(বাঁ দিকে) মনমোহন সিংহের সেই গাড়ি এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই তাঁর নিরাপত্তাও ছিল জোরদার। ঘুরতে হত বুলেটপ্রুফ গাড়িতে। সেই গাড়ির আগে পরে থাকত অনেক গাড়ি। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন উচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট বিএমডব্লিউতে যাতায়াত করতে হলেও তাঁর মন পড়ে থাকত নিজের ছোট ‘মারুতি ৮০০’ গাড়ির দিকেই। তা নিয়ে প্রায়ই আফসোস করতেন! প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও মনমোহন সিংহের সাধারণ জীবনযাপন অভিভূত করত তাঁর এক সময়ের দেহরক্ষী অসীম অরুণকে।
অসীম এক জন প্রাক্তন আইপিএস। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ‘স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)’-র প্রধান ছিলেন অসীম। অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে পা দেন তিনি। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের কনৌজ সদরের বিধায়ক এবং যোগী-মন্ত্রিসভার সদস্য অসীম। মনমোহনের মৃত্যুর পর তাঁর সঙ্গে কাটানো সময় উঠে এল অসীমের সমাজমাধ্যমের পাতায়।
অসীম তাঁর পোস্টে লেখেন, ‘‘আমার সৌভাগ্য হয়েছিল মনমোহনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকার। প্রায় সর্ব ক্ষণই থাকতাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দলের মাত্র এক জনেরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি ছিল। তা ছিল আমারই। তাই ওঁর ছায়াসঙ্গী হয়েই ঘুরতাম।’’ দীর্ঘ পোস্টে অসীম সে সময়কার কথা তুলে ধরেছেন। মনমোহনের সাধারণ জীবনযাপন নিয়ে বলতে গিয়ে অসীম লেখেন, ‘‘ড. সিংহের নিজের একটিই গাড়ি ছিল, মারুতি ৮০০, যা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তাঁর জন্য অনুমোদিত বিএমডব্লিউ গাড়ির পিছনে রাখা থাকত। প্রায়ই তিনি আমাকে বলতেন, এই বিলাসবহুল গাড়িতে চড়া তাঁর না-পসন্দ। আমি তাঁকে বোঝাতাম, নিরাপত্তার জন্যই তাঁকে ওই গাড়ি চড়তে হবে। যখন তাঁর কনভয় বাড়ি থেকে বার হত, তখন তিনি অপলক দৃষ্টিতে নিজের মারুতি গাড়ির দিকে চেয়ে থাকতেন।’’
৯২ বছর বয়সি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দিল্লি এমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ৯টা ৫১ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়, জানিয়েছেন এমস কর্তৃপক্ষ। তাঁর মৃত্যুতে সাত দিনের জাতীয় শোকপালন করা হবে, ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার মনমোহনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে কংগ্রেসের সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী— সকলেই শুক্রবার দিল্লিতে মনমোহনের বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন।