শেখ হাসিনা। —ফাইল ছবি।
জুলাইয়ের ৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়তে হল শেখ হাসিনাকে। আর মাত্রই ছ’মাস আগে গত ৭ জানুয়ারি ‘অবাক’ জয় পেয়েছিলেন হাসিনা। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল ৩০০ আসনের মধ্যে ২২৪টিতে জয় পেয়েছিল। তবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল স্বয়ং হাসিনার জয়ে।
ঢাকা প্রশাসনিক বিভাগের অন্তর্গত গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ -৩ আসনের প্রার্থী হিসাবে হাসিনা নির্বাচনে লড়েছিলেন। এই গোপালগঞ্জেই হাসিনার জন্ম। সেই আসনে এ বারের ভোটের ফল ছিল অবাক করা। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা দু’লক্ষ ৯০ হাজার ৩০০। এর মধ্যে হাসিনা পান দু’লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৬২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এনপিপি-র শেখ আবুল কালাম পান ৪৬০টি ভোট। আর ৪২৫টি ভোট পেয়ে ওই কেন্দ্রে তৃতীয় হন জাকের পার্টির প্রার্থী মাহাবুর মোল্লা। হাসিনা জিতেছিলেন দু’লক্ষ ৪৯ হাজার ৫০২ ভোটের ব্যবধানে। এত বড় জয় পেয়েও যে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়া থেকে বাঁচতে পারলেন না, তাই স্পষ্ট হল সোমবারের পরিণতিতে।
১৯৯১ সাল থেকেই টানা গোপালগঞ্জ -৩ কেন্দ্রে ভোটে লড়ছেন হাসিনা। প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওই কেন্দ্রে ৯৯.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। বিরোধীদের মোট ভোট ছিল ১৯৪টি। তার আগের বারে ২০১৪ সালের নির্বাচনে হাসিনা ভোট পেয়েছিলেন ৯৮.৭ শতাংশ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পান ১.৩ শতাংশ। তবে ১৯৯১ সালে প্রথম বার গোপালগঞ্জ -৩ আসনের প্রার্থী হয়ে হাসিনা পেয়েছিলেন ৭২.২ শতাংশ ভোট। ১৯৯৬ সালে সেটা বেড়ে হয়ে যায় ৯২.২ শতাংশ। ২০০১ এবং ২০০৮ সালে হাসিনার প্রাপ্ত ভোট আরও বেড়ে হয় যথাক্রমে ৯৪.৭ ও ৯৭.১ শতাংশ। বাড়তে বাড়তে ২০২৪ সালে ওই আসনে মোট প্রদত্ত ভোটের ৯৯.৬৫ শতাংশই পান হাসিনা।
বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। সে দেশের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল ভোট পড়ে মাত্র ৪০ শতাংশ। যদিও বিরোধীদের দাবি ছিল ভোট আরও কম পড়েছিল। মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
অতীতেও হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময়ে ভোট নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়। হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কট করে। ২০১৮ সালের নির্বাচন বাংলাদেশে ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিত। কারণ, সে বার অভিযোগ উঠেছিল, অসংখ্য বুথে নির্বাচনের আগের রাতেই ভোটবাক্স ভরে গিয়েছিল অবৈধ ব্যালটে। সে বার ২৫৭ আসনে জিতেছিল হাসিনার দল। এ বার আসন কমলেও অন্য অভিযোগ ছিল। এ বার ২২৪ আসনে আওয়ামী লীগ জিতলেও বিরোধী পক্ষ বলতে ছিল এক গুচ্ছ নির্দল সাংসদ। মোট ৬৩ জন নির্দল প্রার্থী জেতেন। অভিযোগ ওঠে, জয়ীরা অধিকাংশই আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে ভোটে দাঁড়ান। কেউ কেউ আবার লীগের হুকুমেই দলবিহীন ডামি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন।