Mamata Banerjee on Akhil Giri

রাতারাতি অখিলকে ছেঁটে ফেলে বিরোধীদের পালের হাওয়া কেড়ে নিলেন মমতা, বার্তা দিলেন বাকিদেরও

অখিল গিরি বিতর্ককে হাতিয়ার করে সমালোচনায় সরব হয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু প্রথম থেকেই অখিলের বিরুদ্ধে তৃণমূল ছিল খড়্গহস্ত। তাই বিরোধীরা সে ভাবে মুখর হওয়ার সুযোগই পায়নি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ১৭:৩১

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

তাজপুরে মহিলা বন আধিকারিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পরে কারামন্ত্রী অখিল গিরিকে ছেঁটে ফেলেছে তৃণমূল। রবিবারই মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিতে বলে তাঁর কাছে নির্দেশ যায়। বিকেলে অখিল জানিয়ে দেন, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন। আর তার মধ্য দিয়ে অখিল প্রসঙ্গে রাতারাতি পদক্ষেপ করে বিরোধীদের পালের হাওয়া কেড়ে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিতর্ক নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সে ভাবে গলা তুলতেই পারল না বিরোধীরা। কারণ, প্রথম থেকেই প্রকাশ্যে আসা অখিলের কুকথার ভিডিয়ো নিয়ে তৃণমূল ছিল খড়্গহস্ত। বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেসের বিরোধী স্বর তাতেই চাপা পড়ে যায়।

Advertisement

শনিবার তাজপুরে বন আধিকারিক মনীষা সাউয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন কারামন্ত্রী অখিল। প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ‘জানোয়ার’, ‘বেয়াদব’ জাতীয় শব্দও তাঁর উদ্দেশে ব্যবহার করেছিলেন। এই ঘটনার পর প্রথম অখিলের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে সরব হয় বিজেপি। দলের পক্ষে ভিডিয়োটি ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দলের মহিলা বিধায়ক নেত্রীদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। মহিলার উপরে আক্রমণ অভিযোগে শামিল হন অগ্নিমিত্রা পাল, চন্দনা বাউড়ি থেকে ফাল্গুনী পাত্রেরা। কিন্তু সেই বিরোধী স্বর নিমেষেই চাপা পড়ে যায়। তৃণমূলের তরফেই অখিলের মন্তব্য এবং আচরণের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। দল যে অখিলের পাশে নেই, প্রথম থেকেই তা বোঝানো হয়েছিল। তা যেমন রামনগরের বিধায়ককে তেমনই বিরোধীদেরও। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সাফ বলে দিয়েছিলেন, ‘‘অখিলের আচরণ অবাঞ্ছিত। বন দফতর নিয়ে কিছু বলার থাকলে তিনি মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা (রাজ্যের বন প্রতিমন্ত্রী)-কে বলতে পারতেন। তার বদলে মহিলা অফিসারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার দুর্ভাগ্যজনক।’’ একই সঙ্গে বিরোধীদের নিয়ে কুণাল বলেছিলেন, ‘‘তবে সিপিএম, বিজেপির এ নিয়ে বলার অধিকার নেই। ওরা এর থেকেও অনেক কুৎসিত কাজ বার বার করেছে।’’ প্রথম থেকেই যে বিরোধীদের দমিয়ে দিতে চেয়েছে তৃণমূল, কুণালের মন্তব্যেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

অখিল অবশ্য এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। মমতা নিজে যা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। অখিলকে সে বারও ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। ক্ষমা করেছিলেনও মমতা। কিন্তু দ্বিতীয় বার আর তাঁকে ক্ষমা করলেন না নেত্রী। মনে রাখতে হবে, অখিল পূর্ব মেদিনীপুরের নেতা। দলের অন্দরে তাঁর গুরুত্ব কম নয়। তৃণমূলের শুরুর পর্ব থেকে তিনি দলে আছেন। অখিলকে দিয়েই পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারীদের ঠেকাতে নেমেছিলেন মমতা। ওই জেলায় অধিকারীদের পাল্টা হিসাবে তৃণমূলের হাতে ছিলেন অখিল। তাঁর পুত্র সুপ্রকাশ গিরিও। যিনি এখন দীর্ঘ সময় অধিকারীদের দখলে থাকা কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান। কিন্তু এই প্রশ্নে সেই সব বিষয়রেও তোয়াক্কা করেননি নেত্রী।

পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারীদের বিরুদ্ধে অখিল নামক ‘ট্রাম্পকার্ড’টি যে এত সহজে ছেঁটে ফেললেন মমতা, তার অবশ্য অন্য ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, মমতা জানেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও অখিলের পক্ষে অধিকারীদের সঙ্গে মিশে যাওয়া কঠিন। জেলায় তিনি একা পড়ে যাবেন। ফলে সে অর্থে তিনি আর ‘ফ্যাক্টর’ থাকবেন না। পক্ষান্তরে, অখিলকে কড়া শাস্তি দিয়ে দল এবং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করা গেল। বিরোধীদেরও এই ইস্যুতে মাথা তুলতে দেওয়া হল না।

অখিলকে ছেঁটে ফেলে ঘরে এবং বাইরে বার্তা দিলেন মমতা। এক দিকে যেমন, দলের অন্দরে নেত্রী মমতার বার্তা গেল— বেয়াদবি করলে দল তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না, অন্য দিকে, তেমন প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বার্তা গেল— নির্ভয়ে আধিকারিকেরা কাজ করতে পারেন, সরকার এবং শাসকদল পাশেই আছে।

লোকসভা নির্বাচনে এ বার রাজ্যে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। ৪২টির মধ্যে ২৯টি আসনেই তারা জয় পেয়েছে। এই জয়ের পর মমতা দলকে সংযত থাকার বার্তা দিয়েছিলেন। মানুষের ভরসা রক্ষার স্বার্থেই দলের নেতা এবং কর্মীদের সংযত থাকতে হবে। অন্যায় করলে দল কাউকেই বরদাস্ত করবে না, বলে দিয়েছিলেন মমতা। অখিলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে সেই বার্তাই আরও স্পষ্ট করে দেওয়া হল। একই সঙ্গে বিতর্ক তৈরি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিরোধীদের ‘চুপ’ করিয়ে দিল তৃণমূল।

আরও পড়ুন
Advertisement