Bangladesh

গুলি চালানোর আগে মানতে হবে একগুচ্ছ নিয়ম! পুলিশের বন্দুকে লাগাম পরাবে ইউনূসের বাংলাদেশ!

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিদ্রোহী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালানোর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নীতি এবং ১৯৪৩-এর পুলিশ আইন মেনেই এই বদলগুলি আনতে চাইছে কমিশন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৮
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। — ফাইল চিত্র।

জুলাই বিপ্লবে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই বিক্ষোভ দমনে অবাধে গুলির ব্যবহার নিয়ে পরে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ পুলিশের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। সেই আবহেই এ বার পাঁচ দফা সুপারিশ জমা দিল পুলিশ সংস্কার কমিশন। বিক্ষোভ দমনে গুলির ব্যবহার কিংবা বলপ্রয়োগ নিয়ে জারি হল কড়াকড়ি।

Advertisement

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিদ্রোহী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালানোর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতি এবং ১৯৪৩-এর পুলিশ আইন মেনেই এই বদলগুলি আনতে চাইছে কমিশন। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে যত্রতত্র গুলি চালাতে পারবেন না পুলিশকর্মীরা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনও পরিস্থিতিতে বলপ্রয়োগ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়লেও সে ক্ষেত্রে পাঁচটি ধাপ মেনে চলতে হবে পুলিশকর্মীদের। প্রথমে কোনও শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়াই জনতাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বজায় রাখতে হবে নিরাপদ দূরত্বও। এর পর গুলি চালানো ব্যতীত অন্য কৌশল প্রয়োগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হবে। তাতেও কাজ না হলে তবেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন পুলিশকর্মীরা। কোনও সমাবেশ বা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অযথা বলপ্রয়োগ করা যাবে না। জনতা মারমুখী হয়ে উঠলে কিংবা ভাঙচুর করতে শুরু করলে তবেই পাল্টা আঘাত হানতে পারবে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে, প্রথমে জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, পেপার স্প্রে এবং সব শেষে শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে। শুধু আত্মরক্ষা কিংবা সরকারি সম্পত্তি রক্ষার প্রশ্নেই দলবদ্ধ ভাবে গুলি চালাতে পারবেন পুলিশকর্মীরা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য গড়া হয়েছিল সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে। সুপারিশে পুলিশ-প্রশাসন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ কমিশন গড়ার দাবিও রেখেছে তারা। যদিও রিপোর্টে ১১ সদস্যের কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও তার কাঠামোগত দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি।

গত বছরের জুলাইয়ে গণ অভ্যুত্থানের জেরে ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয় বহু ছাত্র-জনতার। পুলিশের রবার বুলেটে ‘শহিদ’ হন নিরস্ত্র ছাত্র আবু সাঈদ। প্রাণ হারান কোটা সংস্কার আন্দোলনের আর এক সক্রিয় কর্মী মীর মুগ্ধ। মিছিলের মাঝে আন্দোলনকারীদের হাতে হাতে জলের বোতল বিলি করছিলেন মুগ্ধ। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁরও। একের পর এক মৃত্যু বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। সেই নির্বিচারে গুলি চালানোর উপরেই এ বার রাশ টানতে চাইল ইউনূস সরকার।

Advertisement
আরও পড়ুন