সংখ্যালঘু ভোটের সরণ নিয়ে আলোচনা চলছে তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সদ্য ফুরফুরা শরিফের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের তপন দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘সংখ্যালঘুরা যেমন আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তেমনই রয়েছেন। কোনও বদল আসেনি। সাগরদিঘিতে অনৈতিক জোট হারিয়ে দিয়েছে আমাদের। সব জায়গায় সেটা হবে না।’’
কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের দাবি, ‘‘আমি যখন বাম এবং আইএসএফ-এর সঙ্গে জোটের কথা বলেছিলাম, তখন অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এখন সেটাই সত্যি। বাম আমলেও মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং তৎকালীন পশ্চিম দিনাজপুরে সংখ্যালঘু ভোট আমাদের সঙ্গে ছিল। সেটা আবার ফিরবে। মাঝে চলে যাওয়ার কারণ, আমরা সে ভাবে সংখ্যালঘুদের দলীয় দায়িত্বে গুরুত্ব দিতে পারিনি। সেটা আমি সনিয়া গান্ধীকেও জানিয়েছিলাম।’’
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মনে করছেন, বামেদের জন্য ‘বসন্ত এসে গেছে’। সেলিমের কথায়, ‘‘তৃণমূল তো বটেই, এর ফলে বিজেপিরও সর্বনাশ। অন্য রাজ্যে বিজেপি যা যা করছে, তাতে মানুষ বুঝে গিয়েছেন, ওদের সঙ্গে তৃণমূলের ফারাক নেই। বরং আমাদের জন্যই বসন্ত। ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’’
আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘সাগরদিঘি দিয়ে সবটা বিচার করা ঠিক হবে না। ভাগাভাগি নয়, সংখ্যালঘু ভোটও আমাদের পক্ষেই আসবে। আমাদের অস্ত্র কেন্দ্রের ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ স্লোগান। তার জন্য নাগাল্যান্ডেও সংখ্যালঘুরা বিজেপিকেই সমর্থন জানিয়েছে।’’
সাগরদিঘির ফলাফলের পর সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে তৃণমূল কি উদ্বিগ্ন? উত্তর— হ্যাঁ। সেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ভয়’ নয় কিন্তু চিন্তা যে বাড়ছে, তা স্পষ্ট। সাগরদিঘিতে পড়া ঢিল আলোড়ন ফেলে দিয়েছে শাসক শিবিরে। ফল প্রকাশের দিন মমতা বলেছিলেন বটে, ‘‘সাগরদিঘি উপনির্বাচনে আমরা হেরেছি। কাউকে দোষ দেব না। গণতন্ত্রে হার-জিত লেগেই থাকে।’’ কিন্তু পাশাপাশিই মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তার পর রাজ্যের সংখ্যালঘু মন্ত্রী-নেতাদের ডেকে ঘরোয়া বৈঠক করেছিলেন। সংখ্যালঘুরা সরে যাচ্ছেন কি না, এই মর্মে খোঁজ নিয়ে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলেছেন তাঁকে। প্রাথমিক ভাবে সেই কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসে ২৫টি কারণ চিহ্নিত করেছে। আগামী সপ্তাহেই মমতার কাছে রিপোর্ট দেবে কমিটি। ইতিমধ্যে উঠে এসেছে ‘অন্তর্ঘাত’-এর তত্ত্ব। যদিও তৃণমূলের একটা অংশ মনে করছেন, সেটা ‘অতি সরলীকরণ’ হয়ে যাচ্ছে।
