Imran Khan

পাকিস্তান ফৌজের সদর দফতরে ঢুকে পড়লেন ধৃত ইমরানের অনুগামীরা! পেশোয়ারের সেনা শিবিরে আগুন

গত সপ্তাহেই ইমরান প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন পাক সেনার মেজর জেনারেল ফয়জল নাসের গত বছরের নভেম্বরে ওয়াজিরাবাদে তাঁর উপর হামলার ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৩ ২০:৫৯
Protesters of PTI break into Pakistan Army headquarters at Rawalpindi after former PM Imran Khan’s arrest

ইমরান সমর্থকদের ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে পোশোয়ারের পাক সেনার শিবির। ছবি: রয়টার্স।

পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম বার রাজনৈতিক বিক্ষোভের আঁচ পড়ল সেনার সদর দফতরে। প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতারির প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রওয়ালপিন্ডির সেনা সদরের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর কয়েকশো সমর্থক। পেশোয়ারের সেনা শিবিরে একই কায়দায় ঢুকে লাগানো হল আগুন। হামলা হয় লাহোর এবং করাচির সেনা নিবাসেও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কোনও ক্ষেত্রেই নিরাপত্তায় মোতায়েন পাক জওয়ানেরা শক্তি বা অস্ত্র প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করেননি।

উত্তরের পেশোয়ার থেকে দক্ষিণের করাচি। ‘ক্যাপ্টেন’-কে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল থেকে পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা। পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, সত্তরের দশকে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত পাক প্রধানমন্ত্রী তথা ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টির’ প্রধান জুলফিকার আলি ভুট্টোর গ্রেফতারির প্রতিবাদেও পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভ হয়েছিল। কিন্তু সরাসরি সেনার গায়ে আঁচ লাগেনি।

Advertisement

জমি কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত একটি মামলার কারণে ইমরানকে মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাই কোর্ট চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়। আল কাদির ট্রাস্টের জমি হস্তগত করার অভিযোগ সম্প্রতি ইমরানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার জামিন নিতেই মঙ্গলবার সকালে ইসলামাবাদ হাই কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। আদালত চত্বরে ঢোকার আগেই তাঁকে গ্রেফতার করে আধাসামরিক রেঞ্জার্স বাহিনী। গ্রেফতারির কয়েক ঘণ্টা পরে ইমরানকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় পাক রেঞ্জার্স। পাশাপাশি, অশান্তি এড়াতে মঙ্গলবার বিকেলে ইসলামাবাদ জুড়ে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। ইমরানের দল পিটিআই-এর তরফে ‘ক্যাপ্টেনের’ গ্রেফতারির প্রতিবাদে দেশ জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক সমস্যায় জেরবার পাকিস্তানে নতুন করে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঘটনাচক্রে, গত সপ্তাহেই ইমরান প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন পাক সেনার মেজর জেনারেল ফয়জল নাসের গত নভেম্বরে পাক পঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে তাঁর উপর হামলার ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রী। তার পরেই ওই গ্রেফতারি। ওই হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ইমরান।

গ্রেফতারির সময় ইমরান সমর্থকেরা বাধা দিলে হাই কোর্ট চত্বরে তাঁদের সঙ্গে রেঞ্জার্স বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে। প্রসঙ্গত, জমি দুর্নীতির ওই মামলায় আগেই প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়কের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল নিম্ন আদালত। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ইমরান এবং তাঁর স্ত্রী মানেকার মালিকানাধীন ওই ট্রাস্ট বেআইনি ভাবে একটি বাণিজ্যিক সংস্থার থেকে প্রায় ৫৩ কোটি টাকা মূল্যের জমি নিয়েছিল। কিন্তু ঘটনাচক্রে, সোমবারই পাক সেনা ইমরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তাঁকে।

১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯৬ সালে রাজনীতির ময়দানে এসেছিলেন ইমরান। দুর্নীতি বিরোধী স্লোগান তুলে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। পরের বছর ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দু’টি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও হেরে যান। তবে তাতে থামেননি। ২০০২ সালে মিয়াওয়ালি থেকে পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ভোটে জয়ী হন। প্রথমে তৎকালীন সেনাশাসক পারভেজ মুশারফকে সমর্থন দিলেও ২০০৭ সালে ৮৫ জন পার্লামেন্ট সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পদত্যাগ করেন ইমরান। সে বারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হয়ে মুশারফ পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারি করেন। গৃহবন্দি করা হয় ইমরানকে। কিছুদিন হাজতবাসও করতে হয়।

তবে রাজনৈতিক লড়াই থামাননি তিনি। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের দশম নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম হয়। এর পর ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির একাদশ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন। ১৮ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। কিন্তু দলের অন্দরে বিদ্রোহের জেরে অন্য পাক প্রধানমন্ত্রীদের মতোই মেয়াদ শেষের আগে গত বছরের ১০ এপ্রিল ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে। ক্ষমতা হারানোর পরে ইমরান সরাসরি তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement