তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে রাজ্য জুড়ে বিরোধীরা যখন শোরগোল তুলেছে, সেই সময়েই দুর্নীতির প্রশ্নে ‘জ়িরো টলারেন্স’-এর বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ঘোষণা, তৃণমূলে কেউ দুর্নীতি করেছেন বলে প্রমাণিত হলে ‘ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেব’! তাঁর মতে, নতুন তৃণমূল বলতে এই দুর্নীতিমুক্ত তৃণমূলকেই তিনি বোঝাচ্ছেন। আবাস যোজনার উদাহরণ দিয়েই তাঁর এই মন্তব্যকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে রবিবার ই এম বাইপাসের ধারে পুরনো জমিতে নতুন তৃণমূল ভবনের ভিতপুজো অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন অভিষেক। নতুন তৃণমূল প্রসঙ্গে সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘আমি গত জুন মাসে জলপাইগুড়ির একটি সভায় বলেছিলাম নতুন তৃণমূল। সেই নতুন তৃণমূল কী, সবাই জানতে চেয়েছিল। দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তৃণমূল বরদাস্ত করবে না। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দল থেকে বার করে দেব! এটাই নতুন তৃণমূল।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কেউ যদি ভেবে থাকে তৃণমূল করে দলকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি করে প্রশ্রয় পাওয়া যাবে, তা হলে ভুল হচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, দুর্নীতি করে কেউ দলে থাকতে পারবেন না!’’ কয়েকটি জেলায় সাম্প্রতিক কালে তৃণমূলের কয়েক জন পঞ্চায়েত প্রধানকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও অভিষেক উল্লেখ করেছেন। ওই সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রধানদের ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিষেকই।
নজরুল মঞ্চে আজ, সোমবার দলের কর্মী সম্মেলন ডেকেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সাংসদ, বিধায়ক, বাছাই করা কিছু জেলা নেতৃত্ব ও পঞ্চায়েতের পদাধিকারীরা ওই বৈঠকে ডাক পেয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের করণীয় এবং নতুন কর্মসূচির দিক্-নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি বরদাস্ত না করার বার্তাও সেখানে মমতা দেবেন বলে তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিত। তার আগের দিনই দলের দুর্নীতি-বিরোধী অবস্থানের সুর স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। আর তৃণমূল নেত্রীর সম্মেলন প্রসঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে তিনি বলেছেন, ‘‘কালকের দিনটা ( সোমবার) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা নজর রাখুন!’’
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের ব্যাখ্যা, ‘‘বৈঠকে দলের বিধায়ক-সাংসদ থেকে শুরু করে সর্ব স্তরের নেতৃত্ববৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিক্-নির্দেশকা দেবেন। আগামী দিনে আমরা সেই নির্দেশ মেনেই কাজ করব এবং সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’ অভিষেক আগে বলেছিলেন, তাঁরা দরজা খুলে দিলে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে! এ বার আজকের বৈঠক থেকে কি তৃণমূলে কেউ যোগ দেবেন? অভিষেক বলেন, ‘‘আপনারা কি অপেক্ষা করে আছেন দরজা কবে ফাঁক হবে? রাজনীতিতে ‘টাইমিং’ গুরুত্বপূর্ণ, তাই ঠিক সময়ে, দরজা ফাঁক শুধু নয়, পুরো খোলাই হবে!’’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিষেকের বার্তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘মাঝে মাঝে উনি এমন ভাব করেন, যেন বাংলার মানুষ কেউ কিছু জানে না! গোটা তৃণমূল দলটা দুর্নীতিগ্রস্ত। ঠগ বাছতে গঁ উজাড় হবে! কত জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন? এক আবাস যোজনা নিয়েই গোটা বাংলায় কী হচ্ছে, সবাই দেখতে পাচ্ছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘অভিষেক ‘টলারেন্স’ কথাটা একটু বেশিই ব্যবহার করেন। দুর্নীতি আর তৃণমূল কি আলাদা? দলের পদ বা টিকিট দেওয়া হয়েছে টাকার বিনিময়ে। তৃণমূলের লোকজনই অভিযোগ করেছেন। ছাদ ফুটো, আবাস যোজনায় ঘর না পাওয়া যে মহিলা নন্দকুমারে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন, পুলিশ তাকে মারতে মারতে বিবস্ত্র করে থানায় নিয়ে গিয়েছে। দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে এই হাল! আর জলপাইগুড়ির যে নেত্রী বলেছেন তৃণমূল না করলে সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে না, তিনি দিব্যি আছেন। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’’
আবাস যোজনায় দুর্নীতির প্রশ্নে অভিষেক অবশ্য এ দিন নাম না করে নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টাকা আটকে রাখার অভিযোগের পাশাপাশিই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই তালিকা পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, এটা হয়েছিল ২০১৮ সালে। সব থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে। দায়িত্বে কে ছিল, কোন পরিবার ছিল, প্রধান কারা নির্বাচিত করেছিল, তাঁর নাম আমি বললাম না!’’ অভিষেকের সংযোজন, ‘‘নিশ্চিত ভাবে দলের তরফে আমাদের ভুল হয়েছিল। কারণ, আমরা এক জনকে বিস্তার করেছিলাম। সেই কারণে আমি কাঁথির সভায় দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়েছিলাম।’’ এখন রাজ্য সরকার ‘সর্বশক্তি দিয়ে’ তালিকা সংশোধনের চেষ্টা করছে বলেও জানিয়েছেন অভিষেক। আর বিজেপিকে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘যাদের ক্যামেরার সামনে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা যায়, তাদের বড় পদ দেয়! সারদায় যার নাম জড়িয়েছে, তাকে এরা মুখ্যমন্ত্রী করে!’’
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্রল শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘এই তৃণমূলের একটা কথাও বিশ্বাস করে না কেউ! ওঁরা ‘শুভেন্দু অধিকারী সিনড্রোম’ নামক রোগে ভুগছেন! রাজ্যে তৃণমূল পরিচালিত একটা পঞ্চায়েতও আছে, যেখানে আবাস যোজনা বা সরকারি প্রকল্পের নামে দুর্নীতি, বেনিয়ম হয়নি?’’