India_Canada

খলিস্তানপন্থী জঙ্গি নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ভারতীয় হাইকমিশনার? দিল্লি বলল, ‘ট্রুডো সরকারের অপপ্রচার’

খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে ঘোষণা করেছিল ভারত। তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় একটি গুরুদ্বারের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:১৮
India slams Canada on Hardeep Singh Nijjar killing, says political agenda of Justin Trudeau government

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। জাস্টিন ট্রুডো (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

খলিস্তানপন্থী সন্ত্রাসবাদী হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে খুনের ঘটনার তদন্তে কানাডা সরকার সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারের দিকে ইঙ্গিত করায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরকারের এই পদক্ষেপ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অযৌক্তিক’।

Advertisement

কানাডা সরকারের তদন্তকারী সংস্থা নিজ্জর হত্যা মামলায় ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয়কুমার বর্মাকে ‘স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যক্তি’ বলে জানিয়েছে। যদিও কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হয়নি। সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কানাডা সরকার নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ পেশ করেনি।’’

ট্রুডোর অভিযোগকে, ‘রাজনৈতিক লাভের জন্য ভারতকে অপমান করার একটি ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার বলেও জানিয়েছে সাউথ ব্লক। রবিবার কানাডা সরকারের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে যাঁদের স্বার্থ জড়িত, সেই তালিকায় ভারতীয় হাই কমিশনারও রয়েছেন। কানাডার আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টরপন্থী খলিস্তানি গোষ্ঠীগুলির সমর্থন পাওয়ার জন্য ট্রুডো সরকার নতুন করে নিজ্জর বিতর্ক সামনে নিয়ে আসছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের একটি অংশ মনে করছে।

প্রসঙ্গত, খলিস্তানি নেতা নিজ্জরকে ২০২০ সালে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে ঘোষণা করেছিল ভারত। তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারের একটি গুরুদ্বারের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়। এর পরে নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের ‘ভূমিকা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন ট্রুডো। তার পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে। ট্রুডোর ওই অভিযোগের পর, প্রধানমন্ত্রী মোদী কানাডাকে দোষারোপ করেছিলেন, ভারত ভাগ করতে চাওয়া মৌলবাদী শক্তি খলিস্তানপন্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য।

নিজ্জর খুনে জড়িত সন্দেহে কয়েক জন ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূতকেও গ্রেফতার করে কানাডা পুলিশের ইন্টিগ্রেটেড হোমিসাইড ইনভেস্টিগেশন টিম (আইএইচআইটি)। এর পরে চলতি বছরের এপ্রিলে কানাডার নিরাপত্তা বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা (সিএসআইএস) সম্প্রতি তদন্ত রিপোর্টের নির্যাস প্রকাশ করে। তাতে দাবি করা হয়, ২০১৯ এবং ২০২১-এর সাধারণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পাকিস্তান এবং ভারত গোপনে সক্রিয় ছিল।

বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এর আগে কানাডাকে পাঠানো একটি নথিতে জানানো হয়েছিল, ১৯৯৬ সালে নিজ্জর পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কানাডায় গিয়েছিলেন। সেই সময়ে ট্রাকচালক হিসাবে কাজ করতেন তিনি। পাকিস্তানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। পঞ্জাবের জালন্ধরের বাসিন্দা নিজ্জর এর পরেই গুরনেক সিংহের ছত্রছায়ায় ক্রমশ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কুখ্যাত জগতে পরিচিতি তৈরি করেন। ১৯৮০ থেকে ’৯০-এর মধ্যে জঙ্গি সংগঠন খলিস্তান কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ২০১২ সাল থেকে খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান জগতার সিংহ তারার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। জগদীপের সূত্রেই নিজ্জরের পাক-যোগ গভীর হয়। পাকিস্তান থেকে ফিরে মাদক ও চোরাচালানে প্রাপ্ত অর্থ সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে ব্যবহার করতে শুরু করেন।

জগদীপের সঙ্গে যুক্ত হয়েই পঞ্জাবে নাশকতামূলক কার্যকলাপের ছক কষেছিলেন হরদীপ। কানাডায় নিজস্ব সংগঠন তৈরি করেন। ওই দলেরই সদস্য ছিলেন মনজিৎ সিংহ ধালিওয়াল, সর্বজিৎ সিংহ, অনুপবীর সিংহ, দর্শন সিংহেরা। ২০১৫ সালে হরদীপের দলের এই সদস্যেরা কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল ডসিয়েরে। ২০১৪ সালে হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচ্চা সউদায় হামলার ছক কষেছিলেন। নিজে ভারতে ঢুকতে না পারায় তার সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ ইজ়হার আলমকে নিশানা করার জন্য।

আরও পড়ুন
Advertisement