মুহাম্মদ ইউনুস। —ফাইল চিত্র
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। হাসিনার দেশত্যাগের পর সোমবারই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিক সম্মেলনে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার কথা ঘোষণা করেন। তার পরেই এই সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর শীর্ষ সারিতে থাকা ছাত্রনেতারা জানিয়ে দিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে তাঁরা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনুসকে চান। যদিও সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মঙ্গলবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম একটি ভিডিয়োবার্তায় জানান, ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা গঠন করতে চাইছেন তাঁরা। নাহিদ এ-ও জানান যে, তাঁর ইউনুসের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ‘ছাত্রদের আহ্বানে এবং বাংলাদেশকে রক্ষায়’ দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নাহিদ। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইউনূস এই মুহূর্তে প্যারিসে রয়েছেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ একই কথা জানিয়েছে।
সোমবারই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা পড়ুয়ারা জানিয়ে দেন, সেনা-সমর্থিত বা রাষ্ট্রপতি শাসিত কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না। প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া অন্য কোনও সরকারকে সমর্থন করা হবে না বলেও জানানো হয়। নতুন সরকারের রূপরেখা গঠনের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। মঙ্গলবারই প্রতিবাদী ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন ইউসুফ। তাঁকে ওই সম্মান দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে তাঁর তৈরি মাইক্রোফিন্যান্স ব্যাঙ্কের জন্য। ওই ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইউনুস বাংলাদেশের লক্ষাধিক দরিদ্র মানুষকে দারিদ্রসীমা থেকে টেনে তুলেছেন বলে মনে করেছিল নোবেল কমিটি। যদিও তাঁর নিজের দেশের সরকারের মনোভাব ছিল অন্য। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বরাবরই ইউসুফের সমালোচনা করেছেন প্রকাশ্যে। এমনকি, ইউসুফ গরিবের রক্ত শুষছেন বলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন হাসিনা।
ইউসুফের সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী যে কোনও সংস্থায় কর্মীদের কল্যাণমূলক তহবিল তৈরি করতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকমে ওই তহবিলের ব্যবস্থা ছিল না। বাংলাদেশের শ্রম আইন ভাঙার অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে ইউনুসকে ছ’মাসের জেলের সাজা শুনিয়েছিল ঢাকার আদালত। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে ইউনুসের প্রভাব এবং গুরুত্ব বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানায়, সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ের একটি বেসরকারি টেলিভিশন কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটানো হল। কেবল ব্যক্তিকে সরালেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য দিয়ে এ ধরনের ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়, সেই কাঠামোরও বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের করতে হবে।”
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তিকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা দেবে বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, “এই সরকার হবে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের প্রস্তাবিত। সেই জাতীয় সরকারে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকদের অংশ থাকবে। নাগরিক সমাজ-সহ নানা পেশার মানুষ ও নানা পক্ষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা অন্তর্বর্তিকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা এবং সেই সরকারে কারা থাকবেন, সেই নামগুলি ঘোষণা করব। অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিক দ্বারা সমর্থিত বা প্রস্তাবিত সরকার ছাড়া আর কোনও ধরনের সরকারকে আমরা সমর্থন করব না। সেটা হতে পারে সেনা-সমর্থিত সরকার বা জরুরি অবস্থা দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হতে পারে— এ ধরনের কোনও সরকারকে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা গ্রহণ করবে না।”