‘আইআইটি বাবা’ অভয় সিংহ। —ফাইল চিত্র।
মহাকুম্ভ থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়েছিলেন ‘আইআইটি বাবা’ অভয় সিংহ। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে লক্ষ লক্ষ অনুরাগী আর সংবাদমাধ্যমের কৌতূহলী প্রশ্নের চাপে জেরবার হয়ে একটু শান্তির খোঁজে তিনি সাধুদের আখড়া ছেড়ে অজ্ঞাতবাসে চলে গিয়েছেন বলে প্রচার করা হয়েছিল। তাঁর খোঁজে বাবা-মা হরিয়ানার ঝজ্জরের শাসরাউলি গ্রাম থেকে প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলায় ছুটে এলেও দেখা পাননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে শনিবার ফের দেখা দিলেন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ‘আইআইটি বাবা’। তিনি জানালেন, কুম্ভেই ছিলেন। কোথাও পালাননি। বরং তাঁর খ্যাতি, প্রচারের আলো মেনে নিতে না পেরে রাতারাতি তাঁকে আখড়া ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জুনা আখড়ার ১৬ মাদি আশ্রম, যেখানে এত দিন তিনি ছিলেন সেখান থেকে তাঁকে বার করে দেওয়া হয়। অন্য সাধুরা তাঁর নামে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেয় যে, প্রচারের আলো এড়াতে এবং নিরিবিলির খোঁজে ‘আইআইটি বাবা’ আখড়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
আরও ‘সত্যি’ ফাঁস করেছেন অভয়। তিনি বলেছেন, ‘‘ওরা জানে এখন আমি বিখ্যাত। ওদের বিষয়ে গোপন কোনও তথ্য ফাঁস করে দিতে পারি। তাই মাদি আশ্রমের পরিচালকেরা আমায় রাতের অন্ধকারে আখড়া ছাড়তে নির্দেশ দেয়। আমার নামে ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে ওরা। ওরা ভুলভাল বলছে।’’ সংবাদমাধ্যমের কাছে জুনা আখড়ার কয়েক জন সাধু ‘আইআইটি বাবা’র মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। নিয়মিত মাদক সেবন এবং সংবাদমাধ্যমের সামনে আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য তাঁকে আখড়া থেকে বার করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তাঁদের সকলকে এক হাত নিয়ে অভয় বলেছেন, ‘‘এই সমস্ত মনোরোগ চিকিৎসকদের আমি চিনি। আমার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ছাড়পত্র দেওয়ার ওরা কেউ নন।’’
নিজেকে অভয়ের গুরু হিসেবে দাবি করেছিলেন সোমেশ্বর পুরী নামে এক সাধু। সেই দাবি উড়িয়ে অভয় বলেন, ‘‘কে বলল উনি আমার গুরু? আমাদের মধ্যে কোনও গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক নেই। এখন আমি বিখ্যাত। তাই উনি নিজেকে আমার গুরু
বলে দাবি করে প্রচারের আলোয় আসতে চাইছেন।’’
হরিয়ানার জাঠ পরিবারে জন্ম অভয় সিংহের। বম্বে আইআইটি থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি। পড়া শেষ করে কানাডার একটি বিমান নির্মাণকারী সংস্থায় কিছু দিন চাকরিও করেছেন। কোভিড অতিমারি চলাকালীন লকডাউনে প্রবাসে একা একা থাকার সময়ে আধ্যাত্মচিন্তায় মজেন। দেশে ফিরে ক্যামেরা হাতে কিছু দিন ঘুরেছিলেন। কিন্তু মন ভরেনি। এখন তিনি তীর্থে তীর্থে ঘুরছেন সাধকের বেশে।
প্রথম দিকে ছেলেকে বাধা না দিলেও আধ্যাত্মিকতার দিকে অভয়ের প্রবল ঝোঁক দেখে চিন্তিত হয়ে ওঠেন বাবা-মা। এক সময় তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একাধিক বার পুলিশের দ্বারস্থও হয়েছেন তাঁরা। মাস ছয়েক আগে বাড়ির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে আসেন অভয়। ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বাবা করণ সিংহ বলেছেন, ‘‘ও নিজের জন্য যা ভাল বলে মনে করছে সেটাই হয়তো ঠিক। আমি ওর উপরে কোনও কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। ও নিজের মর্জির মালিক।’’