মোসাদের সেই গুপ্তচর এলি কোহেন। ছবি: সংগৃহীত।
চরবৃত্তির অভিযোগে ৬০ বছর আগে প্রকাশ্যে ইজ়রায়েলি গুপ্তচরকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়েছিল সিরিয়া। তার পর সেই চরকে কোথায় কবরস্থ করা হয়, এত দিনেও তার হদিশ পায়নি ইজ়রায়েল। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারের পতন হওয়ার পর ফের সেই চরের দেহ ফেরানোর চেষ্টা করছে ইহুদিপ্রধান দেশটি। একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, আসাদ সরকারের পুরনো সদস্যদের সঙ্গে এই বিষয়ে সরাসরি কথা বলছেন ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের ডিরেক্টর ডেভিড বার্নিয়ে। এই কথোপকথনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে রাশিয়া।
১৯৬২ সালে মোসাদের গুপ্তচর হিসাবে সিরিয়ায় গিয়েছিলেন এলি কোহেন। সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিচয় নিয়ে যাওয়া কোহেন সে দেশে গিয়ে নাম বদলে হয়েছিলেন কামেল আমিন থাবেট। সিরিয়ার ব্যবসায়ী হিসাবে আরব বংশোদ্ভূতদের আস্থা অর্জন করতে প্রথমে সপরিবারে আর্জেন্টিনায় চলে যান কোহেন। ১৯৬২ সালে যান সিরিয়ায়। সেখানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজকীয় ভোজসভার আয়োজন করতেন তিনি। আর সেই সব বর্ণাঢ্য ‘পার্টি’তে যোগ দিতেন সিরিয়ার উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিকেরাও। অভিযোগ, তাঁদের কাছ থেকে সিরিয়ার সামরিক রণকৌশল জেনে নিতেন কোহেন। তার পর গোপনে পাঠিয়ে দিতেন ইজ়রায়েলে।
কিন্তু এই গোপন কৌশল বেশি দিন সফল হয়নি। রুশ গুপ্তচরদের সহায়তায় কোহেনের গোপন রেডিয়ো ট্রান্সমিটারটি শনাক্ত করে ফেলে সিরিয়া। তার পর তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে কোহেনকে গ্রেফতার করা হয়। ইজ়রায়েলের আর্জি, আপত্তি অগ্রাহ্য করে ১৯৬৫ সালের ১৮ মে রাজধানী দামাস্কাসের কেন্দ্রস্থলে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয় কোহেনকে।
তার পর একাধিক বার তাঁর দেহ সিরিয়া থেকে নিজেদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা করেছে ইজ়রায়েল। কিন্তু সফল হয়নি। অভিযোগ উঠেছে যে, ইজ়রায়েলকে ফাঁকি দিতে বার বার কোহেনের সমাধিস্থল বদলে দিয়েছে সিরিয়া। কয়েক বছর আগে মোসাদ কোহেনের হাতঘড়িটি উদ্ধার করতে পারলেও দেহ অধরা থেকে যায়। সিরিয়ার টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েল আবার সেই চেষ্টা শুরু করল বলেই একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি। এই বিষয়ে অবশ্য দুই দেশই এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি।
প্রসঙ্গত, কোহেনের গুপ্তচরবৃত্তি, তাঁর ধরা পড়া এবং ফাঁসি— রোমহর্ষক এই কাহিনি নিয়ে ছয় পর্বের সিরিজ়ও হয়েছে। ২০১৯ সালে একটি জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সেটি সম্প্রচারিত হয়।