Myanmar Conflict

তাইল্যান্ড সীমান্তের দখল নিল মায়ানমারের বিদ্রোহীরা, প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে গেল জুন্টার সেনা

বিদ্রোহীদের দাবি, মায়াবতী শহরের পাশাপাশি দাবি, তাইল্যান্ড সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত জুন্টা সেনার ‘ব্যাটেলিয়ন ২৭৫’-এর সদর দফতরেরও দখল নিয়েছে তারা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৩
মায়ানমার-তাইল্যান্ড সীমান্ত।

মায়ানমার-তাইল্যান্ড সীমান্ত। — ফাইল চিত্র।

রাতভর অভিযান চালিয়ে তাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী প্রধান শহর মায়াবতীর দখল নিল মায়ানমারের বিদ্রোহী জোট। ওই এলাকায় সক্রিয় সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)-এর তরফে বৃহস্পতিবার এই দাবি করা হয়েছে। তাদের দাবি, তাইল্যান্ড সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত জুন্টা সেনার ‘ব্যাটেলিয়ন ২৭৫’-এর সদর দফতরেরও দখল নিয়েছে বিদ্রোহী বাহিনী।

Advertisement

তাইল্যান্ড সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সূত্র উদ্ধৃত করে প্রকাশিত একটি খবরে জানানো হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই মায়াবতী থেকে গুলিগোলার আওয়াজ আসতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে তা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই বেশ কিছু পলাতক সেনা এবং অসামরিক নাগরিক মায়াবতী লাগোয়া সীমান্তবর্তী সেতু টপকে তাইল্যান্ডের মায়ে সোতে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও ওই খবরে দাবি। তাইল্যান্ড বলেছে, সংঘর্ষে বাস্তুচ্যুত এক লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দিতে প্রস্তুত তারা।

তাইল্যান্ড সীমান্ত মায়ানমারের সামরিক জু্ন্টা সরকারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ানমারের বাণিজ্য দফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে মায়াবতী সীমান্ত দিয়ে ১১০ কোটি ডলারের (প্রায় ৯,১৭৩ কোটি টাকা) বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই শহর হাতছাড়া হওয়া মায়ানমারের অর্থনীতির পক্ষে বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। মায়ানমারের সঙ্গে থাইল্যান্ডের ২,৪০০ কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। তার বড় অংশই এখন বিদ্রোহী বাহিনীর দখলে।

গত নভেম্বর থেকে সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’। পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হয় ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ), কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)-এর মতো জাতিভিত্তির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলি।

মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জুন্টা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তাইল্যান্ডে নির্বাসিত মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতী’ খোলাখুলি ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’-এর পক্ষে প্রচার করছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মদতপুষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠী ‘দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি’ (ইউডব্লিউএসপি) ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রদেশে সমান্তরাল সরকার চালানোও শুরু করে দিয়েছে।

বস্তুত, রাজধানী নেপিডো, প্রধান বাণিজ্য শহর ইয়াঙ্গন এবং আরও কিছু বড় জনপদ-শিল্পাঞ্চলেই এখন সেনার গতিবিধি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে খবর। কিন্তু এখনও বিদ্রোহীরা দেশ দখল করতে পারবে না বলেই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, দেশের বড় জনপদগুলিতে মূলত সংখ্যাগুরু বামার জনগোষ্ঠীর বাস। তাঁদের বড় অংশ জুন্টার সমর্থক। প্রভাবশালী বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও এখনও জুন্টার পাশে রয়েছেন। অন্য দিকে, মূলত প্রান্তিক এলাকার জনজাতি গোষ্ঠীগুলি রয়েছে বিদ্রোহীদের জোটে।

আরও পড়ুন
Advertisement