ব্রাজিলে জি২০ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে (বাঁ দিকে) এস জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে জি২০ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে মুখোমুখি বসলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা মেটার পর এটিই প্রথম বৈঠক দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীর। সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অঞ্চল থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে কথা হয়েছে উভয়ের। ২০২২ সালের জুন মাসে গালওয়ানে ভারত ও চিনা সেনার সংঘর্ষের পর থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। সামরিক স্তরে একাধিক বার আলোচনা হয়েছিল দু’দেশের। শেষে চলতি বছর অক্টোবরে রাশিয়ার কাজ়ানে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছয় দুই দেশ।
ভারত-চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন অঞ্চল থেকে সেনা সরানোর কাজ কত দূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে জি২০ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে আলোচনা হয় দু’দেশের মন্ত্রীর। বৈঠকের পর জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়েও কথা হয়েছে তাঁদের। পাশাপাশি বিশ্বের অন্য পরিস্থিতিগুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। চিনও চাইছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও মসৃণ করতে। দু’দেশের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠক শুরুর আগে চিনা বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্রও সেই আভাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চিন ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। পারস্পরিক ভরসা আরও বৃদ্ধি করতেও উৎসাহী চিন।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় এলএসি পেরিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন। সেখান থেকেই দু’দেশের সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা তৈরি হয়েছিল।
গালওয়ান-কাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে দফায় দফায় বৈঠক শুরু হয়েছিল। শেষে গত মাসে সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ভারত ও চিন ঐকমত্যে আসে। চার বছরের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থায় ইতি পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই দেপসাং, ডেমচক এলাকা থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত চার বছরে যত অস্থায়ী সেনাছাউনি তৈরি হয়েছিল, সেগুলিও সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দু’দেশই পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে। সেনা সরানোর চুক্তির পর এ বছরের দীপাবলিতে চিনা ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় সেনাকে মিষ্টি বিনিময় করতেও দেখা গিয়েছিল।