ISCON

ইসকন-কে নিষিদ্ধ করতে চেয়ে মামলা, ধর্মগুরু কারাগারেই

এই মামলা ইসকন-কে নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত বলে মনে করছেন অনেকে। এ দিন বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে বাংলাদেশে ইসকন-কে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৩
জামিনের শুনানির সুযোগ না থাকায় চিন্ময়কৃষ্ণকে কয়েক দিন জেলেই থাকতে হচ্ছে।

জামিনের শুনানির সুযোগ না থাকায় চিন্ময়কৃষ্ণকে কয়েক দিন জেলেই থাকতে হচ্ছে। —ফাইল চিত্র।

এক আইনজীবীর রহস্যমৃত্যু ঘিরে চাপানউতোরের মধ্যেই ধর্মীয় সংগঠন ইসকন-কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার আর্জি জানিয়ে সে দেশের হাই কোর্টে মামলা করা হল। সেই মামলা গ্রহণ করে সরকারের মতামত জানতে চেয়েছে আদালত। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে গন্ডগোলের মধ্যে এক আইনজীবীকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাকাণ্ড ইসকন-এর সমর্থকেরা ঘটিয়েছে, এমন প্রচার করে বিভিন্ন জায়গায় তাদের মন্দির ও সমর্থকদের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এই মামলা ইসকন-কে নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত বলে মনে করছেন অনেকে। এ দিন বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে বাংলাদেশে ইসকন-কে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। সরকার সমর্থক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লা ও সারজিস আলমও চট্টগ্রামে গিয়ে এ দিন নাম না করে ইসকন-এর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে সোমবার ঢাকায় গ্রেফতার করে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ইসকন-এর পুণ্ডরীক ধামের এই ধর্মগুরুর জামিনের আর্জি নাকচ করে তাঁকে জেল হাজতে পাঠালে আদালতে উপস্থিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠি চালিয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে। অন্তত ৫০ জন তাতে আহত হন। এই গন্ডগোলের মধ্যেই আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কয়েক জন দুষ্কৃতী টেনে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। সহকর্মীর হত্যাকাণ্ডে এ দিন আইনজীবীরা এজলাস বয়কট করায় চট্টগ্রাম আদালতে কাজ হয়নি। চিন্ময়কৃষ্ণের জামিনের জন্য দায়রা আদালতে আবেদন জানানো হলেও কোর্ট না বসায় শুনানি হয়নি। কালও কর্মবিরতির ঘোষণা করেছেন আইনজীবীরা। তার পরে দু’দিন ছুটি। রবিবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। তাই জামিনের শুনানির সুযোগ না থাকায় চিন্ময়কৃষ্ণকে কয়েক দিন জেলেই থাকতে হচ্ছে।

Advertisement

তবে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডে ৬ আততায়ীকে চিহ্নিত করে ধরা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দফতর থেকে জানানো হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় পুলিশ প্রকাশ করেনি। আইনজীবী খুন ও মঙ্গলবারের গোলমালে পুলিশকে আক্রমণের বিভিন্ন মামলায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে এ দিন চট্টগ্রাম পুলিশ জানিয়েছে। এই সব মামলায় অন্তত ৫০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে যে ৫৩ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন, তাঁদের প্রায় সকলকে মামলাগুলিতে আসামি করা হয়েছে। ধরপাকড় থেকে বাঁচতে এঁদের অধিকাংশই আত্মগোপন করেছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু বিশিষ্ট জনকেও এই সব মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। তাঁদের মতে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকারের লিখিত অনুমোদন ছাড়া কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা যায় না। সে হিসেবে জনৈক বিএনপি নেতা (পরে বহিষ্কৃত)-র আবেদনে চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে পুলিশের করা এই মামলাটিই অবৈধ। এক জন শ্রদ্ধেয় ধর্মগুরুকে অবৈধ মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে খাটতে বাধ্য করা হচ্ছে।

ইসকন-এর বাংলাদেশ শাখার পক্ষে এ দিন বিবৃতি দিয়ে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে, বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের সঙ্গে তাদের কোনও সংস্রব নেই। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসকন অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। ধর্ম-জাতির ভেদাভেদ না করে জনকল্যাণ মূলক অজস্র কাজ করেন সন্ন্যাসীরা। চিন্ময়কৃষ্ণকে গ্রেফতারের পরে মঙ্গলবার ইসকন বিবৃতি দিয়ে তাঁর মানবাধিকার ও মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার আর্জি জানালেও তাঁকে তাদের সন্ন্যাসী বলেনি। বিভিন্ন বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে ইসকন আগেই এই সাধুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে এই ধর্মীয় সংগঠন সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন
Advertisement