Solar Wind

Nasa Solar Probe: সূর্যকে ছুঁয়ে ফেলল নাসা, কাছের নক্ষত্রকে আরও কাছ থেকে জানার দরজা খুলল

উপগ্রহ চাঁদকে এতদিনে অনেকটাই চিনে ফেলা গিয়েছে। কাছের গ্রহ মঙ্গল— সেখানেও এখন যাতায়াত করা যায়। এবার সূর্যকে আরও কাছ থেকে জানার দরজা খুলল।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:১৫
সূর্যের কোরোনায় সৌরঝড়ের এই ছবি দিয়েই সাফল্যের ঘোষণা করেছে নাসা।

সূর্যের কোরোনায় সৌরঝড়ের এই ছবি দিয়েই সাফল্যের ঘোষণা করেছে নাসা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সূর্যকে ছুঁয়ে দেখল নাসা। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র, যার আলোয় দিনরাত শ্বাস নিয়ে পৃথিবী বাঁচছে, তার সদর দরজা খুলে একেবারে ‘উঠোনে’ ঢুকে পড়ল নাসা। কুড়িয়ে আনল নমুনাও। মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল। এই প্রথম পৃথিবীতে তৈরি কোনও মহাকাশযান তো বটেই, কোনও বস্তু ছুঁয়ে দেখল সূর্যকে! মঙ্গলবার আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এই ঘোষণা করেছে।

উপগ্রহ চাঁদকে এতদিনে অনেকটাই চিনে ফেলা গিয়েছে। কাছের গ্রহ মঙ্গল— সেখানেও এখন যাতায়াত করা যায়। এবার কাছের নক্ষত্রকে আরও কাছ থেকে জানার দরজা খুলল। নাসার এই কৃতিত্বে উৎসাহিত বিজ্ঞানীদের আশা, এবার চাঁদ-মঙ্গলের মতো সূর্যেরও রহস্য জানা যাবে।

Advertisement

সূর্যের বহিরাবরণ, যাকে ‘কোরোনা’ বলা হয়, তা ভেদ করে সূর্যের ভিতরে প্রবেশ করেছে নাসার সৌরতদন্ত যান ‘পার্কার’। এই ‘কোরোনা’-কে চলতি কথায় সূর্যের ‘উঠোন’ বলা যায়। মূল বাড়ি আর সদর দরজার মধ্যে যেমন একটা নিরাপদ দূরত্ব থাকে, অনেকটা সেই রকম। তবে এই এলাকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রবল। চৌম্বক ক্ষমতাও তীব্র। এতটাই ক্ষমতা ওই দুই শক্তির, যে তা সৌরপদার্থকে ওই বহিরাবরণ পেরিয়ে বার হতে দেয় না। নিরাপদে থাকে সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহ।

পার্কার সেই চত্বরে প্রবেশ করেছে। শুধু তা-ই নয়, সেখান থেকে সৌরপদার্থের নমুনা প্লাজমাও সংগ্রহ করেছে পার্কার।

২০১৮ সালে পৃথিবী থেকে সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল পার্কার। এর আগে বেশ কয়েক বার সূর্যের কাছাকাছিও পৌঁছেছে। তবে এই প্রথম ওই মহাকাশযান সূর্যকে ছুঁয়ে দেখল। সংগ্রহ করল সৌরপদার্থ এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের নমুনা। আগামী দিনে যা পরীক্ষানিরীক্ষা করে শুধু সূর্য নয়, ছায়াপথের অন্য নক্ষত্রকেও চেনা যাবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। তবে নাসার এই সৌরতদন্তের সরাসরি উপকার পাবে ভারতের মতো উপগ্রহ নির্ভর দেশগুলি।

সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে এর আগে কাজ করেছেন বিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী। হার্ভার্ডের স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের সঙ্গে যুক্ত দিব্যেন্দু জানাচ্ছেন, পার্কারের সৌরতদন্তের এই সাফল্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সৌর হাওয়ার উৎপত্তিকে জানা। এর আগে সৌর হাওয়া কী ভাবে সূর্য থেকে পৃথিবীতে এসে পৌঁছয় তা জেনেছিল পার্কার। তবে এ বার সূর্যের কোরোনায় প্রবেশ করে চৌম্বকক্ষেত্র এবং প্লাজমার নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ থেকে সৌর হাওয়ার উৎপত্তি কী ভাবে, কখন হচ্ছে তা জানা যাবে।

কিন্তু তাতেই বা লাভ কীসের? দিব্যেন্দুর কথায়, ‘‘সৌর হাওয়া পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে। তাতে নানা রকম ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাওয়ার গ্রিড। এর আগে মেরু এলাকার কাছাকাছি বহু দেশ এ ধরনের ক্ষতির মুখোমুখিও হয়েছে।’’ তবে ভারতে সৌর হাওয়া থেকে ক্ষতি হবে অন্য ভাবে। দিব্যেন্দু জানাচ্ছেন, সৌর হাওয়া বায়ুমণ্ডলে আঘাত করার সময় উপগ্রহের ক্ষতি করতে পারে। ভারত যে হেতু উপগ্রহ নির্ভর বহু পরিষেবা ব্যবহার করে, মোবাইল থেকে শুরু করে টিভি এমনকি প্রতিরক্ষাও উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে, তাই উপগ্রহের ক্ষতি হলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে। সেক্ষেত্রে পার্কার যদি সৌর হাওয়ার উৎপত্তির রহস্য ভেদ করতে পারে। তবে আগাম সতর্ক হওয়া যাবে। আটকানো যাবে সম্ভাব্য ক্ষতি।

একই সঙ্গে সূর্য কী ভাবে পৃথিবী বা অন্য গ্রহের বিবর্তনে সাহায্য করেছে, কী ভাবে সূর্য নিজে তৈরি হয়েছে, পার্কারের এই সফল অভিযানে তা-ও জানার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করছে নাসা।

Advertisement
আরও পড়ুন