বাংলাদেশ আন্দোলনে শেষ হাসি হাসলেন আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়েছেন। বোন রেহানাকে নিয়ে গণভবনও ছেড়েছেন তিনি।
মাসখানেক ধরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। রক্তও ঝরেছিল প্রচুর। জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও ন’দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
আন্দোলনের নয় দফা দাবি পরে নেমে আসে এক দফায়— হাসিনা সরকারের পদত্যাগে। আন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চের ডাকে ২৮ জুলাই থেকে বাংলাদেশে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন।
উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা শহর। রাস্তায় নামে শয়ে শয়ে মানুষ। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ শুরু হয় দফায় দফায়। বহু গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন ধরানো হয় গাজিপুর, ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং পুলিশের গাড়িতে। একই চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। মুন্সিগঞ্জ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে নিহত হন ২ জন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশে ফের বন্ধ হয় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা।
এত আন্দোলন, সংঘর্ষ, প্রতিবাদের পর সোমবার দুপুরে প্রকাশ্যে এল শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর। কপ্টারে করে হাসিনাকে ‘নিরাপদ’ আশ্রয়ের উদ্দেশে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ বায়ুসেনার কপ্টারটি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার উদ্দেশে উড়িয়ে নিয়ে যান এয়ার কমোডর আব্বাস।
হাসিনা বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করার কিছু ক্ষণ পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ শুরু করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বাংলাদেশে সেনার অধীনে অন্তর্বর্তী তদারকি সরকার গঠনের কথা জানান তিনি। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন— ‘আন্দোলন বন্ধ করুন’। পুলিশ এবং সেনাকে তিনি গুলি চালাতে বারণ করেছেন বলেও জানান ওয়াকার। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সর্বদল বৈঠক করার কথাও তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারকে আপাতত ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে খবর। তার পরে তদারকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার গঠিত হবে। বছরখানেক পরে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। তবে এ সবই এখন প্রাথমিক স্তরের বক্তব্য।
পদত্যাগ করার পর হাসিনা দেশ ছাড়তেই দিকে দিকে ধরা পড়ে বিজয়োল্লাসের ছবি। আন্দোলনকারীদের দীর্ঘ দিনের রাগ-ক্ষোভ বদলে গেল হাসিতে। কেউ কেউ আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে মোনাজ়াত শুরু করেন। কারও কারও গলায় শোনা গেল আনন্দ মেশানো চিৎকার।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আনন্দে শামিল হতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকেও। ট্যাঙ্কের মাথায় চড়ে থাকা বাহিনীকে হাসতে হাসতে হাত মেলাতেও দেখা যায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে।
হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তাঁর বাসভবন গণভবনেও ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে স্লোগান এবং উল্লাসের মাধ্যমে বিজয় উদ্যাপন করেন তাঁরা। বাংলাদেশের পতাকা হাতে অনেকে গণভবনের মাথায় চড়েন। সেখানে থেকে আনন্দে চিৎকার শুরু করেন সাধারণ মানুষ।
সমাজমাধ্যমে বেশ কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই সব ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, গণভবনে ঢুকে দাপাদাপি করছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। কারও হাতে দামি জিনিসপত্র, কারও হাতে মুরগি। কেউ বা ছুটছেন চেয়ার হাতে। এক জন যুবককে আবার হাসিনার শয়নকক্ষে ঢুকে তাঁর বিছানায় সটান শুয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে।
বিক্ষোভ দেখাতে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি ভাঙেন বিক্ষোভকারীরা। মূর্তির উপরে চড়ে সেটিকে ভাঙার চেষ্টার ছবি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে।
অন্য দিকে, ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাড়িতে হামলার অভিযোগও উঠেছে। দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ তাঁর বাড়ির ফটক ভেঙে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এর পর বাড়ি থেকে ধোঁয়া বার হতেও দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেছে ‘প্রথম আলো’।
আওয়ামী লীগের ঢাকা এবং ধানমন্ডির কার্যালয়ে আগুন ধরানোর অভিযোগ উঠেছে। সেখানে স্লোগান দিতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে।
প্রায় এক দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার বাংলাদেশে চালু হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা।
ছবি: রয়টার্স এবং এক্স।