(বাঁ দিক থেকে) নওয়াজ শরিফ, ইমরান খান এবং বিলাবল ভুট্টো জারদারি। ফাইল চিত্র।
দু’দিন পেরিয়ে গেলেও ভোট গণনা শেষ হয়নি। এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে ফল ঘোষণা করেনি পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পিটিআই ৮৪টি, পিএমএলএন ৭১টি, পিপিপি ৫৩টি, জামাত ২টি এবং অন্যান্য়রা ২৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
ভোটগণনা চলাকালীন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) সাহায্যে ‘বিজয়ভাষণ’ দিয়েছেন। তাতে তাঁর দাবি, ‘‘নওয়াজ শরিফের ‘লন্ডন পরিকল্পনা’ ব্যর্থ হয়েছে। পাকিস্তানের জনতা আমাদের বিপুল ভাবে সমর্থন করেছেন।’’ এর পরেই জনতার উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। এ বার তা রক্ষার দায় আপনাদেরই।’’
ইমরানের দল সমর্থিত বিজয়ী নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গড়াল ইঙ্গিত দিল নওয়াজের দল পিএমএল-এন। নওয়াজের দলের এক নেতা বলেন, “জয়ী নির্দল প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা সংবিধান মেনেই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দলে যোগ দেবেন।” যদিও পিটিআই সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়েছে।
লাহোরের একটি আসনে ইমরানের দল সমর্থিত নির্দল প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেন ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল চক্রী হাফিজ সইদের পুত্র তালহা হাফিজ।
বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের দিন ৫১টি জঙ্গি হামলায় ১০ নিরাপত্তা আধিকারিক-সহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৯ জন। পাক সেনার মিডিয়া শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনকে উদ্ধৃত করে এই খবর জানিয়েছে সে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলি।
ফের এগিয়ে গেলেন ইমরানের দল পিটিআই সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। আপাতত ২৪টি আসনে এগিয়ে পিটিআই প্রার্থীরা। ২০টি আসন দখলে রেখে দ্বিতীয় স্থানে বিলাবলের দল পিপিপি। ১৮টি আসন দখলে রেখে তৃতীয় স্থানে নওয়াজের পিএমএল-এন।
গণনার শুরুতে আসন সংখ্যার নিরিখে নওয়াজ এবং ইমরানের দলের পর ছিল পিপিপি। তবে বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাবল ভুট্টো জারদারির দলই আপাতত সবচেয়ে বেশি আসন নিজেদের দখলে রেখেছে। তাদের দখলে আছে ১৫টি আসনে। তার পরেই আছে নওয়াজের দল পিএমএল-এন (১৩)। বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে ইমরানের দল পিটিআই (৯)। নির্দলদের দখলে ২টি আসন।
বেলা গড়াতেই ইমরানকে ছাপিয়ে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন ইমরান। বেশ কয়েকটি আসনে প্রথমে এগিয়ে গিয়েও পরে পিছিয়ে গিয়েছেন ইমরানের দল সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত। জয় এবং এগিয়ে থাকার নিরিখে ১২টি আসন দখলে রেখেছে নওয়াজের দল পিএমএল-এন। ৮টি আসনে ইমরানের পিটিআই। বিলাবলের পিপিপি জয় এবং এগিয়ে থাকার নিরিখে ৮টি আসনে দখলে রেখেছে। নির্দলেরা এগিয়ে রয়েছে ২টি আসনে। মনে করা হচ্ছে ভোটের সামগ্রিক ফল স্পষ্ট হতে রাত পেরিয়ে যাবে।
দলগুলি নিজেদের গড় মোটের উপর ধরে রাখতে পেরেছে বলে প্রাথমিক গণনায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের শক্ত ঘাঁটি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অন্তত তিনটি আসনে জয় পেয়েছেন ইমরানের দল সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। আবার সিন্ধ প্রদেশে ‘লড়াই’ দিচ্ছে বেনজির ভুট্টোর পুত্র তথা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাবলের দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
অধিকাংশ আসনেই টক্কর চলছে ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত নির্দল এবং নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) প্রার্থীদের মধ্যে। প্রসঙ্গত, একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান এখন জেলে বন্দি। তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইমরানের দল পিটিআই-এর নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট কেড়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে অনেক পিটিআই কর্মীসমর্থক নির্দল প্রার্থী হিসাবে অন্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইতে নামেন। খুব পিছিয়ে নেই বিলাবলের পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-ও।
প্রাথমিক গণনার গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, জেলবন্দি ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) যে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করেছিল, তাঁদের অনেকেই এগিয়ে রয়েছেন। সে দেশের রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি ছিল, পাক সেনার সমর্থন নিয়ে এই নির্বাচনে বিপুল জয় পাবে নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। তবে সেই দাবির সত্যতা এখনও পর্যন্ত মেলেনি বলেই পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ভোটগ্রহণ পর্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ হয়েছিল পাকিস্তানে। কিন্তু শুক্রবার ভোরের আগে গণনাই শুরু করা যায়নি সেখানে। শেষমেশ নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোর ৩টের সময় সাংবাদিক বৈঠক করে প্রাথমিক ফলাফল জানানো হয়। অধিকাংশ আসনেই এখনও গণনা চলছে। গণনায় বিলম্বের জন্য মোবাইল এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকেই দায়ী করা হচ্ছে।