রস্তাব দিয়েছিল বেশ কিছু দেশ। ২০১৬ সালে আসমা একটি সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছিলেন সেই কথা। যদিও সে সময় তিনি স্বামীকে ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, এর ফলে দেশবাসী প্রেসিডেন্টের উপর ভরসা হারাবেন।

Advertisement

লন্ডনে কলেজে পড়ার সময়ে আসাদের সঙ্গে পরিচয় আসমার। তার পর থেকে আসাদের পাশ থেকে নড়েননি আসমা। সিরিয়ায় যখন বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, তখনও স্বামীর বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেননি আসমা। সিরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের সূত্রের দাবি ছিল, স্বামীর কাজ, সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছুই জানেন না তিনি। যদিও বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিল। ‘মরুভূমির গোলাপ’ বলে পরিচিত আসমাকে সিরিয়ায় লক্ষাধিক শিশু মৃত্যুর পরে ‘নরকের ফার্স্ট লেডি’-র তকমা দিয়েছিল তারা।

আসমার জন্ম ব্রিটেনে। বাবা ছিলেন সেখানকার কার্ডিয়োলজিস্ট। মা ছিলেন সিরিয়ার দূতাবাসে কূটনীতিবিদ। হাসিখুশি আসমা বন্ধুমহলে ‘এমা’ নামে পরিচিত ছিলেন। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন সাধারণ। লন্ডনের কিংস কলেজে ফরাসি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। সে সময় লন্ডনে ডাক্তারি পড়ছিলেন আসাদ। তখন দু’জনের পরিচয় হয়েছিল বলে দাবি সংবাদমাধ্যমের। মাঝে আসমা নিউ ইয়র্কের ব্যাঙ্কে চাকরি করেছিলেন কয়েক বছর। সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০০০ সালে আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে গোপনে বিয়ে হয়েছিল আসমার। সে সময়ে আসমার বয়স ছিল ২৫ বছর।

আসাদ যখন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন সেখানকার নাগরিকদের অনেক আশা ছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন ব্রিটেনে পড়াশোনা করা আসাদ এবং তাঁর স্ত্রী সংস্কারের পথে হাঁটবেন। আগের ৩০ বছর সিরিয়ায় যে একনায়কতন্ত্র চলেছিল, তার অবসান ঘটবে। প্রথম দিকে সংস্কারের পথেই হেঁটেছিলেন আসাদ। সাধারণ মানুষ সহজেই তাঁর কাছে পৌঁছতে পারতেন। দেশে সেবামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেত আসমাকে। কিন্তু দুর্নীতি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি-সহ নানা কারণে প্রেসিডেন্ট আসাদের উপর ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে সাধারণ মানুষের। আড়ালে যেতে শুরু করেন আসাদ দম্পতি। পথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন দেশবাসীদের একাংশ। সরকারের সঙ্গে সংঘাতে রক্ত ঝরতে থাকে। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জে ব্রিটেন এবং জার্মানির দূতেদের স্ত্রী আসমাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। গৃহযুদ্ধে জেরবার সিরিয়ায় হিংসা থামানোর অনুরোধ করেন। আসমা যদিও এই নিয়ে একটি মন্তব্যও করেননি সে সময়। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা প্রচার করেন, তিনি এ সবের বিষয়ে কিছুই জানেন না।

এর মধ্যেই ‘গার্ডিয়ান’ আসাদ এবং আসমার মধ্যে চালাচালি হওয়া কিছু ব্যক্তিগত ইমেল প্রকাশ করে দেয়। তা থেকে জানা যায়, আসাদ সরকার যখন সিরিয়ার নিরীহ মানুষের উপর বোমা বর্ষণ করছেন, তখন আসমা বিদেশ থেকে দামি সাজপোশাক, গয়না, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র কিনেছেন। দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। নিয়মিত কথাবার্তাও হয়। দামাস্কাসে যখন বোমা পড়ছে, তখন তিন সন্তান হাফেজ, জ়েইন, করিমকে নিয়ে বাঙ্কারে দিন কাটাচ্ছেন আসমা। তবু আসাদকে ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্যও কোথাও যাননি তিনি। আসাদের ‘বন্ধু’-দেশ রাশিয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এ বার মনে করা হচ্ছে, তিন ছেলেকে নিয়ে সেই রাশিয়াতেই পালিয়েছেন আসমা। বিমানে সিরিয়া ছেড়েছেন আসাদও। যদিও কোথায় তিনি যাচ্ছেন, তা নিয়ে রয়েছে ধন্দ।

Advertisement
আরও পড়ুন