Protest Against Donald Trump

‘মহান নয়, স্বাভাবিক করা হোক আমেরিকাকে’! কর্মীছাঁটাই থেকে গাজ়া, ট্রাম্পের নীতিতে অসন্তুষ্ট মার্কিন জনতা, দেশ জুড়ে ক্ষোভ

আমেরিকার সরকারি কর্মীদের ছাঁটাই করা নিয়ে ক্ষোভ জমেছে সে দেশের সাধারণ মানুষের মনে। শুল্কনীতি ঘিরেও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। গাজ়া, ইজ়রায়েলের প্রসঙ্গে ট্রাম্পের অবস্থান নিয়েও ক্ষুব্ধ মার্কিন জনতার একাংশ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ২২:০০
রবিবার (ভারতীয় সময় অনুসারে) আমেরিকার রাস্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।

রবিবার (ভারতীয় সময় অনুসারে) আমেরিকার রাস্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবি: রয়টার্স।

সবে তিন মাস হয়েছে আমেরিকায় ক্ষমতায় ফিরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় বার দায়িত্ব নেওয়ার ৭৬ দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন মার্কিন জনতা। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, ফ্লোরিডা, মিনেসোটা, ডেলাওয়ার, ক্যালিফর্নিয়া, কেন্টাকি, মিশিগান, টেক্সাস, কানেটিকাট, নিউ হ্যাম্পশায়ার, লস অ্যাঞ্জেলস-সহ আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ। শুধু আমেরিকাতেই নয়, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, পর্তুগালেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অসন্তোষের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, রবিবারের (ভারতীয় সময় অনুসারে) পর সোমবারও আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন টেসলার বেশ কিছু শো-রুমের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে পারেন মার্কিন জনতা।

Advertisement

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক নীতি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অসন্তোষ দানা বেঁধেছে মার্কিন জনতার মনেও। রবিবার তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল গোটা আমেরিকা জুড়ে। প্রায় হাজার দশকে মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন ব্যাপক পরিসরে প্রতিবাদ এই প্রথম। কাঁধে আমেরিকার পতাকা, হাতে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড। প্রতিটি পোস্টারে, প্ল্যাকার্ডে উগরে দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শ্লেষ। গত বছর ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম স্লোগান ছিল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন’ অর্থাৎ, আমেরিকাকে আবার মহান করা হোক। যে স্লোগান ট্রাম্পকে ক্ষমতায় ফিরিয়েছে, সেই স্লোগানেরই বিরোধিতা দেখা গেল শনিবার। আমেরিকার রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ দেখা গেল, ‘মহান নয়, স্বাভাবিক করা হোক আমেরিকাকে’।

রবিবার আমেরিকার রাস্তায় ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভে উঠল ইউক্রেনের প্রসঙ্গও।

রবিবার আমেরিকার রাস্তায় ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভে উঠল ইউক্রেনের প্রসঙ্গও। ছবি: রয়টার্স।

টেসলা কর্তা ইলন মাস্ক বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম পরামর্শদাতা। আমেরিকার সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। ইলন ওই দফতরের দায়িত্ব গ্রহণের পরে প্রচুর ফেডারেল কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে বিভিন্ন দফতর থেকে। টেসলা কর্তার অবশ্য দাবি, তিনি আমেরিকার করদাতাদের টাকা ‘অকাজে’ ব্যয় হওয়া আটকাচ্ছেন। সম্প্রতি একের পর এক সরকারি দফতরে কর্মীছাঁটাই ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমেরিকায় রূপান্তরকামীদেরও চিন্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন সেনায় রূপান্তরকারীদের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। যদিও ওই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। শনিবার আমেরিকা জুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে প্রচুর রূপান্তরকামীও শামিল হয়েছিলেন।

ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন ব্যাপক পরিসরে বিক্ষোভ এই প্রথম।

ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এমন ব্যাপক পরিসরে বিক্ষোভ এই প্রথম। ছবি: রয়টার্স।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্কনীতিতে অন্য দেশগুলি যেমন প্রভাবিত হয়েছে, তেমন প্রভাব পড়েছে মার্কিন মুলুকেও। আমেরিকার শেয়ার বাজারে এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের আবহে ওয়াল স্ট্রিটের টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি শুল্কনীতির জন্য আমেরিকার বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে মার্কিন জনতার। ঘটনাচক্রে এই উত্তেজনার আবহেই রবিবার ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার অন্যতম ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ইজ়রায়েল। ট্রাম্পের শুল্কনীতির ঘা খেয়েছে তারাও। এই পরিস্থিতিতে সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে নেতানিয়াহুর। সেখানে উঠে আসতে পারে শুল্কের প্রসঙ্গও।

ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারী আমেরিকানদের।

ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারী আমেরিকানদের। ছবি: রয়টার্স।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় জমানায় প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকায় সামাজিক সুরক্ষার বিষয়েও। সে দেশের বেশ কিছু সামাজিক সুরক্ষা অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির পাশাপাশি ট্রাম্প জমানার বিদেশনীতি নিয়েও ক্ষোভ জমেছে সে দেশের সাধারণ মানুষের একাংশের মনে। ইউক্রেন, গাজ়া, কানাডা, গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে আমেরিকার অবস্থানের বিরুদ্ধে শনিবার প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে আমেরিকার মাটিতেই। প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক সামরিক জোট ‘নেটো’য় আমেরিকার ভূমিকা নিয়েও।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সব নীতির প্রতিবাদে শনিবার আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখালেন সাধারণ মানুষেরা। দিকে দিকে স্লোগান উঠল, ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’। গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার দাবি প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নামেন তাঁরা। কোথাও স্লোগান উঠল, “ফ্যাসিবাদ এখনও জীবিত এবং তা রয়েছে হোয়াইট হাউসে।” শনিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কত জন শামিল হয়েছিলেন, তার চূড়ান্ত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স’ জানিয়েছে, ছ’লক্ষের বেশি মানুষ এই প্রতিবাদে শামিল হওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন