ভারতের তথ্য মানতে নারাজ বাংলাদেশ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হিসাবকে ‘অসত্য’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’ বলল মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সরাসরি না বলে একটু ঘুরিয়ে। শুক্রবার সংসদে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে এ বার নভেম্বর পর্যন্ত ২২০০টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেই খবর গুরুত্ব দিয়ে সব সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম শনিবার মন্তব্য করেছেন, “ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের যে সংখ্যা প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। এর সঙ্গে সত্যের মিল নেই।” সরকার সমর্থক একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্ট উল্লেখ করে আলম দাবি করেছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে মাত্র ১৩৮টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সরকারের দায় এড়ানোর জন্য প্রধান তিনি দাবি করেছেন, এই ১৩৮টি ঘটনার মধ্যে ৯৭টিই ঘটেছিল অগস্টের ৪ থেকে ৮ তারিখের মধ্যে। ৮ অগস্ট ইউনূস সরকার শপথ নেয়।
ইউনূসের প্রেসসচিব যখন সরকারকে আড়াল করছেন, শনিবার পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও নাটোরে সংখ্যালঘুদের ৪টি উপাসনালয়ে বড়সড় হামলা করা হয়েছে। নাটোরে গত রাতে ধর্মস্থানে হানা দিয়ে গ্রিল ভেঙে ভিতরে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। সেবায়েত তরুণকুমার দাস (৫৫)-কে পিছমোড়া করে বেঁধে লুটপাট করা হয়। চলে যাওয়ার সময়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। ধর্মস্থানটি থেকে কয়েক লক্ষ টাকার সামগ্রী এবং অর্থ লুট হয়েছে। সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়টি অপবিত্র করা হয়েছে। সকালে স্থানীয়রা শ্মশানের এই উপাসনালয়ে গিয়ে ভোগের ঘর থেকে সেবায়েতের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করার কথা বললেও গ্রেফতারের খবর নেই।
শুক্রবার রাতেই দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়িতে এক দল মৌলবাদী সংখ্যালঘুদের একটি উপসনালয় ভাঙচুর করে। তারা ইসকন-বিরোধী স্লোগান দিতে দিতে হামলা করে বলে স্থানীয়েরা জানিয়েছেন। আতঙ্কে স্থানীয় সংখ্যালঘুরা বাড়িছাড়া হন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাটায় একটি ধর্মস্থানেও হামলা করেছে মৌলবাদীরা।
বিলজোরা এলাকার পলাশকান্দাতেও একটি জনপ্রিয় ধর্মস্থানে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করেছে এক দল মৌলবাদী দুষ্কৃতী। পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক জনকে গ্রেফতার করেছে। ৪টি ঘটনায় এই একটি গ্রেফতারের ঘটনাই ঘটেছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সমালোচনা করায় ভারতকে শনিবার বিঁধেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির (প্রধান) শফিকুর রহমান। মৌলভিবাজারে দলের কর্মীসভায় আমির বলেন, “আপনারা নিজেদের চেহারা এক বার আয়নায় দেখুন— আপনারা সেখানে যাদের সংখ্যালঘু বলেন, তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেন।” তিনি অভিযোগ করেন, নানা রকম বিষয় তুলে ভারত বরাবর বাংলাদেশের সমাজকে বিভক্ত করে এসেছে। শফিকুর বলেন, “স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি-বিপক্ষের শক্তি, সমখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু— কত ভাবে যে তারা মানুষকে ভাগ করেছে। তারা বোঝে, টুকরো টুকরো জাতিকে গোলাম বানানো সহজ হয়।”