(বাঁ দিকে) জখম ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলাকারী টমাস ক্রুক (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে যিনি গুলি ছুড়েছিলেন, তাঁর পরিচয় বিশদে প্রকাশ করল এফবিআই। পেনসিলভেনিয়া স্টেটের ভোটার রেকর্ড বলছে,ওই আততায়ী আদতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পের নিজের দলেরই নথিভুক্ত সদস্য। এফবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, এই হামলাকে ‘খুনের চেষ্টা’ হিসাবেই দেখছে তারা।
এফবিআই জানিয়েছে, বন্দুকবাজের নাম টমাস ম্যাথিউ ক্রুক, বয়স ২০ বছর। অর্থাত্ হিসেব মতো চলতি বছরের আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনটিই হত ভোটার হিসেবে তাঁর প্রথম নির্বাচন। পুলিশ এবং রক্ষীদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন ক্রুক। তবে তাঁর ছোড়া গুলিতে এক ট্রাম্প-সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। দু’জন গুরুতর আহত।
পিটসবার্গ ট্রিবিউন-রিভিউ অনুযায়ী, ক্রুক বেথেল পার্ক হাই স্কুল থেকে ২০২২ সালে গ্র্যাজুয়েট হন। বরাবরই ভাল ছাত্র ছিলেন ক্রুক। ন্যাশনাল ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্স ইনিশিয়েটিভের পক্ষ থেকে সাম্মানিক ৫০০ ডলারের ‘স্টার অ্যাওয়ার্ড’-ও পেয়েছিলেন। নিউ-ইয়র্ক টাইমস দ্বারা প্রকাশিত ২০২২ সালের একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, হাই স্কুলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অনেকের হাততালির মাঝে কর্তৃপক্ষের হাত থেকে শংসাপত্র গ্রহণ করছেন ক্রুক। পরনে কালো গাউন, হাসি মুখে ছবিও তুলছেন অন্যদের সঙ্গে (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) ।
ক্রুক পেনসিলভেনিয়ার বেথেল পার্কের বাসিন্দা। ট্রাম্পের মঞ্চ যেখানে ছিল, তার থেকে মাত্র ১৩০ গজ (১১৯ মিটার) দূরের উঁচু একটি ছাদ থেকে ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি ছুড়েছিলেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে দু’হাতে কান চেপে মঞ্চেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। সতর্ক হয়ে যান সিক্রেট সার্ভিস কাউন্টার-স্নাইপার দলের সদস্যেরা। তাঁরা ক্রুককে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি ছোড়েন। আর তাতেই মৃত্যু হয় যুবকের। ঘটনার ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, এর পরই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে দ্রুত মঞ্চ থেকে ট্রাম্পকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সিক্রেট সার্ভিস বাহিনী। এখনও ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পুলিশ ও এফবিআই।
শনিবার পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে একটি সভায় গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়েছিল। মঞ্চে উঠে কথা বলতে শুরু করেন ট্রাম্প। তখনই পর পর বেশ কয়েক বার গুলির শব্দ হয়। সভাস্থলে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। একটু পরে দেখা যায়, ট্রাম্পের ডান কানের পাশ থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। তবে গুলি কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেলেও এখন সুস্থ রয়েছেন ট্রাম্প।
ঘটনা প্রসঙ্গে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। গুলি আমার কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে। ডান কানের উপরের দিকের চামড়া গুলিতে চিরে গিয়েছে… আমাদের দেশে যে এমনটা ঘটতে পারে, ভাবতেই পারি না।’’ দলমত নির্বিশেষে ট্রাম্পের সভায় এই হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন আমেরিকার রাজনৈতিক নেতারা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘‘আমেরিকায় এই ধরনের হিংসার কোনও জায়গা নেই। আমাদের একজোট হয়ে এই হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত এবং এর নিন্দা করা উচিত।’’ হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।