তবে তৃণমূলের চিন্তার কারণ রয়েছে। সাগরদিঘিতে ৬৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটারের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট। তবে একইসঙ্গে এ কথাও ঠিক যে, রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে একটি আসন কোনও ‘নমুনা’ই নয়! কিন্তু বিরোধী শিবির উৎসাহ পেয়েছে সাগরদিঘির ফলাফলে।
সাগরদিঘিতে তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হার ৫০.৯৫ থেকে ৩৪.৯৩ শতাংশে নেমে আসাকে যে তিনি সহজ চোখে দেখছেন না, সেটা বুঝিয়েই বাংলার সংখ্যালঘুর মনের খোঁজে সংখ্যালঘু নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেছেন মমতা। অনেকে বলছেন, ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে টানা জেলবন্দি করে রাখার ‘প্রভাব’ পড়েছে সাগরদিঘির ভোটে। প্রসঙ্গত, নওশাদ ভাঙড়ের বিধায়ক হলেও ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা পরিবারের সদস্য। বাংলার মুসলিমরা এমনও মনে করেন যে, আজমীর শরিফের পরেই ফুরফুরার গুরুত্ব। নওশাদকে জেলে রাখার বিষয়টিকে যে তৃণমূল সংখ্যালঘু ভোট হারানোর কারণ হিসাবে একেবারে ফেলে দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট হয়েছে ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সরিয়ে সেই পদে হুগলি জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক তপনকে বসানোয়। তপন ইতিমধ্যে ফুরফুরায় ঘুরেও এসেছেন। ঘটনাচক্রে, সেই সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন ফিরহাদও।
পাশাপাশিই অনেকে মনে করছেন, শিক্ষক নিয়োগ থেকে আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির যে বিষয়গুলি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে মুসলিম সমাজেও শাসকের ‘অসন্তোষ’ তৈরি হয়ে থাকতে পারে।
পরিসংখ্যান বলছে, সংখ্যালঘু ভোট সরে গেলে তৃণমূলকে চিন্তায় প়ড়তে হবে রাজ্যের বহু বিধানসভা আসনে। ৫০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার রয়েছেন, রাজ্যে এমন আসনের সংখ্যা ৪৯। ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ মুসলিম ভোটার রয়েছেন, এমন আসন ৭৭টি। ১১৫টি আসনে মুসলিম ভোটার ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় কারা ক্ষমতাসীন হবে, তা অনেকাংশেই মুসলিম ভোটের উপরে নির্ভরশীল। সেই ভোটের অধিকাংশই যে তৃণমূলের ঝুলিতে, তার নমুনা হতে পারে মালদহের সুজাপুর। গোটা রাজ্যের মধ্যে এই আসনটিতে সর্বাধিক মুসলিম ভোট— প্রায় ৯১ শতাংশ। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই আসন থেকে বিধায়ক হয়েছেন তৃণমূলের আব্দুল গনি। তিনি জয়ী হন ১,৩০,১৬৩ ভোটে। তৃণমূল পায় ৭৩.৪৪ শতাংশ ভোট।
মুসলিম ভোটের উপরে তৃণমূলের ‘নির্ভরতা’র কথা আগেও বলেছেন মমতা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮ আসনে জয় পেয়ে আচমকা উত্থান হয়েছিল বিজেপির। তৃণমূল ৩৪ থেকে ২২ আসনে নেমে এসেছিল। সে বারের ভোটে বিজেপির প্রচারে মমতা ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণ’-এর অভিযোগ তোলা হয়েছিল। ফলপ্রকাশের পরে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি তোষণ করি! হাজার বার করব! যে গরু দুধ দেয়, তার লাথিও ভাল!’’
তৃণমূলের হিসাবমতো রাজ্যে ৬৩টি ‘মুসলিমপ্রধান’ আসন রয়েছে। তার মধ্যে গত বিধানসভা ভোটে তারা পেয়েছিল ৬০টি। দু’টি বিজেপি এবং একটি আইএসএফ। পাশাপাশিই, গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল বলছে, রাজ্যে ৩৬টি আসনে পাঁচ হাজারের কম ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছিল। এমন ২২টি আসনে বিজেপি, ১৩টিতে তৃণমূল এবং একটিতে বিনয় তামাংয়ের জিজেএম জয়ী হয়। কম ব্যবধানের ৩৬টির মধ্যে আবার ৭টি আসনে জয়ীরা ১ হাজারেরও কম ভোটে এগিয়েছিলেন। পৌনে দু’বছর আগে ৫০,২০৬ ভোটে তৃণমূল জিতেছিল সাগরদিঘিতে। সেখানে তারা এ বার হেরেছে ২২ হাজারের বেশি ভোটে। এই ধারা শুরু হলে কম ব্যবধানের আসনগুলি আরও ‘দুর্বল’ হয়ে পড়তে পারে। মনে করা হচ্ছে সংখ্যালঘু ভোট একটু এ দিক-ও দিক হয়ে গেলে রাজ্যে শতাধিক আসন তৃণমূলের পক্ষে ‘চিন্তার’ হয়ে উঠবে। আবার সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেস জোটের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলে তার সুবিধা পেয়ে যেতে পারে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এক মুসলিম তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ আসনে মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় বিজেপি জিতে গিয়েছিল। সেটা গত বিধানসভা নির্বাচনেও কয়েকটি আসনে হয়েছে। সেটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে আগামী দিনেও আরও সমস্যা হতে পারে। তাই দল সময় থাকতেই কারণ খোঁজার পথে হাঁটছে।’’
তৃণমূলের ভোট ভাগ হলে কার কেন সুবিধা তা নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের দাবিও আলাদা আলাদা। বিজেপি বলছে, প্রধান বিরোধী দল হিসাবে মানুষ তৃণমূলের বদলে তাদেরই বেছে নেবেন। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘সাগরদিঘি দিয়ে সবটা বিচার করা ঠিক হবে না। ভাগাভাগি নয়, সংখ্যালঘু ভোটও আমাদের পক্ষেই আসবে।’’ যে দাবি উড়িয়ে দিয়ে সেলিম বলছেন, ‘‘এর ফলে তৃণমূল তো বটেই বিজেপিরও সর্বনাশ। আমাদের জন্যই বসন্ত।’’ কংগ্রেস নেতা মান্নান বলছেন, ‘‘আমরা গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু তৃণমূল প্রতারণা করেছে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে। সবাই এখন সেটা বুঝতে পারছে।’’
সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে তৃণমূলের চিন্তা রয়েছে আগামী বছরে লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতেও। সাগরদিঘি বিধানসভা জঙ্গিপুর লোকসভার অন্তর্গত। ২০১৯ সালে প্রথম জঙ্গিপুর দখল করেছিল তৃণমূল। ২,৪৫,৭৮২ ভোটে জেতেন খলিলুর রহমান। সাতটি বিধানসভা এলাকাতেই তৃণমূল ভাল ব্যবধানে জিতেছিল। সাগরদিঘিতেই ব্যবধান ছিল ৩৩,৪০৭ ভোট। পরে বিধানসভা নির্বাচনে অধুনাপ্রয়াত সুব্রত সাহা জেতেন ৫০,২০৬ ভোটে। দুই ভোটেই দ্বিতীয় হয়েছিল বিজেপি। তৃতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। এ বার সেই কংগ্রেস জিতেছে ২২,৯৮০ ভোটে। ফলে ক্ষরণ অনেকটাই। বিজেপির ভোট যেখানে কমেছে ১৯,১৯০টি, সেখানে তৃণমূলের ভোট কমেছে ৩০,৫৫৮।
সংখ্যালঘু ভোটের সরণ নিয়ে আলোচনা চলছে তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন? সাধারণ সংখ্যালঘু মুসলিমরা? হুগলির চণ্ডীপুরের বাসিন্দা শিক্ষক মহম্মদ হানিফের কথায়, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্থান সংখ্যালঘু ভোটকে অনেক বেশি করে একত্রিত করেছিল। সেই সঙ্গে ছিল এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে ভয়।’’ আবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মনিরুল ইসলামের বক্তব্য, ‘‘আসলে ভোট এলেই মুসলমানের ‘ভাল করার’ তোড়জোড় শুরু হয়। বহু দিন ধরেই রাজ্য-রাজনীতিতে এই রেওয়াজ। কিন্তু আখেরে কিছু হয় কি? এই রাজ্যে দিনের পর দিন বিধানসভায় মুসলমান প্রতিনিধিত্ব কমছে!’’
