শেখ হাসিনা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ছাত্র আন্দোলন মোকাবিলায় আরও কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে আক্রমণ করেছেন তিনি। ‘নৈরাজ্য’ মোকাবিলায় কঠোর হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামী লীগের নেত্রী হাসিনা।
‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘অসহযোগ কর্মসূচি’ ঘিরে যে অশান্তির সূত্রপাত হয়, তাতে কেবল রবিবারেই অন্তত ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ১৪ জন পুলিশকর্মীও। হামলা, পাল্টা হামলায় জখম শতাধিক মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শাসকদল আওয়ামী লীগের কর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাসিনা। ‘প্রথম আলো’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার ই আলম সরকারকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হাসিনা ‘নৈরাজ্য’ দমনে এগিয়ে আসার জন্য দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাসিনা বৈঠকে বলেন, ‘‘যাঁরা হিংসা চালাচ্ছেন, তাঁরা কেউই ছাত্র নন, তাঁরা সন্ত্রাসবাদী।’’
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশ। প্রবল জনরোষের মুখে পড়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও ন’দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
ধৃত আন্দোলনকারীদের মুক্তি, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার, কোটা আন্দোলনে হামলাকারীদের শাস্তি-সহ আরও বিভিন্ন দাবি ছিল আন্দোলনকারী ছাত্রদের। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহে পুলিশ-প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের যৌথ ‘হামলা’য় একের পর এক মৃত্যুর পর এখন নয় দফা দাবির পরিবর্তে একটি মাত্র দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন— হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। অন্যথায় সর্বাত্মক অসহযোগের ডাক দিয়েছে তারা।
‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে উল্লেখ, বাংলাদেশে রবিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯৭ জনের। নরসিংদীতে ছ’জন, ফেনীতে আট জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ-সহ মোট ২২ জন এবং কিশোরগঞ্জে চার জন, ঢাকায় চার জন, বগুড়ায় চার জন, মুন্সিগঞ্জে তিন জন, মাগুরায় চার জন, ভোলায় তিন জন, রংপুরে চার জন, পাবনায় তিন জন, সিলেটে চার জন, কুমিল্লায় পুলিশ সদস্য-সহ তিন জন, শেরপুরে দু’জন, জয়পুরহাটে এক জন, হবিগঞ্জে এক জন, ঢাকার কেরানিগঞ্জে এক জন এবং বরিশালে এক জন-সহ ৭৫ জন নিহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্ফু জারি করা হয়েছে বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকা-সহ সব জেলা সদর, বিভাগীয় সদর, মহকুমা, পুরসভা এলাকা, উপজেলায় জারি হয়েছে কার্ফু। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্ফু জারি থাকবে। সোমবার থেকে পরবর্তী তিন দিন বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। বন্ধ করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও।