গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত পরিণত হল রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক পালবদলে। যার পরিণামে সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সেনার ঘেরাটোপে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুরে বোন রেহানাকে নিয়ে ঢাকার সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’ ছাড়েন তিনি। তাঁকে নিয়ে কপ্টার রওনা হয় ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’র উদ্দেশে। বাংলাদেশ বায়ুসেনার কপ্টারটি উড়িয়ে নিয়ে যান বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এয়ার কমান্ডার আব্বাস।
এর পরে জানা যায়, ভারতের আকাশসীমায় দেখা গিয়েছে হাসিনার বিমান। জল্পনা ছিল যে, দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করবে হাসিনার বিমান। কিন্তু পরে জানা যায়, দিল্লি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করে রাজধানী লাগোয়া গাজ়িয়াবাদের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণ করেছেন হাসিনা। অশান্তির মধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার ইস্তফার খবর ঘোষণা করে জানান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর ইস্তফা এবং দেশত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গণভবনে চড়াও হন কয়েক হাজার মানুষ। চলতে থাকে যথেচ্ছ লুটপাট। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ‘প্রথম আলো’ লিখেছে বহু সাধারণ মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েন। তাঁদের হাতে গণভবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্রও দেখা যায়। গণভবনের ভিতর থেকে ঘাড়ে, কাঁধে, পিঠে নানা আসবাব সামগ্রী, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম এমনকি গণভবনের পোষ্য ছাগল, খরগোশ, হাঁস নিয়ে বেরিয়ে আসার ছবি, ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে। সেই রকমই একটি ভিডিয়ো ফেসবুকে প্রকাশ করেন বাংলাদেশের এক ছাত্র আন্দোলনকারী। ভিডিয়োর বিবরণে লেখা ‘হাসিনার রুমে’। তাতে দেখা যাচ্ছে মাথায় বাংলাদেশের পতাকার ফেট্টি বাঁধা এক তরুণ পায়ে জুতো পরে উঠে পড়েছেন একটি পরিপাটি নীল চাদরে মোড়া বিছানায়। পায়ের উপর পা তুলে বিছানায় শুয়ে তিনি চিৎকার করে জানাচ্ছেন, তাঁরা গণভবনের দখল নিয়েছেন।
আরও একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে গণভবনের পাকশালে রান্না করা খাবারে দেদার ভোজ সারছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ (সেই ভিডিয়োরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। তবে সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশের অনেকেই ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন, আন্দোলনকারীরা গণভবনের রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছেন। শুধু হাসিনার সরকারি বাসভবন নয়, তাঁর একাধিক মন্ত্রীর বাড়ি এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দফতরও জনতার রোষের শিকার হয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ৩২ ধানমন্ডি ভবনে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট ওই ভবনেই অভ্যুত্থানকারী সেনা অফিসারদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান মুজিব। তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালও নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে। বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিবের দুই কন্যা, হাসিনা এবং রেহানা। ঘটনাচক্রে, সোমবার তাঁরা দু’জন সেনার কপ্টারে ঢাকা ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আগুন ছাই হয়ে যায় মুজিবের স্মৃতি বিড়জিত ৩২ নম্বর ধানমন্ডি রোডের সেই সংগ্রহশালা।
১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনটি বড় মাপের সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে ভারতের পূর্ব প্রান্তের প্রতিবেশী দেশ। সেনার হাতে নিহত হতে দেখেছে দুই প্রেসিডেন্ট— শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানকে। এ ছাড়া, গত সাড়ে পাঁচ দশকে একাধিক ছোট-বড় ব্যর্থ অভ্যুত্থানও হয়েছে সে দেশে। শেষ বার ২০০৭ সালে সরকার গঠনে হস্তক্ষেপ করেছিল বাংলাদেশ সেনা। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের বিধি-নিষেধের কারণে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন সরাসরি ক্ষমতার চাবিকাঠি হাতে নেননি। এই পরিস্থিতিতে জামান কী করবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মধ্যে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা সেনাপ্রধানের
হাসিনার দেশত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সংবাদ মাধ্যমের সামনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে হাসিনার ইস্তফার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করব।’’ জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগে তিনি তিন দলের (বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জানিয়ে জেনারেল জামানের দাবি, ‘‘সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে।’’ দুর্নীতির মামলার সাজাপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে তার সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশে আন্দোলনকারী পড়ুয়া এবং রাজনৈতিক কর্মীদের বিরত থাকার আবেদন জানিয়ে সেনাপ্রধানের আশ্বাস, ‘‘আমি কথা দিচ্ছি, প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের জনতার উদ্দেশে জেনারেল জামান বলেন, ‘‘আপনারা শান্তি বজায় রাখুন। ভাঙচুর করবেন না। আমি নির্দেশ দিয়েছি পুলিশ বা সেনাবাহিনী গুলি চালাবে না। আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি। আপনারা এখনই আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে, তা আমরা পূরণ করব এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব।’’
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনপর্বে কয়েকশো মৃত্যু এবং সম্পত্তি ধ্বংসের ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও দাবি করেন জেনারেল জামান। সূত্রের খবর, হাসিনা ইস্তফা দিয়ে তদারকি সরকারের ভার দিয়েছেন জাতীয় সংসদের (পার্লামেন্ট) স্পিকার শিরিন সারমিন চৌধুরির হাতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেত্রী শিরিনকে সেনা মানবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঘটনাচক্রে, রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহাবুদ্দিনও আওয়ামী লীগের প্রাক্তন নেতা এবং ‘হাসিনা ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার বদল
গত ১ জুলাই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পর তা চট্টগ্রাম, রংপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী-সহ বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক ভাবে হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে চিহ্নিত করছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁর দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগ ঢাকা-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। অন্দোলনকারীদের যৌথমঞ্চ, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর বহু নেতা-কর্মীকেও গ্রেফতার করা হয়।
প্রায় দু’শো জনের প্রাণহানির পরে ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনকারীদের দাবি অনুকূলে রায় দেওয়ার পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল। যদিও ছাত্রহত্যায় জড়িত পুলিশকর্মী এবং ছাত্রলীগ কর্মীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এই পরিস্থিতিতে গত ৩১ জুলাই হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশের কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামি এবং তাদের জঙ্গি মনোভাবাপন্ন শাখা সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা করার পরে নতুন করে দানা বাঁধে বিক্ষোভ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং জামাতের নেতৃত্বে গ্রামেগঞ্জেও শুরু হয় পুলিশ এবং আওয়ামী নেতা-কর্মীদের উপর হামলা। গত শনিবার পড়ুয়াদের মিছিলে গুলির পরেই কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি।
ভারতে হাসিনা
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে নামে হাসিনার বিমান। এই এয়ারবেসটি এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম। বায়ুসেনার ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ড এয়ারবেসটির দেখভাল করে থাকে। একটি সূত্রের দাবি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সি-১৩০জে হারকিউলিস পরিবহণ বিমানে হাসিনা গাজিয়াবাদে নামেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং কয়েক জন অফিসার। গাজ়িয়াবাদের হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে অবতরণের পর সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের মুখ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন শেখ হাসিনা। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদসংস্থা এএনআই। পরিস্থিতি বুঝে ডোভাল রিপোর্ট দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে।
কেন কোটা সংস্কার আন্দোলন?
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে যে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু ছিল, তাতে মেধার প্রতি অবিচারের সূচনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন অনগ্রসর জেলাগুলির বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল।
২০১৮-য় কোটা-বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। তখনকার মতো আন্দোলনে ইতি টানেন ছাত্ররা। কিন্তু সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তাঁরা দাবি করেন, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে কোটা সংস্কার করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা
ঢাকা হাই কোর্টের ৫ জুনের রায়ের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গত ১০ জুলাই গোটা বিষয়টির উপরে এক মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছিল, হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পরে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে শীর্ষ আদালত। পরবর্তী শুনানি হবে ৭ অগস্ট।
হাই কোর্টের রায়-সহ গোটা বিষয়টিতে শীর্ষ আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ায় অর্থ ছিল, ২০১৮-এ সরকারের নির্দেশ বহাল রইল। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন-সহ তিন ধরনের সংরক্ষণ সরকারি চাকরিতে রইল না। কিন্তু সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এখন কোটা সংস্কারের দাবি তুলে নতুন উদ্যমে আন্দোলন শুরু করে।
এর পরে প্রবল অশান্তির আবহে শুনানির দিন এগিয়ে এনেছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত ২১ জুলাই ঢাকা হাই কোর্টের রায় সংশোধন করে দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট সাত শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশের শীর্ষ আদালত। তার মধ্যে পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। বাকি দু’শতাংশ থাকবে অন্য শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরতেও বলেছে আদালত। কিন্তু এর পরে কোটা সংস্কার আন্দোলন মোড় নেয় ‘হাসিনা হটাও’ অভিযানে। ৩৬ দিন পরে ছাত্র আন্দোলনের সেই অভিঘাতই পতন ঘটালো হাসিনা সরকারের।
ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
বাংলাদেশ এবং ভারতের মাঝে রয়েছে ৪,০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত। সোমবার সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঢাকাগামী বিমান বাতিল করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ এবং ভারতের মাঝে ট্রেন চলাচল আগেই বন্ধ করা হয়েছে। ৩০ ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশগামী বিমান বাতিল করেছে বিমান সংস্থা ইন্ডিগো। বিমান সংস্থা ভিস্তারা জানিয়েছে, পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে তারা। তবে এখনই বিমান বাতিলের কথা ঘোষণা করেনি এই সংস্থা। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ছ’ঘণ্টার জন্য উড়ান বন্ধ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্য। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত ২২১৭ কিলোমিটারের। ত্রিপুরার সঙ্গে ৮৫৬ কিলোমিটার, অসমের ২৬২ কিলোমিটার এবং মিজোরামের ৩১৮ কিলোমিটার। এই সীমান্ত জুড়ে বিএসএফ ৮৭ ব্যাটেলিয়ন বাহিনী অর্থাৎ প্রায় ৯০ হাজার জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে, ওই সমস্ত সীমান্ত এলাকার সেনাকর্মীদের ছুটি।
ভারত থেকে বাংলাদেশে রেল পথে অনেকগুলি ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস। এই ট্রেন পরিষেবা বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য আগেই বন্ধ করা হয়েছিল। এ ছাড়া শিলিগুড়ি, কলকাতা, দুর্গাপুর, আগরতলা-সহ বিভিন্ন শহর থেকে বাংলাদেশে যে বাস পরিষেবা চালু ছিল তা-ও বন্ধ রয়েছে ক’দিন ধরেই। আপাতত সেই সব পরিষেবাও চালু হওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চিত কাঁটাতারের দু’তরফের মানুষ।
কী বললেন হাসিনা-পুত্র?
আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এই পরিস্থিতিতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানাবিধ জল্পনার মাঝে পুত্র সাজিব ওয়াজিদ জয় একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, তাঁর মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। এত পরিশ্রম করার পরেও যে ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন হল, তাতে তিনি (হাসিনা) অত্যন্ত হতাশ এবং বীতশ্রদ্ধ।
হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালীন তাঁর উপদেষ্টা ছিলেন পুত্র জয়। সোমবার হাসিনার পদত্যাগের পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, রবিবার থেকেই পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন তাঁর মা। শেষমেশ পরিবারের চাপে নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে দেশে ছেড়েছেন তিনি। জয় বলেন, ‘‘উনি (হাসিনা) বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। উনি যে সময়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন করুণ অবস্থা ছিল দেশের। বাংলাদেশ গরিব দেশ ছিল। কিন্তু আজ বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম শক্তি। উনি খুবই হতাশ।’’ কড়া হাতে আন্দোলন দমনের যে অভিযোগ উঠেছিল সরকারের বিরুদ্ধে, তা-ও অস্বীকার করেছেন জয়। তিনি বলেন, ‘‘এখানে পুলিশকে পিটিয়ে মারা হচ্ছিল। রবিবার পর্যন্ত ১৩ জন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। জনতা যদি পুলিশকে এ ভাবে পিটিয়ে মারে তো পুলিশ কী করবে?’’