গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে এ বারের প্রেসিডেন্ট ভোটের লড়াই আমেরিকার নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের অনেকে। সম্ভাব্য সেই পরিস্থিতিতে ৫০টি প্রদেশের ভোটের পূর্ণাঙ্গ ফল কখন সরকারি ভাবে ঘোষণা হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট ভোটেও ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কড়া টক্কর হয়েছিল। নেভাডা-সহ কয়েকটি প্রদেশে ভোটগণনায় জটিলতার কারণে পিছিয়ে গিয়েছিল ফলঘোষণা। ওই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছিল ৩ নভেম্বর। সরকারি ভাবে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছিল ৭ নভেম্বর। ভোটপর্ব শেষের প্রায় চার দিন পরে। ২০১২ এবং ২০১৬ সালে অবশ্য ভোটের ফলঘোষণা হয়েছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই।
মঙ্গলবার বিকেল থেকেই (ভারতীয় সময়) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত তথা অন্তিম পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ট্রাম্প এবং কমলার মধ্যে কে জয়ী হবেন, তা ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্ধারিত হবে না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (ফেডারেল) নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে এক একটি প্রদেশের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে।
আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সেই প্রদেশের সব ক’টি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। যেমন, টেক্সাসে ৪০ জন ইলেক্টর রয়েছেন। কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি এই প্রদেশে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রদেশের ৪০ জন ইলেক্টরকে জিতে নেবেন। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। ক্যালিফোর্নিয়ায় ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৪। আবার নর্থ ডাকোটায় মাত্র ৩। যে প্রদেশে ভোটার সংখ্যা বেশি, সেখানে ভোটদান এবং গণনায় সময়ও বেশি লাগবে।
মাইন এবং নেব্রাসকা এই দু’টি প্রদেশ বাদে বাকি সবগুলি রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ করলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। সেই প্রার্থীর রানিং মেট হয়ে যাবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট। আগামী ১৩ ডিসেম্বর ইলেক্টরেরা সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক রাজধানীতে জড়ো হয়ে তাঁদের দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্ব শেষ করবেন। তবে তার আগেই সরকারি ভাবে ভোটগণনার ফল ঘোষণা হবে।
ভোটগণনার সময় হাতে চিহ্নিত কাগজের ব্যালট এবং বিএমডি-তে দেওয়া ভোটগুলি সাধারণত ‘অপটিক্যাল স্ক্যানার’ ব্যবহার করে স্ক্যান করা হয়। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফলাফল নথিভুক্ত করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি একটি প্রাদেশিক স্তরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করেন। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে গণনার পাশাপাশি প্রয়োজনে হাতে ভোটগণনারও ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ছাড়া আগাম ভোটের ক্ষেত্রে চালু ‘মেইল ইন ব্যালট’ ব্যবস্থায় দেওয়া ভোটের বৈধতা যাচাই এবং গণনার প্রক্রিয়াও রয়েছে কয়েকটি প্রদেশে। প্রাদেশিক নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল ফেডেরাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করতে হয়। মঙ্গলবার আমেরিকায় ‘ইস্টার্ন টাইম জ়োন’-এ সন্ধ্যা ৬টায় (ভারতীয় সময় বুধবার ভোর) ভোট শুরুর পরে প্রদেশভিত্তিক গণনা শুরু হবে। প্রথম ফলের আঁচ মিলতে পারে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। প্রেসিডেন্ট ভোটের পাশাপাশি আমেরিকার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ ১০০ সদস্যের সেনেটের ৩৪টি এবং নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের ৪৩৫ আসনের সব ক’টির ভোট এবং গণনাও হচ্ছে এই দফায়।