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে তৃণমূলের মুসলিম বিধায়ক ছিলেন ৫৯ জন। ২০১৬ এবং ২০২১ সালে যথাক্রমে ৫৬ এবং ৩৪ জন। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল টিকিট দিয়েছিল ৪২ জন মুসলিম প্রার্থীকে। এখন অবশ্য বিধানসভায় তৃণমূলের ৩৪ এবং আইএসএফ-এর ১ (নওশাদ সিদ্দিকি) এবং কংগ্রেসের ১ (বাইরন বিশ্বাস) মিলিয়ে মোট মুসলমান বিধায়ক ৩৬ জন। বাম আমলেও সেই সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। ২০০৬ সালে রাজ্য বিধানসভায় মুসলিম বিধায়ক ছিলেন ৪৬ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মনিরুলের দাবি, ‘‘বাংলার মুসলিমরা কখনও ধর্মভিত্তিক দলকে চাননি। মুসলিম লিগের আর অস্তিত্বই নেই। বরং মুসলিম ভোটাররা ধর্মনিরপেক্ষ দল খুঁজেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ভোটাররা নির্বাচনে মুসলিম পরিচিতির বদলে রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেন।’’ মনিরুলের দাবি যে একেবারে ‘অমূলক’ নয়, তার উদাহরণ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। ‘পিপল্স ডেমোক্র্যাটিক কনফারেন্স অফ ইন্ডিয়া’ নামে দল তৈরি করে ভোটে লড়েছিলেন। কিছু করে উঠতে না পেরে বিধায়ক হতে তৃণমূলে চলে যান। ‘ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া’ নামে আরও দু’টি দল রাজ্যে থাকলেও তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে মুসলিমরাও সম্ভবত অবগত নন। বছর খানেক ধরে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির অন্ধ্রপ্রদেশ ভিত্তিক পার্টি ‘মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারেনি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক মুসলিম বিধায়ক বলছেন, ‘‘আমাদের সরকার সকলের জন্য অনেক কল্যাণমুখী প্রকল্প বানিয়েছে। তার সুবিধা সবাই পায়। কিন্তু মুসলিমদের জন্য ইমাম, মোয়াজ্জিমদের ভাতা দেওয়া ছাড়া কিছুই হয়নি। যাঁরা দু’হাত ভরে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা কী পেয়েছেন? খারিজি মাদ্রাসাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিক্ষকরা বেতন পান না অনেক জায়গায়। রাজ্যের গ্রাম এলাকার ৮০ শতাংশ মুসলিম পরিবারের মাসিক আয় পাঁচ হাজার টাকার কম। ক্ষোভ কিন্তু অনেক দিন ধরেই বাড়ছিল।’’
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক পড়ুয়া রেজানা খাতুনের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির এমন একটা ধারণা আছে যে, মুসলিমরা মসজিদের ইমামের কথায় চলে, ভোট দেয়। তাই ইমামদের মাসোহারার ব্যবস্থা। কিন্তু মুসলিম সমাজ এখন বদলে গিয়েছে। মসজিদের বাইরে ইমামদের তেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই। মৌলানাদের গুরুত্ব দেওয়া হলেও উচ্চশিক্ষিত উদার মুসলিমদের কোনও ঠাঁই হয় না সরকারি দরবারে। বাম থেকে তৃণমূল— কোনও আমলেই এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।’’
অসম থেকে উত্তরপ্রদেশ— মুসলিম ভোটের একটা অংশ বিজেপির ঝুলিতেও গিয়েছে। সেটা কি এ রাজ্যেও সম্ভব? মনিরুল বলেন, ‘‘সেটা এখনই বলা যাবে না। কারণ, নরেন্দ্র মোদী ইদানীং মুসলিমদের প্রতি তাঁর মনোভাব বদলের পরিচয় দিচ্ছেন। এ রাজ্যেও বিজেপি নেতারা নওশাদকে সমর্থন করেছেন, বগটুই নিয়ে সরব হয়েছেন। আবার শুভেন্দু অধিকারী সব বক্তৃতাতেই ‘সনাতনী ভোটার’ বলে আলাদা করেন। সাগরদিঘিতে তিনি সংখ্যালঘু ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছেন বলে দাবি করেন। আসলে বাংলায় কোনটা বিজেপির মুখ আর কোনটা মুখোশ তা এখনও পর্যন্ত বোঝা দায়। আগামীতে কী হবে বোঝা যাচ্ছে না।’’