নিজেকে আড়ালে রেখে শত্রু নিকেশ করা সোজা কথা নয়। রাশিয়ার এক মহিলা বন্দুকবাজ পারেন। রুশ বাহিনীর সেরা শ্যুটারদের এক জন তিনি। কিন্তু ইউক্রেনে যুদ্ধে গিয়ে সেই তিনিই যখন জখম হলেন, তখন রুশ সেনা ওই অবস্থাতেই ফেলে রেখে পলাল তাঁকে। রাশিয়ার সেই মহিলা বন্দুকবাজ আপাতত ইউক্রেনের সেনার হাতে বন্দি।
নাম ইরিনা স্টারিকোভা। ভালবেসে সহকর্মীরা ডাকতেন ‘বগীরা’ বলে। রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের জনপ্রিয় বই ‘দ্য জাঙ্গল বুক’-এর কালো বাঘের নাম ‘বগীরা’। ইরিনাও বাঘের মতোই আড়ালে থেকে এবং দূর থেকে নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করতে পারেন। তিনি পেশাদার ‘স্নাইপার’।
রুশ সেনাবাহিনীতে ইরিনার বীরত্বের নানা গল্প চালু আছে। তার মধ্যে একটি এ-ও যে, ইরিনার হাতের নিখুঁত টিপে তাঁর বন্দুকের গুলিতে বিভিন্ন সময়ে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৪০ জন শত্রুর। এঁদের মধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধেই নিহত হয়েছেন অনেকে। এখন সেই ইরিনারই বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ইউক্রেনীয় সেনাদের হাতে।
ইরিনা দুই সন্তানের মা। বয়স ৪১। তাঁর দুই কন্যার এক জন ভ্যালেরিয়ার বয়স ১১। অন্য জনের বয়স ৯। নাম ইউলিয়া।
ইউক্রেনের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং স্বাধীনতাকামী এলাকার একটি দনেৎস্ক। সেখানেই বাড়ি ইরিনার। রাশিয়া মদতপ্রাপ্ত এই দুই এলাকাই ইউক্রেন-রাশিয়ার-যুদ্ধের অন্যতম কারণ। ইরিনা স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন রুশ সেনাবাহিনীতে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও রাশিয়ার হয়েই নেমেছিলেন ইরিনা। বিপক্ষের সেনা নাগরিকদের অনেকেই মারা গিয়েছেন তাঁর বন্দুকের গুলিতে। প্রাণ গিয়েছে বহু সাধারণ নাগরিকেরও। ইরিনাকে বন্দি করার পর তাই ইউক্রেনের রাজধানী কিভের সেনাপ্রহরীরা জানিয়ে দিয়েছেন, কিভের শান্তি বিঘ্নিত করবে যারা, ধরা পড়লে পাল্টা প্রত্যাঘাতের জন্যও তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
ধরা পড়ে এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন ইরিনাও। রাশিয়ার অমানবিক যুদ্ধনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি।
হতাশ ইরিনাকে নিজের দেশের সহকর্মীদের বিষয়ে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ওরা দেখল যুদ্ধক্ষেত্রে আমি জখম হয়েছি। চাইলে আমাকে তুলে নিয়ে যেতেই পারত। ওদের সেই ক্ষমতা ছিল। কিন্তু তা না করে ওরা আমাকে ফেলে রেখে চেলে গেল। শুধু তা-ই নয়, আমার মৃত্যুকামনাও করতে শুনলাম ওদের।’’
ইরিনার এই বোধোদয়কে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধনীতির মুখে একটা সজোর থাপ্পড় বলে মনে করছেন পুতিন সমালোচকরা।
বিশেষ করে সেই রাশিয়ায়, যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মেয়েদের বন্দুকবাজ হিসেবে ভরসা করা হত।
সে সময় অন্যান্য দেশ যখন মেয়েদের নিরাপদ কাজে নিয়োগ করার কথা ভাবছে, তখন রাশিয়ায় মহিলা বন্দুকবাজদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল দেশের হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করার। তখনকার সোভিয়েত রাশিয়ার সেরা এবং সফলতম মহিলা বন্দুকবাজ ছিলেন ল্যুডমিলা পাভলিচেঙ্কো।
শোনা যায় ল্যুডমিলা একা জার্মান বাহিনীর ১২ হাজার সৈন্যকে নিকেশ করেছিলেন। যুদ্ধের সময়ে তার নতুন নামকরণ হয় ‘লেডি ডেথ’।
ইরিনা সেই রাশিয়ার সৈনিক। তবে পুতিনের রুশ বাহিনীর কাছে তাঁর দরকার ফুরিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে জখম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। তাই কাজ ফুরতেই তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে পুতিনের বাহিনী।