Muhammad Yunus

করের হার ৩ গুণ বাড়ালেন ইউনূস, সমালোচনা সর্বত্র

রেস্তরাঁ মালিকেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে না নিলে তাঁরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৫
মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

এক দিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে, একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে শ্রমিকেরা রাস্তায়, তার উপরে এক ঝাঁক সামগ্রী ও পরিষেবায় চড়া হারে কর চাপানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। সরকারি সূত্রের খবর আইএমএফ-এর ফর্মুলা মেনেই এই সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে করের প্রধান উৎস মূল্য-সমন্বিত-কর বা ভ্যাট। ৪৩টি পণ্য ও বহু পরিষেবায় এই ভ্যাট দুই বা তিন গুণ বাড়ানো হচ্ছে, যাকে ‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’ বলছেন ব্যবসায়িক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা। রেস্তরাঁ মালিকেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে না নিলে তাঁরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবেন।

Advertisement

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ যদিও দাবি করেছেন, সরকার চাল-ডালের মতো অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীতে ইতিমধ্যেই শুল্কছাড় দেওয়ায় এই করবৃদ্ধি মূল্যবৃদ্ধির কারণ হবে না। তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি ইউনূস সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন— দেশের মানুষকে সুরাহা দিতে তাঁদের ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্দেশ মেনে করের বোঝা চাপানোর জন্য নয়। রিজভি বলেন, “সরকারকে দেখতে হবে— মানুষের পেটে ক্ষুধা আছে কি না, মানুষ ঠিক মতো খেতে পাচ্ছে কি না, এটিই ইউনূস সরকারের দায়িত্ব। আইএমএফ-এর চাপে কর বাড়াতে পারে না সরকার।” বিএনপি নেতার দাবি, দ্রুত জনসমর্থন হারাচ্ছে ইউনূস সরকার। হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক বলেন, “উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে শতাধিক পণ্যের ভ্যাট বৃদ্ধি 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা'। সরকারের নিজেদের ব্যর্থতার জন্য সাধারণ মানুষ শাস্তি পেতে পারেন না।”

রেস্তরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে জানান, রেস্তরাঁ ব্যবসার উপরে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) নামে ১০ শতাংশ কর আগে থেকেই আছে। অর্থাৎ কর ও শুল্ক যোগ হলে খাবারের দামের সঙ্গে আরও ২৫ শতাংশ বেশি দাম গ্রাহকদের দিতে হবে। হাসান বলেন, “বিত্তবানরা এই ভ্যাট দিতে পারেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি অবাস্তব।” তাঁর দাবি, ইউনূস সরকার যে পরিমাণ কর চাপাচ্ছে, পৃথিবীর কোনও দেশে খাবারে এত কর নেই। হাসান বলেন, “আগের সরকারের মতোই এই সরকারও বড় ব্যবসায়ীদের বড় বড় ছাড় দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে।” ইউনূস সরকারকে ‘এনজিও সরকার’ আখ্যা দিয়ে হাসান জানান, সরকার ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে না নিলে তাঁরা অনির্দিষ্ট কালের জন্য রেস্তরাঁ বন্ধ করে দেওয়ার পথে হাঁটবেন।

কনজ়িউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যে সব পণ্যের ভ্যাট বাড়ানোর কথা হচ্ছে, সিগারেট বাদে প্রত্যেকটিই জীবন মানের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। এগুলোর দাম বেড়ে গেলে মানুষের জীবন মান বজায় রাখার ব্যয় বেড়ে যাবে। ফলে মূল্যবৃদ্ধিও বাড়বে।”

দ্বিগুণ-তিন গুণ ভ্যাট বাড়ালেও মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে না বলে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি সমীক্ষক সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর প্রধান মাশরুর রিয়াজ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, “এই অবস্থায় ভ্যাট-এর হার বাড়ানো হলে নিশ্চিত ভাবেই মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে। এমনকি এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থনীতিতে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”

এর মধ্যেই বুধবার মোটরসাইকেল, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ এবং কম্প্রেসর নির্মাতা সংস্থাগুলির আয়করের হার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সরকারের কোপে পড়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কথায়, “দ্বিগুণ আয়কর দিতে হবে পণ্যের দাম বাড়িয়েই। মন্দার বাজারে সামগ্রীর দামবৃদ্ধি নিশ্চিত ভাবেই বিক্রি কমাবে।”

Advertisement
আরও পড়ুন