US President Election 2024

লাল না নীল কার সংসার? সাত ‘নিরপেক্ষ’ প্রদেশই ফারাক গড়ে দিতে পারে কমলা আর ট্রাম্পের মধ্যে

১৯৮০ থেকে আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রদেশে রিপাবলিকানেরা জয়ী হয়ে আসছেন। আবার ১৯৯২ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে কয়েকটি প্রদেশে জয়ী হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৩৭
Seven swing states can determine the winner of US President Election 2024

সাত ‘দোদুল্যমান প্রদেশে’ শেষ হাসি হাসবেন কে, ট্রাম্প না কমলা? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে সাতটি প্রদেশের ফলাফল। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি প্রদেশের মধ্যে কোনটি কোন দলের দিকে ঝুঁকে, তা বুঝতে বিশেষ গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ দীর্ঘ দিন ধরেই ওই প্রদেশগুলির বাসিন্দাদের সিংহভাগ ভোট নির্দিষ্ট একটি দলের বাক্সে পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সাতটি প্রদেশ। এই প্রদেশগুলিকে ‘সুইং স্টেটস’ বা ‘দোদুল্যমান প্রদেশ’ বলা হয়ে থাকে। কারণ এই প্রদেশগুলির রাজনৈতিক আনুগত্য বদলানোর ঐতিহ্য রয়েছে। আর তাই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস—দু’জনেরই লক্ষ্য এই সাত প্রদেশের জনাদেশকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা।

Advertisement

১৯৮০ থেকে আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রদেশে রিপাবলিকানেরা জয়ী হয়ে আসছেন। দলের রং অনুসারে এই প্রদেশগুলিকে ‘রেড স্টেটস’ বলা হয়ে থাকে। আবার ১৯৯২ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে কয়েকটি প্রদেশে জয়ী হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটরা। দলের রং অনুসারে এই প্রদেশগুলিকে ‘ব্লু স্টেটস’ বলা হয়ে থাকে। এর বাইরে আছে দোদুল্যমান প্রদেশগুলি। প্রায় গোটা দশেক প্রদেশকে এই তকমা দেওয়া হলেও এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাতটি প্রদেশের ফল একেবার অনিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। এই সাত প্রদেশ হল অ্যারিজ়োনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন।

একটি সমীক্ষক সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, এই সাত প্রদেশের মধ্যে উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান এবং নেভাদায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে কমলা। আর নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া আর অ্যারিজ়োনায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প।

জর্জিয়া: ২০২০ সালে জর্জিয়ায় জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন। ১৯৯২ সালের পর সেই প্রথম ওই প্রদেশে জয়ী হয় ডেমোক্র্যাটরা। জর্জিয়ার ভোটারদের মধ্যে বড় একটি অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সেই অঙ্কে এখানে কিস্তিমাত করতে পারেন কমলা। তবে হাল ছাড়ছেন না ট্রাম্পও।

নেভাদা: এই প্রদেশে মাত্র ছ’টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ লাতিন বংশোদ্ভূত, এশীয়-আমেরিকান এবং কৃষ্ণাঙ্গ। ঐতিহাসিক ভাবে এই ভোট কমলার দিকে যাওয়ার কথা। কিন্তু টালমাটাল অর্থনীতির সমস্যা এই ভোটারদের একাংশকে ট্রাম্পমুখী করতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

মিশিগান: ১৫টি ইলেক্টোরাল ভোট সম্বলিত এই প্রদেশ দীর্ঘ দিন ধরে ডেমোক্র্যাটদের খাসতালুক বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে ২০১৬ সালে এই মিশিগানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই প্রদেশে নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারেন আরব-আমেরিকানরা। এদের একাংশ গাজ়ার পরিস্থিতি নিয়ে যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনই ইজ়রায়েলকে সমর্থনের প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। এই পরিস্থিতিতে এখানে বাজিমাতের আশা দেখছে রিপাবলিকানেরা।

পেনসিলভেনিয়া: এক সময় এই প্রদেশটিও ডেমোক্র্যাটদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ ছিল। কিন্তু ফিলাডেলফিয়া কিংবা পিটসবার্গের মতো শহরগুলিতে শিল্পায়নের অধোগতি এখানকার ভোটারদের একাংশকে কমলার দলের প্রতি বিমুখ করে তুলেছে। পরিকাঠামো এবং উৎপাদন শিল্পের উপর জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পেনসিলভেনিয়ায় ঝোড়ো প্রচার করেছেন কমলা, ট্রাম্প দু’জনেই।

অ্যারিজ়োনা: ২০২০ সালে এই প্রদেশে ১০ হাজারের একটু বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গুঞ্জন অভিবাসন নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট অ্যারিজ়োনার ভোটারেরা। এই প্রদেশটি মেক্সিকো সীমান্তবর্তী। সে কথা মাথায় রেখে অভিবাসন নীতি নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন ট্রাম্পও। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পের উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং আমেরিকাকেন্দ্রিক প্রচার ভোটের ফল ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে আশা রিপাবলিকানদের।

নর্থ ক্যারোলাইনা: গত ৫০ বছরে এই প্রদেশে অধিকাংশ সময়েই জয়ী হয়েছে রিপাবলিকানেরা। কিন্তু ২০০৮ সালে নর্থ ক্যারোলাইনায় জয়ী হন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বহু কলেজ পড়ুয়ার বাস এই প্রদেশে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন লাতিন বংশোদ্ভূত, শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গেরাও। মিশ্র এই প্রদেশে শেষ হাসি কে হাসবেন, সেটাই এখন দেখার।

উইসকনসিন: প্রাথমিক সমীক্ষায় এই প্রদেশে বাইডেনের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। তবে কমলা প্রার্থী হওয়ার পর এই ব্যবধান ক্রমশ কমতে থাকে। ভোটারদের উজ্জীবিত করতে রিপাবলিকান পার্টি তাদের জাতীয় কনভেনশনও এই প্রদেশে করেছিল। তার পরেও প্রদেশটি ধরে রাখা যাবেই, এমনটা জোর গলায় দাবি করতে পারছেন না রিপাবলিকানেরা। খেলা ঘোরানোর আশায় ডেমোক্র্যাটেরাও।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ট্রাম্প এবং কমলার মধ্যে কে জয়ী হবেন, তা ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্ধারিত হবে না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (ফেডারেল) নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি প্রদেশের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে। আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সেই প্রদেশের সব ক’টি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। যেমন, টেক্সাসে ৪০ জন ইলেক্টর রয়েছেন। কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি এই প্রদেশে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রদেশের ৪০ জন ইলেক্টরকে জিতে নেবেন। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮।

Advertisement
আরও পড়ুন