মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। —ফাইল ছবি।
মলদ্বীপে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে ‘ভারত-বিরোধী’ সুর। সে দেশ থেকে সেনা সরানোর জন্য ভারতকে সরকারি ভাবে জানিয়েও ছিলেন। এ বার ‘চিন-ঘনিষ্ঠ’ মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর গলাতেই শোনা গেল নরম সুর। জানালেন, ভারত মলদ্বীপের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’-ই থাকবে। নয়াদিল্লির কাছে ঋণ মকুবের আর্জি জানিয়ে এই কথা বলেন তিনি। গত বছরের শেষে ভারত থেকে ৪০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল মলদ্বীপ। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২,৯০০ কোটি টাকা।
গত নভেম্বরে মলদ্বীপে ক্ষমতায় এসেছেন মুইজ্জু। তার পর থেকে সে দেশ থেকে সেনা সরানোর জন্য ভারতকে জানিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বসেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। মুইজ্জুর দাবি, সেখানে ভারত জানিয়েছে, আগামী ১০ মের মধ্যে মলদ্বীপের তিনটি বিমান ঘাঁটি থেকেই সেনা সরিয়ে নেবে ভারত। এই আবহে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে মুইজ্জু জানিয়েছেন, মলদ্বীপকে সাহায্যের বিষয়ে ভারত অগ্রগণ্য। ‘বহু সংখ্যক’ প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে। ‘মিহারু’ সংবাদমাধ্যমকে তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারত মলদ্বীপের ঘনিষ্ঠ সহযোগী থাকবে। এই নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই।
ভারতীয় সেনাদের একটি দল ইতিমধ্যে মলদ্বীপ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। তার পরেই মুইজ্জুর মুখে প্রশস্তি। গত কয়েক বছর ধরে মলদ্বীপে রয়েছে ভারতের দু’টি হেলিকপ্টার এবং একটি বিমান। অসুস্থদের এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে নিয়ে যায় সেগুলি। জরুরিকালীন পরিষেবার কাজে ব্যবহৃত হয়। সেগুলি চালনার জন্য মলদ্বীপে মোতায়েন ছিল ভারতীয় সেনা। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পেও সাহায্য করেছে ভারত। পরিবর্তে ভারত মহাসাগরে নজরদারি চালানোর ক্ষেত্রে মলদ্বীপের অবস্থান নয়াদিল্লিকে বড় সাহায্য করেছে।
সাক্ষাৎকারে মুইজ্জু আরও বলেন, ‘‘ভারতের থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। পূর্বসূরিদের আমল থেকে। সে কারণে আমরা আলোচনা করছি, যাতে ঋণ মেটানোর ক্ষেত্রে নরম পদক্ষেপ করা হয়।’’ তিনি আরও জানিয়েছে, এর প্রভাব যাতে কোনও ভাবেই কোনও প্রকল্পে না পড়ে। প্রেসিডেন্টের আশা, ভারত এই ঋণ মেটানোর বিষয়টি আরও সহজতর করে তুলবে। এই নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। মুইজ্জুর আগে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইব্রাহিম মহম্মদ সলিহ্। তিনি ভারত-বন্ধু বলেই পরিচিত ছিলেন। সেই আমলে ভারত থেকে ১৪ লক্ষ ডলার ঋণ নিয়েছিল মলদ্বীপ। ভারতীয় মুদ্রায় ১১ কোটি টাকারও বেশি। মুইজ্জু জানান, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গেও এই ঋণের বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বলেছি আমি কোনও বর্তমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে চাই না। বরং সেগুলি আরও মজবুত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি।’’ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দুবাইয়ে মোদীর সঙ্গে সিওপি২৮ শীর্ষ সম্মেলনের সময় পৃথক বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেখানেই এই কথা বলেন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ভারতের সঙ্গে তাঁর একমাত্র ‘তর্কাতর্কি’-র বিষয় হল মলদ্বীপে সেনার অবস্থান। তাঁর দাবি, ভারত সেনা সরাতে রাজি হয়েছে। এটা মলদ্বীপের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।