মোদী, পুতিন এবং জিনপিং। ফাইল চিত্র।
আগামী দিনে ভারত এবং চিনের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়াবে রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে ছ’মাসের মাথায় মস্কোর ‘মানবিক নীতি’ প্রকাশ করে এ কথা জানালেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ৩১ পাতার ওই নথিতে বলা হয়েছে, ‘রুশ ঐতিহ্য এবং আদর্শের রক্ষা ও শ্রীবৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ করতে হবে।’
কূটনীতির সেই ‘প্লট’ গোলমেলে ছিল গোড়া থেকেই। তা আরও গুলিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। এই পরিস্থিতিতে পুতিনের ঘোষণা, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নয়া অক্ষ তৈরির ‘বার্তা’ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, সোভিয়েত ইউনিয়নের জমানা থেকেই মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তবে পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে চিনের! অথচ গত ছ’দশক ধরেই সীমান্ত সমস্যা রয়েছে ভারত এবং চিনের মধ্যে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সোভিয়েতের উত্তরসূরি রাশিয়ার উপর ভারতের নির্ভরতাও রয়েছে।
সোভিয়েত জমানার পতনের পর মস্কো-ওয়াশিংটন ঠান্ডাযুদ্ধের পালা শেষ হলেও ইউক্রেন পরিস্থিতির জেরে রাশিয়া এখন আমেরিকার শত্রু। আবার গত কয়েক দশকে আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব বেড়েছে ভারতের! সামরিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরতাও তৈরি হয়েছে। অথচ রাশিয়ার যে কোনও মিত্রদেশই এখন আমেরিকার চক্ষুশূল। এই পরিস্থিতিতে বিদেশনীতির ভারসাম্য বজায় রাখা নরেন্দ্র মোদী সরকারের বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ বলেই মনে করছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর প্রাথমিক ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ, সাধারণ সভা এবং মানবাধিকার পরিষদে রুশ হামলার বিরুদ্ধে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার আনার একাধিক প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু অগস্টে প্রথম বার রাশিয়ার হামলার নিন্দা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদে আনা প্রস্তাব সমর্থন করেছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে পুতিনের ঘোষণা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত এবং চিনের পাশাপাশি পুতিনের ওই নথিতে বলকান অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর কথা রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পৃথক ভাবে উল্লিখিত হয়েছে, অসেশিয়া এবং আবখাজিয়ার প্রসঙ্গ। পূর্বতন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত জর্জিয়ার ওই দুই অংশ রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) মতোই অসেশিয়া এবং আবখাজিয়াতেও মস্কো-পন্থী সশস্ত্র মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলির সক্রিয়। নব্বইয়ের দশকে জর্জিয়া সরকার তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করলে ক্রুদ্ধ রাশিয়া হানা দিয়েছিল জর্জিয়ায়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণার আগে ডোনেৎস্ক ও লুহানস্কে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন পুতিন। প্রশ্ন উঠেছে, এ বার কি তাঁর নতুন ‘নিশানা’ হবে জর্জিয়া?