Taliban

মেয়েদের পরকীয়ায় পাথর ছুড়ে হত্যার সাজা ফেরাল তালিবান

২০২১ সালে আফগানিস্তানে ফিরে আসে তালিবান শাসন। তখনই তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদা বলেছিলেন, ‘‘কাবুল দখল করেই থেমে যাবে না তালিবান। এই সবে শুরু।’’

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৮:০১

—প্রতীকী চিত্র।

এ যেন ক্রমশ অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাওয়া। দমবন্ধ হয়ে আসছে আফগান মানবাধিকার কর্মী সাফিয়া আরেফির। তালিবান শাসন ফিরে আসার পরে আফগানিস্তানে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। চাকরিস্থলেও তাঁদের আর প্রবেশাধিকার নেই। এ বার তালিবান সরকারের নয়া ফতোয়া— মহিলাদের পরকীয়ার শাস্তি প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে হত্যা।

Advertisement

২০২১ সালে আফগানিস্তানে ফিরে আসে তালিবান শাসন। তখনই তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লা আখুন্দজ়াদা বলেছিলেন, ‘‘কাবুল দখল করেই থেমে যাবে না তালিবান। এই সবে শুরু।’’ সে সময়ে বহু মানুষ দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। যাঁদের অর্থের জোর ছিল, তাঁরা সফল হয়েছিলেন। বাকিরা নিজের দেশেই ‘বন্দি’।

তালিবান অবশ্য দাবি করেছিল, তাদের ‘২.০ সংস্করণ’ নরমপন্থী। নারীশিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা আগের মতো কট্টরপন্থী মনোভাব পোষণ করবে না। যদিও এ কথা বিশ্বাস করেননি কেউই।

গত সপ্তাহে আখুন্দজ়াদা ঘোষণা করেছেন, তাঁরা শরিয়তি আইনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। যেমন, প্রকাশ্যে বেত মারা, মহিলাদের পরকীয়ার শাস্তি পাথর ছুড়ে হত্যা। তালিবান-নিয়ন্ত্রিত একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া অডিয়ো-বার্তায় আখুন্দজ়াদা বলেছেন, ‘‘পরকীয়া করলে আমরা বেত মারব মহিলাদের... যত ক্ষণ না মৃত্যু হচ্ছে, পাথর ছুড়ে যাওয়া হবে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘আপনারা বলতে পারেন মহিলাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। কারণ পাথর ছোড়া, প্রকাশ্যে বেত মারা আপনাদের গণতান্ত্রিক আদর্শের বিপরীত। কারণ আপনারা শয়তানের প্রতিনিধি।’’ আখুন্দজ়াদা তাঁদের এই পদক্ষেপকে ‘পশ্চিমি প্রভাবের বিরুদ্ধে তালিবানের লড়াই’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

তালিবানের ঘোষণায় অবাক হননি আফগান মহিলারা। তাঁরা ত্রস্ত। ’৯০-এর দশকের সেই অন্ধকার যুগ ফিরে আসার আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। ঘরে পুরুষ অভিভাবক না থাকায় না খেতে পেয়ে মরে যেতে হয়েছে, তবু ঘরের বাইরে পা ফেলতে পারেননি মহিলারা। কিংবা বিনা অপরাধে শুধুমাত্র পরকীয়া সম্পর্কের সন্দেহে প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে ‘খুন’।

মানবাধিকার কর্মী আরেফি বলেন, ‘‘তালিবান নেতার এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আফগানিস্তানে তাদের নিজস্ব শাস্তি-ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেল। আফগান মহিলারা ক্রমশ একা হয়ে পড়ছেন। এখন আর কেউ তাঁদের পাশে নেই। তাঁদের নিরাপত্তার কথা কেউ ভাবছে না। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করছে।’’

আফগান গবেষক (মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা করেছেন) শাহার ফেতরাত বলেন, ‘‘আজ ওদের যে সাহস, দু’বছর আগে সেটা ছিল না। তখন ওরা মেয়েদের এ ভাবে পাথর ছুড়ে হত্যা করতে পারত না। এখন কিন্তু পারে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওরা (তালিবান) ওদের নৃশংস শাসন-নীতি একটা একটা করে পরীক্ষা করছে। ওরা এখন এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যেখানে ওঁরা অত্যাচার করলেও ওঁদের প্রশ্ন করার কেউ নেই। ওদের নীতিকথা, ওদের সমাজব্যবস্থার পাঠ যুঝতে হবে নারী-শরীরকে।’’

২০২১ সালের অগস্টে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পরেই পূর্বের ‘পশ্চিম-প্রভাবিত’ সংবিধান খারিজ করে দিয়েছে তালিবান। পুরনো দণ্ডবিধি বাতিল করে শরিয়তি শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনছে তারা। মহিলা আইনজীবী ও বিচারক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমও তালিবানের নিয়ন্ত্রণে।

একটি আফগান নজরদারি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে যে, গত দু’বছরে তালিবানের নিযুক্ত বিচারক ৪১৭ জনকে প্রকাশ্যে বেত মারা ও মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ জন মহিলা। এই ফেব্রুয়ারি মাসেই জওজ়ান ও গজনী প্রদেশে স্টেডিয়াম-ভর্তি লোকের সামনে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়া হয়েছে ‘অপরাধীদের’। এ ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষের উদ্দেশে তালিবানের কড়া নির্দেশ— এই ‘শাস্তি-উদ্‌যাপনে’ সকলকে (পুরুষদের) হাজির থাকতে হবে, কারণ সেটা একরকম ‘সহবত পাঠ’, যা জরুরি। তবে ভিডিয়ো করা বা ছবি তোলা বারণ।

আরও পড়ুন
Advertisement